‘দ্য হিন্দু’ প্রতিবেদন

ল্যাভরভ ও ম্যাক্রোঁকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত বাংলাদেশ

দুটি সফরই হবে অনন্য

প্রকাশ : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

চলতি মাসে বাংলাদেশ সফরে আসছেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। তাদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত বাংলাদেশ।

গত ৩ সেপ্টেম্বর রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী ৯ এবং ১০ সেপ্টেম্বর ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী গ্রুপ অব টোয়েন্টি বা জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন থেকে শুরু করে সদস্য, পর্যবেক্ষক ও আমন্ত্রিত দেশের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত হবেন। সম্মেলনে অংশ নেবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও।

তবে এই সম্মেলনের আগেই আগামী ৭ সেপ্টেম্বর রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের ঢাকায় আসছেন। আর ১১ সেপ্টেম্বর ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর ঢাকা সফর শুরু হবে।

সের্গেই ল্যাভরভ ও এমানুয়েল ম্যাক্রোঁর বাংলাদেশ সফরকে ঐতিহাসিক হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। কারণ, প্রায় ৩৩ বছর পর ফরাসি প্রথম কোনো প্রেসিডেন্ট ঢাকা সফরে আসছেন। আর মস্কোর ইতিহাসে বাংলাদেশ সফরকারী প্রথম রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন সের্গেই ল্যাভরভ। এই কারণে বাংলাদেশে তাদের আসন্ন দুটি সফরই অনন্য।

এদিকে, জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিতে আগামী ৮ সেপ্টেম্বর বিকালে নয়াদিল্লিতে পৌঁছাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জি-২০ সম্মেলনে অংশ নিতে আমন্ত্রণ পাওয়া ‘অতিথি দেশগুলোর’ মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ।

সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে ১৫তম ব্রিকস সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ওই সম্মেলনে অংশ নেন। সেখানে ব্রিকস (ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন এবং দক্ষিণ আফ্রিকা নিয়ে গঠিত বৈশ্বিক অর্থনৈতিক জোট) সম্প্রসারণ বিষয়ে আলোচনায় অংশ নেয় বাংলাদেশ।

রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় জ্বালানি কোম্পানি রোসাটম রূপপুরে বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে এবং বিদ্যুৎকেন্দ্রটির কাজ শিগগিরই সম্পন্ন হতে যাচ্ছে বলে সের্গেই ল্যাভরভের এই সফর আশার সঞ্চার করেছে। এছাড়া ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে পারমাণবিক এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের চূড়ান্ত পর্যায়ের কাজের সূচনা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং রোসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভ। রোসাটমের সঙ্গে ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত চুক্তিটি ছিল কমপক্ষে ১২.৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের, যা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় চুক্তি। চুক্তির মোট পরিমাণের মধ্যে রাশিয়া প্রায় ৯০ শতাংশ অর্থায়ন করেছে বলে জানা যায়। তবে ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়া আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হওয়ায় বাংলাদেশ ঋণ পরিশোধে কিছুটা সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। দ্য হিন্দু বলেছে, বাংলাদেশ সফরের সময় সের্গেই ল্যাভরভ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করবেন বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে এবং উভয়পক্ষ তৃতীয় কোনো মুদ্রায় অর্থ পরিশোধের বিকল্প নিয়ে আলোচনা করতে পারে। কারণ, আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার ফলে অনেক অংশীদার দেশের জন্য রাশিয়াকে মার্কিন ডলারে অর্থ পরিশোধ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ভারতীয় সংস্থাসহ কিছু সংস্থা চীনা মুদ্রা ইউয়ানের মাধ্যমে মস্কোকে অর্থ পরিশোধ করেছে। তাই ঢাকায় এই ধরনের যেকোনো আলোচনা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

সংবাদমাধ্যমটি বলেছে, রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের সঙ্গে আলোচনা শেষ করে আগামী ৮ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লিতে পৌঁছানোর কথা রয়েছে শেখ হাসিনার। কূটনৈতিক সূত্রগুলো নয়াদিল্লিতে থাকাকালীন শেখ হাসিনা এবং ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক আয়োজনের জন্য ঢাকার ইচ্ছার কথা জানান দিয়েছে। অবশ্য এবার ভারত সফরের সময় শেখ হাসিনা আজমীরে যেতে পারবেন না। কারণ, তাকে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁকে স্বাগত জানাতে ঢাকায় ফিরে আসতে হবে। এর আগে ২০২১ সালের নভেম্বরে প্যারিসে শেখ হাসিনাকে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট স্বাগত জানিয়েছিলেন এবং তখন থেকেই উভয়পক্ষের প্রতিরক্ষা সম্পর্ক সম্প্রসারণের বিষয়টি আলোচনায় ছিল।

দ্য হিন্দু বলেছে, বাংলাদেশের সঙ্গে ফ্রান্সের ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়া প্রথম পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে ফ্রান্স একটি। পশ্চিম ইউরোপের এই দেশটি ১৯৭২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিল।

প্রায় ৩৩ বছর পর ফরাসি প্রথম কোনো প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঢাকা সফরে আসছেন এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। এছাড়া ফ্রান্স ক্রমবর্ধমানভাবে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের দিকে তার কৌশলগত নীতি পুনর্বিন্যাস করছে এবং বাংলাদেশের সঙ্গে সম্প্রসারিত সামরিক সম্পর্ক এখন দেশটির আগ্রহের মধ্যে রয়েছে।