যুগ্ম সচিব পদে ২২১ কর্মকর্তার পদোন্নতি

দপ্তর বণ্টনে সময় নেবে জনপ্রশাসন

প্রকাশ : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ফারুক আলম

প্রশাসনকে চাঙা রাখতে নিয়ম মাফিক উপসচিব থেকে যুগ্ম সচিব পদে ২২১ জনের পদোন্নতি দিয়েছে জনপ্রশাসন। এতে দীর্ঘদিনের বঞ্ছনার অবসান ঘটেছে কর্মকর্তাদের। কর্মক্ষেত্র এবং সামাজিকভাবে যুগ্ম সচিবদের সম্মানও বেড়েছে, যা প্রশাসনের কাজে কর্মচঞ্চলতা বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে পদোন্নতি দিয়ে তাদের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে। পরে তাদের ধাপে ধাপে বিভিন্ন স্তরে পদায়ন করা হবে বলে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, পদোন্নতির মাধ্যমে দাপ্তরিক সম্মান বৃদ্ধির সঙ্গে কাজের গতি আরো বাড়বে। কাজের ভেতর নিষ্ঠা ও দায়িত্বশীলতা আসবে। যুগ্ম সচিবরা সরকারি দপ্তরের সিনিয়র কর্মকর্তা হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ কাজ মনিটর ও সংগঠিত করা এবং ব্যবস্থাপনায় মনোযোগ দিয়ে থাকেন। সরকারের চলমান উন্নয়ন প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন এসব কর্মকর্তা।

জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, কোনো কর্মকর্তা পদোন্নতির যোগ্য হলে তাকে পদোন্নতি দিতে হবে, এটাই নিয়ম হওয়া উচিত। কিন্তু আমরা অনেক দেখেছি, পদোন্নতির সময় হলেও কোনো কোনো কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয় না। এতে ওই কর্মকর্তার মনে এক ধরনের হতাশা কাজ করে। প্রশাসনের কাজের ক্ষেত্রেও অমনোযোগী হয়। সেজন্য পদের চেয়ে তিনগুণ কিংবা পাঁচগুণ হলেও পদোন্নতি দিতে হবে। সুতরাং, গত কয়েক বছরের মতো এবারও কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিয়েছে জনপ্রশাসন। এখন কর্মকর্তাদের পদোন্নতি পাওয়া পদে কাজ করার সুযোগ করে দিতে হবে। যেন তাদের নিচের পদে কাজ করতে না হয়। এতে ব্যক্তির পাশাপাশি জনপ্রশাসন লাভবান হবে। পদোন্নতি পাওয়া কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে আগে অনেক কর্মকর্তার বসার জায়গা ছিল না। বর্তমানে কর্মকর্তাদের বসার জন্য কয়েকটি বহুতল ভবন নির্মাণ হয়েছে এবং নির্মাণ করা হচ্ছে। দীর্ঘ ৩৮ বছর পর সরকারি দপ্তরের জনবল কাঠামো হালনাগাদের উদ্যোগ নেয় সরকার। মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর জনবল কাঠামো হালনাগাদ করা হয়েছে। এরপর পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অধীন দপ্তর, অধিদপ্তর ও সংস্থা এবং সাংবিধানিক, স্বায়ত্তশাসিত বা আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের জনবল কাঠামো নিয়োগের ব্যবস্থা করছে। যোগ্য ব্যক্তিদের পদোন্নতি দেয়ারও সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে সরকার।

সংশ্নিষ্টরা জানান, চলতি বছরের মার্চে অতিরিক্ত সচিব পদে ১১৪ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। এর মধ্যদিয়ে বর্তমানে অতিরিক্ত সচিবের নিয়মিত পদ আছে ২১২টি। এর সঙ্গে সমপর্যায়ের বিভিন্ন দপ্তরে প্রেষণে (নির্ধারিত পদের বাইরে অন্যান্য দপ্তর বা সংস্থায় নিয়োগ) থাকা পদ আছে আরো প্রায় ১২৫টির মতো।

সব মিলিয়ে অতিরিক্ত সচিবের পদ দাঁড়ায় ৩৩৭টিতে। পদোন্নতির আগপর্যন্ত কর্মরত অতিরিক্ত সচিব ছিলেন ৩১২ জন। এখন নতুন পদোন্নতি পাওয়া অতিরিক্ত সচিবদের নিয়ে এই সংখ্যাটি দাঁড়িয়েছে ৪২৬। অর্থাৎ যোগ্য ব্যক্তিদের পদোন্নতি আটকে না রেখে নিয়মতান্ত্রিকভাবে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। নিয়মিত বিসিএস ব্যাচ হিসেবে ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দেওয়া হয়। অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির পর সর্বশেষ গত সোমবার যুগ্ম সচিব পদে ২২১ জনকে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। নিয়মিত ব্যাচ হিসেবে বিসিএস ২২তম ব্যাচের পদোন্নতি পেয়েছেন ১৮২ জন। যুগ্ম সচিবে অনুমোদিত পদের সংখ্যা ৩৩২টি। পদোন্নতি পাওয়ায় বর্তমানে যুগ্ম সচিব পদে কর্মকর্তার সংখ্যা দাঁড়াল ৯৪৬ জন।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শর্তে বলেন, যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি দিয়ে জনপ্রশাসন ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে, যাদের পদোন্নতি হয়নি তাদের অনেকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা আছে। কারো বিষয়ে নানা অসংগতিও রয়েছে। মাঠপর্যায়ে উপসচিব পদে কাজ করতে গিয়ে অনেকের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ রয়েছে।

জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া বলেন, পদোন্নতির পরপরই যারা অবসরে যান সেখানেও একটা বঞ্চনা আছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা যথাসময়ে পদোন্নতি পাননি। সেজন্য অবসরের আগে পদোন্নতি দিয়ে সম্মানিত করা হয়।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বদলি বা অন্য কোনো কারণে পদ শূন্য হওয়ার আগ পর্যন্ত উন্নীত বেতন স্কেল বহাল থাকবে বলেও প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে। ‘সরকারের উপ-সচিব, যুগ্ম সচিব, অতিরিক্ত সচিব ও সচিব পদে পদোন্নতি বিধিমালা, ২০০২’-এ বলা হয়েছে, যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে ৭০ শতাংশ প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের ও ৩০ শতাংশ অন্যান্য ক্যাডারের উপসচিব পদে কর্মরতদের বিবেচনায় নিতে হবে।

বিধিমালা অনুযায়ী, উপসচিব পদে কমপক্ষে ৫ বছর চাকরিসহ সংশ্লিষ্ট ক্যাডারের সদস্য হিসেবে কমপক্ষে ১৫ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা বা উপসচিব পদে কমপক্ষে ৩ বছর চাকরিসহ ২০ বছরের অভিজ্ঞতা থাকলে কোনো কর্মকর্তা যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতির জন্য বিবেচিত হন।

এ বিষয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, যেসব কর্মকর্তা যোগ্য, তাদেরই পদোন্নতি দেয়া হয়। এখানে কোনো পক্ষপাতের সুযোগ নেই।