একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী

অতিরিক্ত ক্ষতিপূরণ দাবি এড়াতে জমি অধিগ্রহণে সতর্ক থাকার নির্দেশ

সঠিকভাবে প্রকল্পের নকশা প্রণয়নের ওপর গুরুত্বারোপ

প্রকাশ : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে কেউ যাতে অতিরিক্ত ক্ষতিপূরণ দাবি করতে না পারে, সেজন্য জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগর এনইসি সভাকক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় তিনি এ নির্দেশনা দেন। প্রধানমন্ত্রী একনেক সভায় সভাপতিত্ব করেন। পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বৈঠকশেষে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্বৃত্ত করে প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন- ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে সরকার ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের জমির বাজার মূল্যের চেয়ে তিনগুণ বেশি ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে। কিন্তু আমাদের খুব সতর্ক থাকতে হবে, প্রকল্পের জায়গায় যাতে কেউ রাতারাতি অস্থায়ী বা বাঁশের কাঠামো তৈরি করে সেই কাঠামোর ক্ষতিপূরণ দাবি করতে না পারে।’ প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রকল্প এলাকায় তাদের প্রথম সফরের সময় প্রকল্পের স্থানগুলোর ছবি তুলে রাখতে বলেন, যাতে অতিরিক্ত ক্ষতিপূরণ দাবির প্রবণতা রোধ করা যায়। একনেক সভায় সোনাগাজীতে সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি সংশোধিত প্রকল্পের অনুমোদনের সময় প্রধানমন্ত্রী সোলার প্ল্যান্টের খুঁটির উচ্চতা একটি আদর্শ স্তরে রাখার জন্য বাস্তবায়নকারি সংস্থাকে নির্দেশ দেন, যাতে খুঁটির নিচে সর্বোচ্চ বাতাস, জল এবং সূর্যের আলো যেতে পারে। এর ফলে জমিতে ভালো চাষাবাদ হতে পারে। এমএ মান্নান জানান, প্রধানমন্ত্রী প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে সঠিকভাবে প্রকল্পের নকশা প্রণয়নের নির্দেশ প্রদান করেছেন, যাতে প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় নকশায় কোনো সংশোধনীর প্রয়োজন না হয়। নড়াইল জেলার নবগঙ্গা নদীর উপর একটি সেতু প্রকল্পের নকশায় ক্রুটির কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আরো সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, ভুল নকশার কারণে যেন সরকারের অর্থের অপচয় না হয়। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ইঞ্জিনচালিত নৌকা ও অন্যান্য নৌযান চলাচলের পথ সুগম করার জন্য নবগঙ্গা নদীর ওপর নির্মাণাধীন সেতুর দুটি অংশ ভেঙে ফেলতে হয়েছে। কারণ, সেতুর উচ্চতা কম ছিল। নকশায় ভুলের কারণে নির্মাণাধীন সেতু ভেঙে ফেলার প্রয়োজন হওয়ায় একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী অসন্তোষ প্রকাশ করেন। সরকারি তহবিলের অপ্রয়োজনীয় অপচয় রোধ করতে প্রকল্পের নকশা নির্ভুলভাবে প্রণয়নের নির্দেশ দেন তিনি।

চাঁদপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং নার্সিং কলেজ প্রকল্প অনুমোদনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রকল্প এলাকার বাঁধগুলোকে ভাঙনের হাত থেকে রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পরই মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের জন্য অবকাঠামো নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি এ ব্যাপারে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেন।

এমএ মান্নান বলেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন করায় একনেকের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী ও তার সরকারকে আন্তরিক অভিনন্দন জানানো হয়। এ সময় বাকি কাজ যথাসময়ে শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধনের সময় আমরা সাধারণ মানুষের উচ্ছাস ও আনন্দ দেখেছি। দেশবাসী এ ধরনের উন্নয়ন প্রকল্প আরো দেখতে চায়। আশা করি, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের অবশিষ্ট কাজ শিগগিরই শেষ হবে।’ জনগণকে খুশি করতে জাতীয় নির্বাচনের আগে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে আংশিকভাবে খুলে দেয়া হয়েছে কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে এমএ মান্নান বলেন, আগামী নির্বাচনের দিকে যদি সরকারের সুদৃষ্টি থাকে, তাহলে সেটা দোষের কিছু নয়।

তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের আগে ভোটারদের কাছে আমাদের যেতে হবে। ব্যবহারকারীদের স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য এক্সপ্রেসওয়ের আংশিক উদ্বোধন করা হয়েছে। বাকি অংশটি চালু হলে, সেটি নিশ্চয়ই আরো চমৎকার হবে।’ আগামী মাসে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু হচ্ছে বলে তিনি জানান।

অপর এক প্রশ্নের উত্তরে সরকারের জ্যেষ্ঠ এই মন্ত্রী বলেন, কোনো তথ্য নিয়ে সরকার লুকোচুরি করে না। যখন তথ্য পাওয়া যাবে, তখন সাধারণ পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতির তথ্য প্রকাশ করা হবে।

প্রেস ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে আংশিকভাবে চালু করা হয়েছে, এটি বলা ঠিক নয়। বরং বলা যায়, প্রকল্পের কাজ নিজস্ব গতিতে চলছে। এক প্রশ্নের উত্তরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, একটি দেশের অর্থনীতি কখনো সরলরেখায় চলে না। অর্থনীতিতে উত্থান-পতন থাকে। তিনি জানান, রাজধানীতে এখন দৈনিক ৮০ হাজার মানুষ মেট্রোরেলে যাতায়াত করে এবং এতে তাদের ভোগান্তি অনেক কমে এসেছে।