ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

দুই দিনের সফরে ঢাকায় ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট

আজ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক
দুই দিনের সফরে ঢাকায় ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট

দুই দিনের সফরে ঢাকা এসেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে ম্যাক্রোঁর এ সফরে বাংলাদেশ-ফ্রান্সের সম্পর্ক আরো জোরদার হবে।

গতকাল সন্ধ্যায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছালে তাকে স্বাগত জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর প্রধানমন্ত্রীর আয়োজিত ভোজসভায় যোগ দেন মাক্রোঁ। আর আজ সকালে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাবেন এবং বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করবেন। শ্রদ্ধা জানানো শেষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তার সঙ্গে একটি শীর্ষ বৈঠকে অংশ নেবেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট। এরপর দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর শেষে উভয় নেতা একটি যৌথ সংবাদ সম্মেলন করতে পারেন।

ফরাসি প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফরকালে তার সঙ্গে রয়েছেন ফ্রান্সের ইউরোপ ও পররাষ্ট্রবিষয়ক মন্ত্রী কেথেরিন কলোন্না। বাংলাদেশ ও ফ্রান্স সরকারের আশা, ম্যাক্রোঁর এ সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের মধ্যকার বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরো বিস্তৃত হবে ও নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর আমন্ত্রণে ২০২১ সালের নভেম্বরে ফ্রান্স সফর করেন। ১৯৯০ সালের ২২ থেকে ২৪ ফেব্রুয়ারি ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট মিত্রান্দের বাংলাদেশ সফরের পর ম্যাক্রোঁই প্রথম নেতা যিনি বাংলাদেশ সফর করছেন। মিত্রান্দের ওই সফরের পর থেকে উভয় দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্ক অনেক দূর এগিয়েছে।

বর্তমানে বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যে মোট বাণিজ্য ২১০ মিলিয়ন ইউরো থেকে ৪ দশমিক ৯ বিলিয়ন ইউরোতে উন্নীত হয়েছে ও ফ্রান্স রপ্তানির ক্ষেত্রে পঞ্চম দেশ। ফরাসি কোম্পানিগুলো এখন বাংলাদেশের প্রকৌশল, জ্বালানি, মহাকাশ ও পানিসহ বিভিন্ন খাতের সঙ্গে জড়িত।

ঢাকায় ফ্রান্স দূতাবাস বলেছে, ভারতের রাজধানী দিল্লিতে অনুষ্ঠেয় জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন শেষে ঢাকায় এসেছেন প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ। তিন দশক পর ফরাসি কোনো প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফর এটি। এই সফরে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে ফ্রান্সের কৌশল বাস্তবায়নের কাজ চলমান রাখবে। দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটানো বাংলাদেশের সঙ্গে ফ্রান্সের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করার বিষয়টি আলোচনায় উঠবে।

বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের বিষয়ে বাংলাদেশ এবং ফ্রান্সের অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। বিশেষ করে প্যারিস এজেন্ডা ফর পিপল অ্যান্ড দ্য প্ল্যানেট সক্রিয়ভাবে সমর্থন করে বাংলাদেশও। জলবায়ু সংকটের কারণে বাংলাদেশ যে ক্রমবর্ধমান সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে, সেটি কাটিয়ে উঠতে প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ ঢাকাকে সহায়তার বিষয়ে সফরের সময় ফ্রান্সের প্রতিশ্রুতি পুনর্নিশ্চিত করবেন।

দূতাবাসের ওই বিবৃতিতে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় এবং জাতিসংঘের অধীনে বৈশ্বিক শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের ভূমিকাকেও স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। এছাড়া ফরাসি দূতাবাস বাংলাদেশে তাদের বিনিয়োগের বিষয়েও টুইট করেছে। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই আমাদের অগ্রাধিকারমূলক ইস্যুগুলোর একটি। বাংলাদেশে এটি এএফডি ফ্রন্সের মাধ্যমে পরিচালিত হয়, যারা গত ৫ বছরে এই খাতে বার্ষিক প্রতিশ্রুতি প্রায় তিনগুণ বাড়িয়েছে। প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর আসন্ন সফর এই প্রতিশ্রুতিতে নতুন গতিশীলতা আনবে।

ফ্রান্স বর্তমানে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দিয়েছে এবং এই অঞ্চলের ভৌগোলিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। সেখানে ফ্রান্স-বাংলাদেশ সম্পর্ক যথেষ্ট অগ্রসর হয়েছে। দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ৩ বিলিয়ন ইউরোর বেশিতে দাঁড়িয়েছে। চলতি বছরের জুন মাসে ঢাকায় নিযুক্ত ফরাসি রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশি কোম্পানিগুলোকে ফ্রান্সে বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানায়।

বাংলাদেশের সঙ্গে ফ্রান্সের দৃঢ় সম্পর্ক স্থাপনের প্রয়োজন রয়েছে, কারণ পশ্চিম ইউরোপের এই দেশটি নতুন জোট গড়তে চায়। আফ্রিকার দেশগুলোতে ইতোপূর্বে ফরাসি উপনিবেশ বা মিত্র বলে পরিচিত দেশগুলোতে ফ্রান্সের প্রভাব হ্রাস পাওয়ায় এই প্রয়োজনীয়তা আরো অনুভব করছে দেশটি। নাইজার ও গ্যাবনের মতো দেশগুলোতে সামরিক অভ্যুত্থান এবং পরে সেখানে ফ্রান্সবিরোধী বিক্ষোভ দেশটিকে চিন্তায় ফেলেছে। এছাড়া বঙ্গোপসাগর বরাবর বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান ইন্দো-প্যাসিফিকে ফ্রান্সের কৌশলগত উদ্দেশ্যকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে অংশীদার হিসেবে ঢাকার তাৎপর্য আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।

তাই ফরাসি প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফর ইন্দো-প্যাসিফিক সম্পর্ক জোরদার করতে, জলবায়ু পরিবর্তন ও নিরাপত্তার মতো বৈশ্বিক সমস্যা মোকাবিলা এবং বিদ্যমান ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় পথচলার ক্ষেত্রে কৌশলগত গুরুত্ব বহন করে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত