ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

জাতীয় সংসদ নির্বাচন

‘অনুপ্রবেশ’ নিয়ে চিন্তায় আওয়ামী লীগ

‘অনুপ্রবেশ’ নিয়ে চিন্তায় আওয়ামী লীগ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দলে অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে বেশ চিন্তায় রয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। নির্বাচনের দিনক্ষণ যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই রং বদলাচ্ছে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারীরা। এরই মধ্যে মুখোশ খুলতে শুরু করেছে অনুপ্রবেশকারীদের কেউ কেউ। নির্বাচনের আগেই সুবিধাবাদীরা দলবদল করতেও শুরু করেছে। তবে অনেকে এখনো আওয়ামী লীগে ঘাপটি মেরে রয়েছে। অনুপ্রবেশকারীদের কেউ কেউ আবার দলের নীতি আদর্শবিরোধী কাজ করে আওয়ামী লীগের গায়ে কালিমা লেপন করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এদিকে নির্বাচনের কয়েক মাস আগেই দলবদল করতে শুরু করেছে অনুপ্রবেশকারীরা। গেল ২ সেপ্টেম্বর এক মণ দুধ দিয়ে গোসল করে বিএনপিতে যোগ দিয়েছে শরীয়তপুরের হাসেম সরদার (৬০) নামের এক আওয়ামী লীগ কর্মী। হাসেম সরদারের দাবি, সর্বশেষ তিনি শরীয়তপুর পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। শরীয়তপুর পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল আজিজ বেপারীর দাবি, হাসেম সরদার আওয়ামী লীগের দলের পদধারী কোনো নেতা নন। তিনি যে দাবি করেছেন, ৭নং ওয়ার্ডের সহ-সভাপতি, তা মিথ্যা। উনি দুধ দিয়ে গোসল করে বিএনপিতে যোগদান করেছেন- এটা সম্পূর্ণ উনার ব্যক্তিগত বিষয়। এতে আওয়ামী লীগের কোনো সম্পর্ক নেই।

গত ১০ জুলাই জামালপুর পৌরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য গোলাম রব্বানীর নেতৃত্বে ৩০ কর্মী বিএনপিতে যোগদান করেন। জেলা বিএনপির কার্যালয়ে দলটির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করে বিএনপিতে যোগ দেয়ার ঘোষণা দেন তারা।

গত বছরের ১৮ নভেম্বর বরগুনার জেলার আমতলী উপজেলা বিএনপিতে যোগ দেন আওয়ামী লীগের ৫০ জন নেতাকর্মী। আমতলীর চাওড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সফেজ উদ্দিন প্যাদা ও সাবেক ইউপি সদস্য আলতাফ হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপিতে যোগদান করেন নেতাকর্মীরা। এ ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মতিয়ার রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘যারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ মেনে আওয়ামী লীগ করে তারা কখনো দল বদলাতে পারে না। মূলত এরা সুযোগ সন্ধানী। কখনো এই দলে, আবার কখনো ওই দলের সঙ্গ দেয়াই এদের কাজ। এরা নিজেদের স্বার্থে দলকে ব্যবহার করে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, অনুপ্রবেশকারীরা আওয়ামী লীগের লীগের জন্য শুভকর নয়। নির্বাচনে ক্ষমতাসীনদের জন্য মূল চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে দলে অনুপ্রবেশকারীরা। এরা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের কমিটিতে ঢুকে পড়েছে, জেলা-উপজেলা কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদও বাগিয়েছে তারা। অনুপ্রবেশকারীরা আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে বিপাকে ফেলতে তৎপর হয়ে উঠতে পারে।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, অনুপ্রবেশকারীরা আওয়ামী লীগের মতো আদর্শবান সংগঠনের জন্য প্রদাহের মতো। অনুপ্রবেশকারী কেউ ধরা পরলে আমরা তাকে দল থেকে বের করে দিই। সুবিধাবাদিদের তাদের স্বার্থের জন্য আওয়ামী লীগে প্রবেশ করে, তাদের আচরণে আমাদের দলের আদর্শবান-ত্যাগী নেতাকর্মীর হৃদয়ে আচড় লাগে। সুবিধাবাদিদের স্বার্থান্বেষী কর্মকাণ্ডে আওয়ামী লীগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দলের জনপ্রিয়তায় আচড় পড়ে।

অনুপ্রবেশকারীদের অনৈতিক কর্মকাণ্ডে আমাদের দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা কষ্ট পায়, আমরাও কষ্ট পাই। আওয়ামী লীগে আমরা অনুপ্রবেশকারীদের জায়গা দিতে চাই না। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক বলেন, আওয়ামী লীগ ধারাবাহিকভাবে ক্ষমতায় থাকার কারণে সুবিধা নেয়ার জন্য বিএনপি-জামায়াতের ‘উচ্ছিষ্ট’ কিছু লোক আওয়ামী লীগে জায়গা নিয়েছে। আমাদেরও কিছু নেতা নিজেদের গ্রুপ ভারি করার জন্য, শক্তি বৃদ্ধির জন্য আওয়ামী লীগে তাদের জায়গা দিয়েছে। অনুপ্রবেশকারীরা আওয়ামী লীগের নীতি-আদর্শে বিশ্বাস করে না।

আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে বিশ্বাস করে না। অনুপ্রবেশকারীদের দিয়ে দলের শক্তি বৃদ্ধি করা যায় না। বরং দলের শক্তি ক্ষয় হয়। অনুপ্রবেশকারীরা বদনামের কাজ করে। যারা অনুপ্রবেশকারীদের দলে জায়গা দেয়, তারা আহাম্মকের স্বর্গে বাস করে। বিভিন্ন জায়গায় হাইব্রিড-অনুপ্রবেশকারীরা প্রকৃত আওয়ামী লীগের নেতাকমীর বিরুদ্ধে মামলা দিচ্ছে, এটা আগামী নির্বাচনে দলের জন্য কাল হতে পারে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত