প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠক

প্রবাসীদের ভুয়া সনদ প্রদানকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ

আনসারে বিদ্রোহে মৃত্যুদণ্ড

প্রকাশ : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

বিদেশে পেশাগত কাজ করার জন্য যারা ভুয়া সার্টিফিকেট নিয়েছে এবং এসব সার্টিফিকেট দেয়ার ক্ষেত্রে যারা জড়িত আছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকে এই নির্দেশ দেন তিনি। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে বিকালে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। এর আগে বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসী আইন (সংশোধন) ২০২৩-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা।

সচিব বলেন, আমাদের কাছে অভিযোগ আসছে যারা বিদেশে যাচ্ছেন অনেকেই ভুয়া সার্টিফিকেট নিয়ে যাচ্ছেন। অনেকেই ভুয়া চিকিৎসক ও ইঞ্জিনিয়ার- এ ধরনের সার্টিফিকেট নিয়ে যাচ্ছেন।

মাহবুব হোসেন বলেন, কীভাবে তারা এ ভুয়া সার্টিফিকেট নেয়। এ ভুয়া সার্টিফিকেটসহ তারা যান, তারা তাদের এ কাজে সহযোগিতা করেন। যারা এ কাজটা করেন, তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় তাদের সহযোগিতা করবে।

সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নশিপ : সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নশিপ (ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ) নীতিমালা, ২০২৩-এর খসড়ার অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এ ব্যাপারে সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, এই আইনের মাধ্যমে প্রত্যেক বছর ইন্টার্ন করার সুযোগ দেবে সরকারি-বেসরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। মেয়াদ হবে তিন থেকে ছয় মাস। এজন্য নির্দিষ্ট হারে দেয়া হবে ভাতা। এমন সুযোগ রেখেই ‘সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নশিপ (ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ) নীতিমালা, ২০২৩’-এর খসড়ায় অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, একেকটা প্রতিষ্ঠানের চাহিদা একেক রকম, সে অনুযায়ী যোগ্যতা নির্ধারণ করা হবে। কিন্তু সেটা প্রতিষ্ঠান ঠিক করবে যে তাদের কী ব্যাকগ্রাউন্ডের লোকজন দরকার। সেটি প্রতিষ্ঠান বলবে।

সচিব বলেন, তারা (ইন্টার্নরা) কী কাজ করবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এ ব্যাপার তাদের সঙ্গে বসবে। তিন থেকে ছয় মাস মেয়াদে তারা কাজ করবেন এবং এটি প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন। নীতিমালাটা শুধু সরকারি প্রতিষ্ঠান নয়, সব বেসরকারি ও শিল্প প্রতিষ্ঠানেও যেন এ সুযোগটা থাকে তার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। সে অনুযায়ী নীতিমালাটি পুনর্গঠন করা হবে। সে সুযোগটা এখানে রেখে অনুমোদন করা হয়েছে।

আনসারে বিদ্রোহে মৃত্যুদণ্ড : আনসার ব্যাটালিয়ন আইন-২০২৩ এর খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এই আইনে কোনো আনসার সদস্য বিদ্রোহ বা বিশৃঙ্খলা করলে মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবনসহ বিভিন্ন ধরনের শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। এছাড়া চাকরি থেকে বরখাস্ত করার বিধান রাখা হয়েছে।

সচিব বলেন, আনসার বিদ্রোহ করলে পুরনো আইনে মৃত্যুদণ্ডের বিধান ছিল না, নতুন আইনে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। পাশাপাশি আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর জন্য দুটি আদালত গঠন করা হবে। একটির প্রধান হবেন ডিজি। অপরটির প্রধান হবেন একজন অতিরিক্ত ডিজি।

মরিশাসে কাজ করা বাংলাদেশিদের মুনাফার ওপর কর : বাংলাদেশে কর্মরত মরিশাসের নাগরিকরা বেতনের টাকা ব্যাংকে রাখলে বা বিনিয়োগ করলে, তার ওপর যে মুনাফা পাবেন, সেই মুনাফা থেকে আইন অনুযায়ী বাংলাদেশে কর দিতে হবে। তবে, মূল বেতন করের আওতা বহির্ভূত থাকবে।

প্লাস্টিক শিল্প উন্নয়ন নীতিমালা : ‘প্লাস্টিক শিল্প উন্নয়ন নীতিমালা ২০২৩’-এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে সরকার। দেশে পরিবেশবান্ধব প্লাস্টিকের বাজার বাড়াতেই এই নীতিমালার অনুমোদন দেয়া হয়। এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, বিশ্বে প্লাস্টিক পণ্যের চাহিদা বাড়ছে। যাতে পরিবেশবান্ধব আমাদের প্লাস্টিক শিল্প কাঠামো গড়ে ওঠে সেজন্য নীতিমালাটা পাস করা হয়েছে।

এ নীতিমালা হলে আমরা আশা করছি আমাদের প্লাস্টিক সেক্টরের এখন যে বাজার আছে, সে বাজার দ্রুত বর্ধনশীল হবে।

তিনি বলেন, এখানে পরিবেশবান্ধব, আমি আবারও বলছি পরিবেশবান্ধব, পরিবেশ নিশ্চিত করবে এরকম প্রভিশন রেখে এসব ইন্ডাস্ট্রি কীভাবে প্রণোদনা দেয়া যায়, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

মন্ত্রিসভায় মোট ১৯টি এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি (সংশোধন), আইনের খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদ, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নারায়ণগঞ্জ আইন-২০২৩ এর খসড়া এবং সাতক্ষীরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০২৩ এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি আইন, ২০২৩-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন এবং বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক (চাকরি শর্তাদি নির্ধারণ) বিধিমালা, ২০১৩-এর বিধি ২-এর দফা (চ) সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়।