জি-২০ সম্মেলনে শেখ হাসিনার যোগদান

বহুমাত্রিক সাফল্যে অনন্য উচ্চতায় বাংলাদেশ

প্রকাশ : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  শামীম সিদ্দিকী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জি-২০ সম্মেলনে যোগদান শেষে গতকাল দেশে ফিরেছেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিশেষ আমন্ত্রণে জি-২০ সম্মেলনে যোগ দিতে গত শুক্রবার দিল্লি পৌঁছান। ওই দিনই সন্ধ্যায় ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে মোদির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন শেখ হাসিনা। দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের আগে কৃষি গবেষণায় সহযোগিতা, সংস্কৃতি বিনিময়, বাংলাদেশি টাকা এবং ভারতীয় রুপির (দুই দেশের সাধারণ মানুষ) মধ্যে লেনদেন সহজ করার বিষয়ে তিনটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়।

৯ সেপ্টেম্বর জি-২০ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিন্ন ভিন্ন অধিবেশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন। শীর্ষ সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য ‘ওয়ান আর্থ, ওয়ান ফ্যামিলি, ওয়ান ফিউচার’ শীর্ষক দুটি বক্তৃতা দেন তিনি। ‘ওয়ান আর্থ’ ও ‘ওয়ান ফ্যামিলি’ সেশনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তন, কোভিড মহামারির পর অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার, ইউরোপে যুদ্ধের ফলে জ্বালানি, খাদ্য ও সারের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বৈশ্বিক সরবরাহ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হওয়ার মতো চ্যালেঞ্জগুলো কীভাবে মোকাবিলা করা যায়, তা তুলে ধরেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের মেয়াদকালে বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবিশ্বাস্য সাফল্যের অভিজ্ঞতা বিশ্ব নেতাদের কাছে উপস্থাপন করেন। আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আলবার্তো অ্যাঞ্জেল ফার্নান্দেজ, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইয়োল এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের সঙ্গেও বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী। এদিকে শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশ সফরে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান।

জি-২০ সম্মেলনের দ্বিতীয় ও শেষ দিন গতকাল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী অন্যান্য দেশের নেতাদের সঙ্গে রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিতে এবার মিশর, মরিশাস, নেদারল্যান্ডস, নাইজেরিয়া, ওমান, সিঙ্গাপুর, স্পেন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত বাংলাদেশসহ মোট ৯টি দেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা এবং অটিজম বিশেষজ্ঞ সায়মা ওয়াজেদ গত শনিবার নয়াদিল্লিতে জি-২০ সম্মেলনের ফাঁকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সাথে সেলফিসহ তাদের বেশ কয়েকটি একান্ত ছবি সামাজিক মাধ্যমে ভেসে বেড়ানোর প্রেক্ষাপটে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তার আলাপচারিতার বর্ণনা দিয়েছেন। সায়মা সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স, পূর্বের টুইটারে লিখেছেন- নয়াদিল্লিতে জি-২০ সামিটে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সাথে চমৎকার আলাপ হয়েছে।

তিনি যোগ করেন, ‘আমি তার সাথে সার্বিক জনস্বাস্থ্যের অংশ হিসেবে মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবার গুরুত্ব এবং শিক্ষাব্যবস্থায় স্কুল মনোবিজ্ঞানীর বিষয় নিয়ে কথা বলেছি।’ সায়মা ওয়াজেদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও তার নিজের বেশ কিছু ছবি আপলোড করেছেন, যেখানে তাদের হাসিমুখে দেখা গেছে। বাইডেনকে শেখ হাসিনা ও তার মেয়ের সঙ্গে নিজের মোবাইল ফোন ব্যবহার করে সেলফি তুলতে দেখা গেছে। ছবিটিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন এবং তার মার্কিন সমকক্ষ অ্যান্থনি ব্লিংকেনকেও দেখা যাচ্ছে।

কথোপকথনের সময় উপস্থিত কর্মকর্তারা জানান, ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির প্রগতি ময়দানে একটি আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী কেন্দ্রে শেখ হাসিনা এবং বাইডেন শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এ বছরের অনুষ্ঠানের আয়োজক ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে অন্যান্য বৈশ্বিক নেতাদের সাথে শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেন। নয়াদিল্লির লোককল্যাণ মার্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে দেড় ঘণ্টাব্যাপী তাদের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে দুই নেতার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। উভয় প্রধানমন্ত্রী দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করেন। এ সময় তাদের মধ্যে একান্ত বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে তিস্তা ও অমীমাংসিত ইস্যু আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের তাগিদ দিয়েছেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন জানান, উভয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ ও ভারতের বিদ্যমান গভীর সম্পর্কের বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং এই সম্পর্ক আরো এগিয়ে নিতে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণে একমত হয়েছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী সেই দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিদ্যমান শান্তিপূর্ণ অবস্থা নিশ্চিতকরণে অবদান রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর নিয়ে অনেক আগে থেকেই ভারত ও বাংলাদেশের কূটনৈতিক অঙ্গনে নানা বিচার-বিশ্লেষণ শুরু হয়। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সেলফি তুললেন। তখন ঢাকার কূটনৈতিক পাড়া এবং রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন সমীকরণ শুরু হয়। কি হলো, এটি কী করে সম্ভব। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সেলফি তোলা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে তরুণ প্রজন্ম উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। জো বাইডেন নিজ উদ্যোগে শুধু সেফলি তুলেননি, কথাবার্তাও বলেছেন। এছাড়া নৈশভোজ সভায়ও আরেকবার শেখ হাসিনার সঙ্গে বাইডেনের কথা হয়। দুটি ইভেন্টে দুইবার মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে শেখ হাসিনার দেখা-সাক্ষাৎ দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে বাইডেনের বাংলাদেশ সফরে আসার ব্যাপারে যে অভিব্যক্তি ফুটে উঠেছে, সেটাও ছিল ইতিবাচক। তবে যুুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ও বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের ডামাঢোলে সফরে আসার বিষয়টি বাস্তবিক অর্থে সহজ নয় বলে বাইডেন ইঙ্গিত দেন। বাইডেন বাংলাদেশ সফরে আসতে না পারলেও বাংলাদেশে আসার মতো একটা পটভূমি শেখ হাসিনা রচনা করে এসেছেন। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়। তবে সেই নির্বাচন কোনো দল বর্জন করলে তাকে সমর্থন করার মানসিকতা ভারত কিংবা যুক্তরাষ্ট্র কেউ পোষণ করে না। এছাড়া এই দুটি দেশ স্পষ্টভাবে জানিয়ে আসছে তারা বাংলাদেশের কোনো একক রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করেন না।

বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন কোনো প্রক্রিয়ায় অনুষ্ঠিত হবে, সে সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করেনি বিদেশিরা। তবে তারা বরাবরই সুষ্টু ও শান্তিপূর্ণ বলে আসছে। বিদেশিরা নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা নিয়ে কথা না বলায় হতভম্ব হয়েছে বিএনপি ও তার মিত্ররা। সে কারণে সরকার বিরোধীরা বেশ খানিকটা হোচট খেয়েছে বলেই মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেকরা।

বিএনপি গত শনিবার পদযাত্রা কমসূচি পালন করলেও তাদের নজর ছিল ভারতের দিকে। তাদের ধারণা ছিল, জো বাইডেন হয়তো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এড়িয়ে চলবেন। বাংলাদেশে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে কথা বলবেন। বিএনপির আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটে সে রকম কথাবার্তার প্রতিধ্বনি করবেন। অথচ কিছুই হলো না। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের ওপর জোর দিলেও নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে কোনো টু-শব্দও করেনি। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সরকারও দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছেন।

ভারতে জি-২০ শীষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগদানের মধ্যদিয়ে বহুমাত্রিক সাফল্য বাংলাদেশকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। ভারতের কূটনৈতিকরা বলেছেন, বাংলাদেশকে এই অনন্য উচ্চাতায় নিয়ে আসার পেছনে যিনি বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন নরেন্দ্র মোদি। ভারত বর্ষে যেসব সাংবাদিক দীঘদিন কূটনৈতিক অঙ্গনের সংবাদ সংগ্রহ করে আসছেন, তারা বাংলাদেশের গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে বলেছেন, নরেন্দ্র মোদি জো বাইডেনকে বাংলাদেশ সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা দিয়েছেন। ভারত বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধু ও নিকটতম প্রতিবেশী দেশ। ভারতের প্রতি বাংলাদেশ যেমন কৃতজ্ঞ, তেমনি ভারত বাংলাদেশের প্রতি কম সহানুভূতিশীল নয়। কেন না, বাংলাদেশ স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছে, বাংলাদেশের মাটিতে ভারতে কোনো ‘অশুভ শক্তি’কে তৎপরতা চালানোর সুযোগ দেয়া হবে না। ভারতে স্থিতিশীলতা বজায় রাখার স্বার্থে বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা বজায় থাকার আবশ্যিকতা মনে করে ভারত সরকার। বাংলাদেশ ও ভারতের কূটনৈতিকরা মনে করেন, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের বাইরে কোনো দল দেশ পরিচালনা করলে ‘দশ ট্রাক অস্ত্র উদ্ধার’র কাহিনীর পুনরাবৃত্তি ঘটবে।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের গুরুত্ব তুলে ধরার অভিপ্রায়ে ভারত জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানিয়ে ভারত, এটা আমাদের দেশের জন্য কম প্রাপ্তি নয়। কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলেছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে শেখ হাসিনা বৈঠক অনুষ্ঠানে দূতিওয়ালির ভূমিকা পালন করেন। কেন না, মোদি প্রথমে শেখ হাসিনা এবং পরে বাইডেনের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং তারপরই জো বাইডেন শেখ হাসিনার সঙ্গে সেলফি তোলার জন্য আগ্রহী হন। সাদামাটাভাবে সেলফি তোলা বড় ধরনের কোনো ঘটনা নয়। তবে কূটনৈতিক ভাষায় যুক্তরাষ্ট্রের মতো এমন একটি দেশের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সেলফি তোলা যথেষ্ঠ ইতিবাচক নিদর্শন। সেফফিতে বাইডেনের যে অভিব্যক্তি ফুটে উঠেছে, সেই ভাষাটি হয়তো বাংলাদেশ সরকারপ্রধান অনুধাবন করতে পেরেছেন। বাইডেন ভারত আসছেন, আর শেখ হাসিনা ভারত যাচ্ছেন, এটাই হয়তো মুখ্য সময়। এই সময়ে বাইডেন শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া বা নির্বাচনকালীন সরকার গঠন নিয়ে কোনো ‘নসিহত’ করবেন, সেটাই মনে করেছিল বিএনপি। বিএনপির ধারণা ছিল, যেহেতু যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের র‌্যাবের ওপর যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে কিংবা যে ভিসা-নীতি ঘোষণা করেছে, সেটা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পরিচালিত আওয়ামী লীগ সরকারের ওপর ক্ষোভের বহিপ্রকাশ। আর সেই ক্ষোভ আরো একবার হয়তো প্রকাশ পাবে নয়াদিল্লিতে শেখ হাসিনার সঙ্গে বাইডেনের দেখা হলে। অথচ তার কোনোটিই হলো না। বরং বিএনপি হতচকিত হয়ে গেছে বাইডেনের আচরণে। শুধু সেলফিই নয় নৈশভোজের সময় নরেন্দ্র মোদির উপস্থিতিতে বাইডেন আবারও শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ১৫ মিনিট ধরে কথাবার্তা বলেছেন। বিএনপি যেসব বিদেশি রাষ্ট্রের দিকে চেয়ে থাকে, তার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র সবার শীর্ষে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ওপর রুষ্ট হলে আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় থাকা কঠিন হয়ে পড়বে- এমন স্বপ্নে বিভোর ছিল বিএনপি। তবে বাস্তবে তার কোনোটিই হয়নি।

শেখ হাসিনার সঙ্গে নরেন্দ্র মোদির যে সম্পর্ক, একই সম্পর্ক জো বাইডেনের সঙ্গে শেখ হাসিনা গড়ে তুলতে পেরেছেন বলেই দুই দেশের কূটনৈতিক সূত্রগুলো মনে করছে। বাংলাদেশে যেসব দেশের সরাসরি বিনিয়োগ রয়েছে, তার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র শীর্ষে। দেশটিতে বাংলাদেশের অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশ এখন আর কার্যত কূটনৈতিক কোনো চাপে নেই। দেশের একমাত্র নোবেল বিজয়ীর কথা এখন হয়তো বাইডেন প্রশাসন আমলে নিচ্ছে না। আর বিএনপির চাওয়া-পাওয়ার প্রতিও ওয়াশিংটন কান দিচ্ছে না। প্রতিবেশী দেশ ভারত আর প্রভাবশালী দেশ যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশের আপনজন। সেই সঙ্গে ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব কারো সঙ্গে বৈরীতা নয়’ বঙ্গবন্ধুর এমন পররাষ্ট্র নীতির ওপর ভর করে তার কন্যা শেখ হাসিনা বহির্বিশ্বের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে পেরেছেন বলেই আজ রাশিয়া ও চীন বাংলাদেশের বন্ধুরাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে।

সে কারণে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে সার্গেই ল্যাভরভের প্রথম বাংলাদেশ সফর দুই দেশের সম্পর্ক মজবুতের ইঙ্গিত বহন করে। আর ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোর বাংলাদেশ সফরের মধ্যদিয়ে ফ্রান্সের সাথেও আমাদের চমৎকার সম্পর্কেই প্রতিফলন ঘটেছে। সে কারণে জি-২০ সম্মেলনে শেখ হাসিনা যোগদানের সুযোগ পাওয়ায় বহুমাত্রিক সাফল্যের এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে বাংলাদেশ।