ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

রেজিস্ট্রি অফিসগুলোয় বালাম বই সংকট

সমাধানের পথ খুঁজছে আইন মন্ত্রণালয়

সমাধানের পথ খুঁজছে আইন মন্ত্রণালয়

রাজধানীসহ সারাদেশের দলিল রেজিস্ট্রি অফিসগুলোয় বালাম বইয়ের চরম সংকট চলছে। এতে মাসের পর মাস কাজের অভাবে বেকায়দায় পড়েছেন নকলনবিশরা। বালাম বইয়ের এই চলমান সংকট কবে দূর হবে, সেটিও সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, দলিল রেজিস্ট্রি হওয়ার পরে বালাম বইয়ে নথিজাত করতে হয়। কিন্তু বালাম সংকটের কারণে দলিল নথিজাত করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে গ্রাহকের মূল দলিল দিতে বিলম্ব করছে রেজিস্ট্রি অফিসগুলো।

নিবন্ধন অধিদপ্তরের সূত্র জানায়, সরকারের রাজস্ব আয়ের যে কয়টি দপ্তর বা সংস্থা আছে, এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন নিবন্ধন অধিদপ্তর। কিন্তু সেই নিবন্ধন অধিদপ্তরের দিকে নজর কমেছে আইন মন্ত্রণালয়ের। দীর্ঘদিন ধরে নিবন্ধন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শকের পদটি অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে চলছে। এছাড়া সারাদেশে সাব-রেজিস্ট্রি ভবন নির্মাণ প্রকল্পের ধীরগতি। আর বালাম বইয়ের সংকট তো কোনোভাবেই সমাধানে আসতে পারছে না আইন মন্ত্রণালয়ের।

বালাম বইতে সম্পাদিত দলিল নথিজাত করা হয়। জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে বালাম বই ও ৫২ ধারা (মানিরিসিট) বই সংকট রয়েছে। বালাম বই সংকট থাকায় ২০২১ সাল থেকেই রেজিস্ট্রিকৃত দলিল সংরক্ষণের কাজ ব্যাহত হচ্ছে। আগে কোনো রকম জোড়াতালি দিয়ে রেজিস্ট্রিকৃত দলিলের ডকুমেন্ট রাখা হতো। এখন দলিল সংরক্ষণের কাজ আটকে আছে। প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ৫০০ দলিল সম্পাদিত হয়। সেই হিসেবে বছরে প্রায় ৬ হাজার দলিল সম্পাদিত হয়। ২ বছরে এই দলিলের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। একই অবস্থা বগুড়া জেলার সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে। দীর্ঘ ৭ থেকে ৮ মাস বালাম বই সরবরাহ না থাকায় অন্তত ৬০০ নকলনবিশ অলস সময় পার করছেন। কাজ না থাকায় তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন। জমি রেজিস্ট্রি হওয়ার পর বালাম বইয়ে তা লিপিবদ্ধ না হওয়ায় জনগণ মূল দলিল পাচ্ছেন না। এতে তাদেরও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

জানা গেছে, রেজিস্ট্রি অফিসে দলিলের মাধ্যমে জমি বিক্রি বা ক্রয় করা হয়। ওই দলিল থেকে তথ্যগুলো বালাম (দলিলের তথ্য লিপিবদ্ধ করার বই) বইয়ে লিপিবদ্ধ করা হয়। নকলনবিশরা এ কাজ করে থাকেন। পরে জমিসংক্রান্ত কোনো তথ্য প্রয়োজন হলে বা জমির নকল তুলতে গেলে বালাম বইয়ে থাকা তথ্য নকলনবিশরা সরবরাহ করে থাকেন।

দলিলের নকল তুলতে আসা এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক শর্তে বলেন, দলিলের তথ্য বালাম বইয়ে উঠেনি। তাই দলিলের নকল তুলতে এসে অতিরিক্ত টাকা গুণতে হয়েছে। বালাম বই না থাকায় দলিলের নকল তোলার জন্য এই অতিরিক্ত টাকা লাগছে।

বগুড়া সদর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের নকলনবিশ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আতাউর রহমান পিন্টু জানান, গত ৭ থেকে ৮ মাস ধরে বালাম বই নেই। তারা অফিসে এসে অলস সময় পার করছেন। কাজ না থাকায় পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাতে বাধ্য হচ্ছে। যশোর জেলায় সাব-রেজিস্ট্রি অফিসগুলোয় বালাম বই সংকট চরমে পৌঁছেছে। যশোর জেলা রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ আবু তালেব মোবাইলে ফোনে বালাই বইয়ের সংকট সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, বালাম বইয়ের সংকট সারাদেশেই, এই সংকট নিরসনে কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

বালাম বই সংকটের বিষয়ে আইন সচিব বলেন, সাব-রেজিস্ট্রি অফিসগুলোর বালাম বই তৈরি করছে বিজি প্রেস। সেজন্য চাইলেই এই মুহূর্তে বাইরে থেকে বালাম কিনতে পারছি না। তবে বিজি প্রেস পর্যাপ্ত বালাম বই সরবরাহ করতে না পারলে খোলা বাজারে টেন্ডারের মাধ্যমে বালাম বই সংগ্রহ করবে আইন মন্ত্রণালয়।

নিবন্ধন অধিদপ্তরের ঊধ্বর্তন এক কর্মকর্তা আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, বালাম বই সংকট হঠাৎ করে হয়নি।

আমি ২০১৪ সালে যখন আইন মন্ত্রণালয়ে যোগদান করি, তখন থেকেই বালাম বই সংকটের বিষয়টি শুনে আসছি। কারণ, বিজি প্রেস পর্যাপ্ত বালাম বই সরবরাহ করতে পারছে না। তবে বাইরে থেকে বালাম বই ছাপাতে গেলে যে মানের কাগজের দরকার, সেটি নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। কারণ, বালাম বই বাঁধাইয়ে বিশেষ কাগজের প্রয়োজন রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, প্রত্যেক মাসে ৩০ হাজার বালাম বইয়ের প্রয়োজন, সেখানে প্রায় ১০ হাজার বালাম বই সরবরাহ করছে বিজি প্রেস। প্রত্যেক মাসে প্রায় ২০ হাজার বালাম বইয়ের সংকট থাকছে। বালাম বই সংকট নিরসনের বিষয়টি নিবন্ধন অধিদপ্তরের একার ওপর নির্ভর করছে না।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত