ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট আজ ঢাকায় আসছেন

বিমানবন্দরে স্বাগত জানাবেন প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশ : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ-ফ্রান্সের সম্পর্ক আরো জোরদার করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে আজ ঢাকায় আসছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্বাগত জানাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সফরকালে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করবেন। এরপর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ম্যাক্রোঁ’র দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। এছাড়া ফরাসি প্রেসিডেন্টের সম্মানে প্রধানমন্ত্রী আয়োজিত এক ভোজসভায় ম্যাক্রোঁ’র যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে। দুই নেতা দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষর প্রত্যক্ষ করবেন বলেও আশা করা হচ্ছে। এরপর তাদের একটি যৌথ প্রেস বিফ্রিংয়ের আয়োজনের কথা রয়েছে।

ঢাকায় ফ্রান্স দূতাবাস জানিয়েছে, ভারতের রাজধানী দিল্লিতে অনুষ্ঠেয় জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন শেষে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন ম্যাক্রোঁ। তিন দশক পর ফরাসি কোনো প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফর এটি। এর আগে ১৯৯০ সালে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া মিতেরা ঢাকায় এসেছিলেন।

ম্যাক্রোঁ সফর নিয়ে গত সোমবার ঢাকায় ফ্রান্স দূতাবাস তাদের এক্স (আগের নাম টুইটার) ও ফেসবুকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে। দূতাবাস থেকে বলা হয়েছে, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে ফ্রান্সের কৌশল বাস্তবায়নের কাজ চলমান রাখবে। দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটানো বাংলাদেশের সঙ্গে ফ্রান্সের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করার বিষয়টি আলোচনায় উঠবে।

বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের বিষয়ে বাংলাদেশ এবং ফ্রান্সের অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। বিশেষ করে প্যারিস এজেন্ডা ফর পিপল অ্যান্ড দ্য প্ল্যানেট সক্রিয়ভাবে সমর্থন করে বাংলাদেশও। জলবায়ু সংকটের কারণে বাংলাদেশ যে ক্রমবর্ধমান সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে, সেটি কাটিয়ে উঠতে প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ ঢাকাকে সহায়তার বিষয়ে সফরের সময় ফ্রান্সের প্রতিশ্রুতি পুনর্নিশ্চিত করবেন।

দূতাবাসের ওই বিবৃতিতে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় এবং জাতিসংঘের অধীনে বৈশ্বিক শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের ভূমিকাকেও স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ফরাসি দূতাবাস বাংলাদেশে তাদের বিনিয়োগের বিষয়েও টুইট করেছে। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই আমাদের অগ্রাধিকারমূলক ইস্যুগুলোর একটি। বাংলাদেশে এটি এএফডি ফ্রান্সের মাধ্যমে পরিচালিত হয়, যারা গত ৫ বছরে এই খাতে বার্ষিক প্রতিশ্রুতি প্রায় তিনগুণ বাড়িয়েছে। প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর সফর এই প্রতিশ্রুতিতে নতুন গতিশীলতা আনবে।

ফ্রান্স বর্তমানে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দিয়েছে এবং এই অঞ্চলের ভৌগলিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। সেখানে ফ্রান্স-বাংলাদেশ সম্পর্ক যথেষ্ট অগ্রসর হয়েছে। দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে তিন বিলিয়ন ইউরোর বেশিতে দাঁড়িয়েছে। চলতি বছরের জুন মাসে ঢাকায় নিযুক্ত ফরাসি রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশি কোম্পানিগুলোকে ফ্রান্সে বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানায়।

এদিকে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের কাছে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ফ্রান্স ২০২১ সালে একটি স্যাটেলাইট কারখানা স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছিল। আমরা ওই প্রস্তাবকে স্বাগত জানাব। এ ছাড়া ফ্রান্সের কাছ থেকে বিমান কেনার বিষয়েও অগ্রগতির ইঙ্গিত দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ফ্রান্স কিছু বিমান বিক্রি করতে চায়। আমরা রাজি হয়েছি। আমরা ১০টি এয়ারবাস কিনব। এর মধ্যে দুটি হচ্ছে কার্গো বিমান। দুটি চাচ্ছি বোয়িং ও এয়ার। মাঝখানে ডলার সংকটের কারণে কেনার প্রক্রিয়ায় দেরি হয়েছে।

বাংলাদেশের সঙ্গে ফ্রান্সের দৃঢ় সম্পর্ক স্থাপনের প্রয়োজন রয়েছে, কারণ পশ্চিম ইউরোপের এই দেশটি নতুন জোট গড়তে চায়। আফ্রিকার দেশগুলোতে এর আগে ফরাসি উপনিবেশ বা মিত্র বলে পরিচিত দেশগুলোতে ফ্রান্সের প্রভাব হ্রাস পাওয়ায় এই প্রয়োজনীয়তা আরো অনুভব করছে দেশটি। নাইজার ও গ্যাবনের মতো দেশগুলোতে সামরিক অভ্যুত্থান এবং পরে সেখানে ফ্রান্সবিরোধী বিক্ষোভ দেশটিকে চিন্তায় ফেলেছে। এছাড়াও বঙ্গোপসাগর বরাবর বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান ইন্দো-প্যাসিফিকে ফ্রান্সের কৌশলগত উদ্দেশ্যকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে অংশীদার হিসেবে ঢাকার তাৎপর্যকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।

আর তাই ফরাসি প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফর ইন্দো-প্যাসিফিক সম্পর্ক জোরদার করতে, জলবায়ু পরিবর্তন ও নিরাপত্তার মতো বৈশ্বিক সমস্যা মোকাবিলা এবং বিদ্যমান ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় পথ চলার ক্ষেত্রে কৌশলগত গুরুত্ব বহন করে। এছাড়া এই সফরটি বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কথিত হয়রানির বিষয়ে উদ্বেগও দূর করবে। সামগ্রিকভাবে এই সফরের ফলাফল দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এবং আঞ্চলিক গতিশীলতাকে নতুন রূপ দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।