চট্টগ্রামে কেজিডিসিএল

সাড়ে ৫ লাখ গ্রাহকের নেই প্রিপেইড মিটার

প্রকাশ : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  তামীম রহমান, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) গ্রাহক সংখ্যা ৬ লাখ। কিন্তু প্রিপেইড মিটার আছে ৬০ হাজার গ্রাহকের। প্রিপেইড মিটার সুবিধার বাইরে আছে অন্তত ৫ লাখ ৪০ হাজার গ্রাহক। তবে চলতি মাসে নতুন করে আরো ১ লাখ গ্রাহকের জন্য প্রিপেইড মিটার স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এসব মিটার স্থাপন করার পরও আরো ৪ লাখ ৪০ হাজার গ্রাহক প্রিপেইড মিটারের আওতার বাইরে থাকবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। চট্টগ্রামে তিন দশকের বেশি সময় আগে প্রাকৃতিক গ্যাস সংযোগ প্রদান করা হয় আবাসিক ও শিল্প পর্যায়ে। শুরুতে বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (বিজিডিসিএল) মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ করা হতো। পরবর্তীতে চট্টগ্রামের জন্য পৃথক একটি গ্যাস সরবরাহ কোম্পানি অনুমোদন করা হয়। নাম দেয়া হয় কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল)। এই কোম্পানি গঠনের পর চট্টগ্রাম অঞ্চলের গ্রাহকদের সেবার পরিধি বেড়ে যায়। আবাসিক ও শিল্প গ্রাহকদের মধ্যে ফিরে আসে স্বস্তি। গ্রাহকদের সেবা বৃদ্ধির জন্য দেয়া হয় প্রিপেইড মিটার। কিন্তু গ্রাহকদের চাহিদার তুলনায় তা ছিল একেবারে অপ্রতুল। ৬ লাখ গ্রাহকের জন্য মাত্র ৬০ হাজার প্রিপেইড মিটার স্থাপন করা হয়। ১০ বছর পর এখন আবার প্রিপেইড মিটার স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে সব গ্রাহক পাবেন না। ৫ লাখ ৪০ হাজার গ্রাহকের মধ্যে ১ লাখ গ্রাহক পাবেন নতুন প্রিপেইড মিটার। নতুন পুরোনো সব মিলে প্রিপেইড মিটারের আওতায় আসছে ১ লাখ ৬০ হাজার গ্রাহক। এতে অনেক গ্রাহকই প্রিপেইড মিটার সুবিধার বাইরে থেকে যাচ্ছে।

কেজিডিসিএল সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে গ্যাসের আবাসিক গ্রাহকদের প্রিপেইড মিটারে আওতায় আনার প্রকল্প কাজের প্রথম ধাপে সফলতা মিলেছে। এখন দ্বিতীয় দ্বিতীয় ধাপে বসছে আরো ১ লাখ মিটার। গ্যাসের অপচয় রোধে বসানো হচ্ছে এসব প্রিপেইড মিটার। চট্টগ্রামে প্রথম ধাপে ৬০ হাজার গ্রাহককে এর আওতায় আনা হয়। দ্বিতীয় ধাপে ২৯১ কোটি ৪৯ লাখ টাকা ব্যয়ে বসানো হচ্ছে আরো ১ লাখ প্রিপেইড মিটার। মিটার বসানোর কাজ শুরু করতে আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর জাপানের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি হচ্ছে। এরপর থেকে শুরু হবে মিটার বসানোর কাজ। কেজিডিসিএলের কর্মকর্তারা জানান, নতুন এ পদ্ধতিতে প্রতি চুলায় গ্রাহকের সাশ্রয় হবে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। মোবাইল ফোনে টাকা রিচার্জের মতোই গ্রাহকরা মিটারে প্রয়োজনীয় গ্যাসের টাকা রিচার্জ করতে পারছেন। কর্ণফুলী গ্যাসের মোট ৬ লাখ আবাসিক গ্রাহক রয়েছে। এর মধ্যে ন্যাচরাল গ্যাস ইফিসিয়েন্সি প্রজেক্টের মাধ্যমে প্রথম দফায় ৬০ হাজার গ্রাহককে প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনে কেজিডিসিএল। জাইকার অর্থায়নে ২০১৫ সালে হাতে নেয়া ২৪৭ কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হয় ২০১৯ সালে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে গ্যাস সাশ্রয়সহ গ্রাহক ভোগান্তি কমে আসায় প্রিপেইড মিটার স্থাপনে নতুন আরেকটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। এই প্রকল্পের অধীনেই নতুন করে মিটার স্থাপন করা হবে গ্রাহক পর্যায়ে।

নতুন প্রকল্পটির নাম ‘আবাসিক গ্রাহকদের জন্য প্রিপেইড মিটার স্থাপন প্রকল্প’। ২০২১ এর ফেব্রুয়ারিতে ১ লাখ মিটার স্থাপনের জন্য দ্বিতীয় ধাপে প্রকল্প হাতে নেয় কেজিডিসিএল। প্রাথমিক পর্যায়ে এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয় ২৪১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। প্রকল্পটির বাস্তবায়নে মেয়াদ ধরা হয়েছিল ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত। সংস্থাটির নিজস্ব অর্থায়নের প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য; প্রাকৃতিক গ্যাসের অপচয় রোধ, সাশ্রয়ী ব্যবহার নিশ্চিত ও গ্যাসের ব্যবহার হ্রাস করা। তবে নানা জটিলতায় পিছিয়ে যায় এ প্রকল্পের কাজ। এরপর প্রকল্পে ব্যয় বৃদ্ধির পাশাপাশি বেড়েছে সময়।

কেজিডিসিএলের উপমহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. নাহিদ আলম বলেন, সব গ্রাহকরা চান প্রিপেইড মিটারের আওতায় আসতে। তাই আমরাও নতুন মিটার সরবরাহের চেষ্টা করে যাচ্ছি। এরই মধ্যে ৮৭ হাজার গ্রাহক প্রিপেইড মিটারের আওতায় আসার জন্য আবেদন করেছেন। আরো কিছু আবেদন জমা নেয়া হবে। সব মিলিয়ে এ প্রকল্পের আওতায় ১ লাখ গ্রাহক প্রিপেইড মিটার সংযোগ পাবে। প্রিপেইড মিটারের জন্য আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর জাপানের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করা হবে। এরপর থেকে গ্রাহকের মাঝে প্রি-পেইড মিটার সংযোগ দেয়া হবে।

নতুন এই প্রকল্পের মাধ্যমে নগর ও জেলার ১ লাখ গ্রাহককে প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনা হচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে নগরীর সদরঘাট, বায়েজিদ, চান্দগাঁও, পাঁচলাইশ, চকবাজার, হালিশহর, পাহাড়তলী, খুলশী, ইপিজেড, বাকলিয়া, কোতয়ালি, ডবলমুরিং, বন্দর, পতেঙ্গা, আকবরশাহ এবং জেলার হাটহাজারী, সীতাকুন্ড, মিরসরাই, কর্ণফুলী, আনোয়ারা, পটিয়া, বোয়ালখালী এবং চন্দনাইশ উপজেলার কেজিডিসিএল গ্রাহকরা প্রিপেইড মিটার পাবেন।