সংসদে প্রশ্নোত্তরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

তথ্যভান্ডার সংরক্ষণ করা হচ্ছে মানব পাচারকারীদের

প্রকাশ : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

ক্রাইম ডাটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (সিডিএমএস) সফটওয়্যারের মাধ্যমে মানব পাচারকারীদের তথ্যভান্ডার সংরক্ষণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি জানান, মানব পাচারের মতো গুরুতর ও সংঘবদ্ধ অপরাধ প্রতিরোধ ও দমনে বর্তমান সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। দেশের অভ্যন্তরে ও দেশের বাহিরে মানব পাচার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অপরাধ কার্যকরভাবে প্রতিরোধের জন্য দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়ে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

গতকাল রোববার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে লিখিত প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি এ তথ্য জানান। সরকারি দলের সংসদ সদস্য এম. আব্দুল লতিফের প্রশ্নোর জবাবে তিনি আরো জানান, মানব পাচার সংশ্লিষ্ট অপরাধ বিশেষত নারী ও শিশুদের প্রত্যাবাসন ও পুনর্বাসন সংক্রান্ত বিষয়ে পারস্পরিক সহযোগিতার জন্য প্রতিবেশী দেশ ভারতের সাথে বাংলাদেশর একটি সমঝোতা স্মারক রয়েছে। মানব পাচারকারীদের বিরুদ্ধে মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন, ২০১২’ এ কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ, সীমান্ত এলাকায় ও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোতে কঠোর নজরদারি, ভিকটিমদের দ্রুত উদ্ধার, সুরক্ষা ও পুনর্বাসন সহায়তা প্রদানসহ বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করার ফলে দেশে বর্তমানে মানব পাচার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অপরাধ কার্যকরভাবে প্রতিরোধ করা সম্ভব হচ্ছে।

মাদকবিরোধী অভিযান : আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য এম. আব্দুল লতিফের প্রশ্নোর জবাবে মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান জানান, মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তার এ ঘোষণা বাস্তবায়নে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরসহ সব আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা নিরলসভাবে কাজ করছে। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো ২০২২ সালে সারাদেশে অভিযান চালিয়ে ১ লাখ ৯৩ হাজার ৩৩১ কেজি আইস ও ১৬৭টি এলএসডি জব্দ করেছে। এই সময়ে ১ লাখ ৩২১টি মামলা এবং ১ লাখ ২৪ হাজার ৭৭৫ জন অবৈধ মাদক কারবারিকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। এ সময়ে ৪ কোটি ৫৮ লাখ ৬৮ হাজার ৫৬৯ পিস ইয়াবা, ১ লাখ ১৫ হাজার ৩৬৮ কেজি গাঁজা, ৭ লাখ ৬ হাজার ৬১ বোতল ফেনসিডিল, ৩৩৮ কেজি হেরোইনসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য জব্দ করা হয়েছে।

একই প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারের নাফ নদী হয়ে দেশে এমফিটামিন (ইয়ারা) ও ক্রিস্টাল মেথ (আইস) অনুপ্রবেশ করে। ইয়াবা ও ক্রিস্টাল মে (আইস) প্রতিরোধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অধীন টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলার সমন্বয়ে ‘টেকনাফ বিশেষ জোন’ স্থাপন করা হয়েছে। সীমান্তে আইসসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্যের চোরাচালান প্রতিরোধে কঠোর নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এনফোর্সমেন্ট কমিটির সভা ও পরিবীক্ষণ সভাতেও এ সংক্রান্তে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। তিনি আরো জানান, ক্রিস্টাল মেথ (আইস) প্রতিরোধে বিজিবি ও কোস্ট গার্ড ও সব সংস্থার সমন্বয়ে যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৪০ ধারায় মাদকদ্রব্য অপরাধের নেপথ্যে জড়িত অর্থ জোগানদাতা, পৃষ্ঠপোষক, মদতদাতাদের বিরুদ্ধে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।

কারাগারগুলোয় ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণ বন্দি : সরকারি দলের সংসদ সদস্য এম. আব্দুল লতিফের প্রশ্নোর জবাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী জানান, দেশের কারাগারগুলোতে ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণ বেশি বন্দি রয়েছে। বর্তমানে কারাগারের ধারণক্ষমতা ৪২ হাজার ৮৬৬ জন হলেও বন্দির সংখ্যা ৭৭ হাগার ২০৩ জন। যশোর, সিলেট, দিনাজপুর, ফেনী, পিরোজপুর ও মাদারীপুর কারাগার ব্যতীত বর্তমানে দেশের সব কারাগারে ধারণক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত বন্দি আটক রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে সর্বোচ্চ ৯ হাজার ৭৬৫ জন বন্দি রয়েছে। এই কারাগারের ধারণ ক্ষমতা ৪ হাজার ৫৯০জন। ঝালকাঠি জেলা কারাগারে সর্বনিম্ন ১৮৯ জন বন্দি রয়েছে। তিনি আরো জানান, কারাগারের ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি একটি চলমান প্রক্রিয়া।

বর্তমানে ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, খুলনা নরসিংদী ও জামালপুর- এই পাঁচটি কারাগার নির্মাণ ও সম্প্রসারণের কাজ চলছে। কারাগারগুলোর নির্মাণকাজ সমাপ্ত হলে বন্দি ধারণক্ষমতা প্রায় ৫ হাজার জন বৃদ্ধি পাবে।

সব কারাগারে বঙ্গবন্ধু বুক কর্নার স্থাপন : দেশের সব কারাগারের লাইব্রেরিতে বঙ্গবন্ধু বুক কর্নার স্থাপন করা হয়েছে বলে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সরকারি দলের নিজাম উদ্দিন হাজারীর প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, কারাগারে আটক বন্দিদের মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত করতে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োজিত আছে। এছাড়া বন্দিদের বিভিন্ন ধরনের ইনডোর খেলাধুলা, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ, মেডিটেশন এবং বই ও পত্র-পত্রিকা পড়ার ব্যবস্থা রয়েছে। আর কারাভ্যন্তরে অপরাধের কুফল-সংক্রান্ত সচেতনামূলক ডকুমেন্টারি বা চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হয়। এছাড়া কারা কর্মকর্তা ও কারা পরিদর্শক কর্তৃক কারা অভ্যন্তরে পরিদর্শনকালে মানবিক মূল্যবোধ সম্পর্কিত বিষয়ে আলোকপাত করা হয়।

সীমান্ত হত্যা কমেছে : আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হাজী মো. সেলিমের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান জানান, বিজিবি ও বিএসএফ’র মধ্যে বিরাজমান সুসম্পর্ক ও পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির ফলে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশেষ করে গত এক বছরে সীমান্ত হত্যার ঘটনা অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। এরপরও সীমান্তে বাংলাদেশী নাগরিক নিহতের ঘটনা ঘটলে বিজিবি’র পক্ষ হতে বিএসএফ’র নিকট লিখিত প্রতিবাদলিপি পাঠানো ও পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে জোরাল প্রতিবাদ জানানো হয়। একই সঙ্গে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে।