ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

এক সেলফি পাল্টে দিল প্রেক্ষাপট

আওয়ামী শিবিরে উচ্ছ্বাস ‘পথ’ হারাল বিএনপি

আওয়ামী শিবিরে উচ্ছ্বাস ‘পথ’ হারাল বিএনপি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র কয়েক মাস বাকি। দেশের নির্বাচনে ‘পাখির চোখ’ করে আছে যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নয়ন সহযোগীরা। নির্বাচন নিয়ে নানা ইস্যুতে তৎপর ছিল যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন দৌড়ঝাঁপকে কেন্দ্র করে বেশ ফুরফুরে ছিল মাঠের প্রধান বিরোধীদল বিএনপি। নিার্বাচনকে সামনে রেখে দলটির দাবি আদায়ে সরকারকে চাপে রাখবে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা। তবে বিএনপির সেই আশার গুড়ে বালি পড়েছে। ভারতের নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত জি-টুয়েন্টি সম্মেলন দেশের রাজনীতির মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। জি-টুয়েন্টি সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রনেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জি-টুয়েন্টি সম্মেলনের এক ফাঁকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার কন্যা সায়মা ওয়াজেদের সঙ্গে একটি সেলফি তোলেন। এই সেলফি পাল্টে দিয়েছে রাজনীতির হিসাব-নিকাশ।

সেলফিটি সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর আওয়ামী লীগে চলছে উচ্ছ্বাস। তবে মুখভার বিএনপির। এই সেলফি আওয়ামী লীগ সরকারের জন্য অনেকখানি স্বস্তি ও উচ্ছ্বাসের। কেননা আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সেলফি তোলার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন এবং সেই সেলফি তোলার সংবাদ বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ার পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা উল্লসিত হয়। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ধারণা, বিএনপি একজন নোবেল বিজয়ীর সহায়তা নিয়ে বর্তমান সরকরের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রকে খেপিয়ে তুলেছে। আর সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র আগামী দিনে আওয়ামী লীগের পাশে থাকবে না। বরং আওয়ামী লীগকে চাপে ফেলার জন্য নানা কৌশল অবলম্বন করবে। র‌্যাবের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরোপ ও ভিসানীতি ঘোষণার মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তবে জো বাইডেন আগ্রহী হয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে সেলফি তোলার কারণে বাংলাদেশ সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের এমন মনোভাবের অবসান হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নেতারা এখন অনেকটা চাঙা ও ফুরফুরে অবস্থানে রয়েছেন। তারা রাজপথের রাজনৈতিক দল বিএনপির নেতাদের প্রতি এই ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, যুক্তরাষ্ট্র বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পছন্দ করে। এই সেলফি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষে ভোটারদের প্রভাবিত করবে।

বাইডেন-হাসিনার সেলফিতে আওয়ামী লীগ শিবিরে উচ্ছ্বাস দেখা দিলেও বিপরীত চিত্র ফুটে উঠেছে বিএনপি শিবিরে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বাইডেন-হাসিনা সেলফিতে বিএনপি অনেকটা হাতাশ। তাদের এখন এক দফার আন্দোলন ‘হালে পানি’ পাবে না। আগামী দিনে রাজনৈতিক মাঠে কর্মসূচি দিয়ে সেটা বাস্তবায়ন করার মতো মনোবল তারা কার্যত হারিয়ে ফেলেছে। নিজ দেশের জনগণের ওপর আস্থা হারিয়ে বিএনপি বিদেশি রাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় তারা এই সেফফিতে আশাহত হয়েছে। তারা আবারো ‘পথ’ হারাল।

নির্বাচন ঘিরে চলতি বছরের শুরু থেকেই বাংলাদেশে বিদেশিদের আনাগোনা বেড়ে যায়। দেশের বড় দুই রাজনৈতিক শক্তি আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা। সেইসঙ্গে বেশ কয়েকটি প্রভাবশালী দেশও। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নয়াদিল্লির একটি সেলফি দেখে বিএনপি নেতাদের চোখ-মুখ শুকিয়ে গেছে এবং তাদের রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। কে নিষেধাজ্ঞা দেবে, কে ভিসানীতি দেবে? এসব আমরা ভয় পাই না। আমরা জনগণের সঙ্গে আছি। আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা। আর বিএনপির তো কোনো নেতাই নেই। এখন লাফালাফি বন্ধ হয়ে গেছে। দিন যায়, মাস যায়, দেখতে দেখতে ১৫ বছর, আন্দোলন হবে কোন বছর? বিএনপি মানুষের মনে আস্থা রাখতে পারছে না। ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির আন্দোলনে জনগণ নেই। শুধু আছে নেতাকর্মী। বিএনপি নেতারা কর্মীদের আশ্বাস দিচ্ছে ভয় পেয়ো না আমেরিকা ও ইউরোপ আছে। তারা কর্মীদের কত কথাই না শোনাচ্ছে! অথচ একটি সেলফি দেখে কর্মীরা আর আশা রাখতে পারছে না।

এ বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, ছবি অনেক কথা বলে। এই ছবির ভাষা নিশ্চয়ই সাংবাদিক এবং বোদ্ধা ব্যক্তিরাও বুঝতে পারছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ এবং আগামী দিনে আরো ঘনিষ্ঠ হবে।

তথ্যমন্ত্রী আরো বলেন, জো বাইডেন নিজ হাতে যে সেলফি তুলেছেন তার অর্থ সবাই বোঝেন। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আগেও ভালো ছিল, এখন থেকে সে সম্পর্ক আরো জোরদার হবে। বাংলাদেশ জি-২০ এর সদস্য নয়। তবুও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। উপমহাদেশের আর কোনো রাষ্ট্রনায়ককে ডাকা হয়নি। সেখানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফল আলোচনা হয়েছে।

সেলফি নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন বলেছেন, এটি একটি আনন্দের মুহূর্ত, সবাই আনন্দিত। সেলফি তোলার সময় প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে বেশ উচ্ছ্বসিত দেখা গেছে।

এদিকে বাইডেনের সঙ্গে সেলফি তোলাকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন দল নিজেদের সাফল্য হিসেবে প্রচারের যে চেষ্টা চালাচ্ছে, তার সমালোচনা করছে বিরোধীরা। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সেলফির জন্য কিন্তু র‌্যাবের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা কিংবা ভিসানীতি উঠে যায়নি। জাতীয় নির্বাচন ঠিকমতো না করলে কোনো সেলফিই রক্ষা করতে পারবে না।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশে দ্বাদশ নির্বাচনের আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি ও ড. ইউনূস ইস্যুতে বিএনপিসহ বিরোধী মতাদর্শীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস দেখা দিয়েছিল। তারা আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিবাস্বপ্ন দেখেছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে জো বাইডেনসহ বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সঙ্গে হাস্যোজ্জ্বল ছবিগুলো দেখে বিএনপির নেতাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ শুরু হয়ে গেছে। তাদের ক্ষমতায় যাওয়ার দিবাস্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত