ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

মুগ্ধতা ছড়িয়ে ঢাকা ছাড়লেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ

হৃদয় জয় করলেন এদেশের মানুষের
মুগ্ধতা ছড়িয়ে ঢাকা ছাড়লেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ

বাংলাদেশে এসে অনেক বেশি বর্ণাঢ্য সময় কাটালেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। সাধারণ মানুষের মতো স্বাভাবিক দৃষ্টিভঙ্গিতে কাটিয়ে দিলেন দুই দিন। ছড়ালেন মুগ্ধতা। হৃদয় জয় করলেন এ দেশের মানুষের। গত রোববার রাতে ঢাকা আসার পর বিমান বন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে রাজধানীর একটি হোটেলে তিনি যোগ দেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় আয়োজিত এক নৈশভোজ সভায়। সেখানে তিনি বক্তব্যও দেন। নৈশভোজ সভা শেষে মধ্যরাতে চলে যান একজন সংগীতশিল্পীর বাড়িতে। সেখানে তিনি গান শুনলেন। তাকে উপহার দেয়া হলো শিল্পীর একতারা। অথচ তিনি সেটি আগে কখনো বাজাননি। তবে চেষ্টা করেছেন সুর তুলতে। আধো আধো সুরে হয়তো গানে দুয়েকটি কলি উচ্চারণেরও চেষ্টা করেছেন। তিনি শিল্পীকে উপহার দিলেন একটি কলম। সেটি পেয়েই শিল্পী বেজায় খুশি। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টকে উপহার দিয়ে এবং উপহার পেয়ে প্রকাশ করলেন উচ্ছ্বাস। গতকাল তিনি ধানমন্ডি-৩২ এ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানে প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান। ঘুরে দেখে বঙ্গবন্ধু যাদুঘর। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ রেহানা ও তার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববিকে সঙ্গে নিয়ে ভবনটি ঘুরে দেখেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট। তার পর চলে যান ধানমন্ডির লেকে। সেখানে খানিকটা সময় তিনি হেটেছেন। কোনো প্রকার জড়তা ছিল না তার মধ্যে। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার কার্যালয়ে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন। শেখ হাসিনার সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন। কয়েকটি চুক্তি সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন। তারপর চলে যান ঢাকার অদূরে তুরাগ নদীতে নৌকা ভ্রমণে। অবশেষে এদেশের মানুষের হৃদয় জয় করে তিনি ঢাকা ছাড়েন। কূটনৈতিক অঙ্গনে ফরাসি প্রেসিডেন্টের এই সফরের অনেক তাৎপর্যপূণ। কেন না, তিনি ভারতে জি-টুয়েন্টি শীর্ষ সম্মেলনে যোগদানের পর ঢাকা সফরে আসলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি তার যে শ্রদ্ধা, তার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে এই সফরের মধ্যদিয়ে। কূটনৈতিক মহল মনে করেন, ফ্রান্সের মতো একজন প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশে এসে এত সংক্ষিপ্ত সফরে স্বাচ্ছন্দ্যময় সময় কাটানোর নজির খুব একটা নেই। অত্যন্ত সাবলীল দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে তিনি বাংলাদেশ সফর করে গেলেন। দেখে গেলেন বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা। দেখে গেলেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ। রাষ্ট্রীয় প্রটোকলের মধ্যদিয়ে তিনি বাংলাদেশ সফরকালে রাতে-দিনের প্রতিটি মুহূর্ত যেভাবে কাটিয়েছেন, সেটি কোনো দেশের প্রেসিডেন্টের জীবনে হয়তো সচরাচর ঘটেনি। বাংলাদেশের প্রতি অফুরন্ত ভালোবোসার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সফরের মধ্যদিয়ে। ম্যাক্রোঁর ঢাকা সফরটি অন্য যেকোনো ভিভিআিইপি সফরের চেয়ে ছিল ভিন্ন আঙ্গিকে। দুই দিনের সফরে রোববার নয়াদিল্লি থেকে তিনি ঢাকা আসেন। লক্ষ্য করার মতো বিষয় হলো, অল্প সময়ের নোটিশে তিনি বাংলাদেশ সফর করছেন। আবার ঢাকায় আসার পর তার কার্যক্রমগুলো সাধারণভাবে অন্য রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধানের রাষ্ট্রীয় সফরসূচির চেয়েও আলাদা। রোববার রাত ৮টার দিকে প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ঢাকায় এসে পৌঁছালে বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রথাগতভাবে প্রটোকল অনুযায়ী ওই রাতেই রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে তিনি অংশ নেন। এরপর তার নিজস্ব কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবে রাত প্রায় ১২টার দিকে চলে যান ধানমন্ডিতে সংগীতশিল্পী, গীতিকার ও বাদ্যযন্ত্রী রাহুল আনন্দের বাসায়। সেখানে অবস্থান করেন প্রায় ২ ঘণ্টা। ওই সময়ে শিল্পীর গান শোনেন। রাহুল আনন্দ যে একতারা বাজিয়ে গান গেয়েছেন সেটি উপহার দেন ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁকে। তিনি সেটি হাতে পেয়ে বাজানোর চেষ্টাও করেন।

গতকাল সকালে বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে যাওয়ার পর ধানমন্ডি লেকের পাড়ে হেঁটেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষ হওয়ার পরে দুপুরে ঢাকা ত্যাগের আগে তুরাগ নদীতে নৌকা ভ্রমণ করেন প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ। ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, ‘সবদিক বিবেচনা করলে এই সফরটি অন্য যেকোনো ভিভিআইপি সফরের থেকে আলাদা। সাধারণভাবে যেকোনো ভিভিআইপি সফরে জাঁকজমক পর্ব বেশি থাকে। কিন্তু এবারে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশকে কাছ থেকে দেখার চেষ্টা করেছেন, যা অন্যদের ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায় না।’ সরকারি কর্মকাণ্ডের বাইরে বিদেশি অতিথিরা যেসব অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে থাকেন, সেগুলো বিদেশিদের আগ্রহের কারণে হয়ে থাকে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত