ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

টানেল উদ্বোধনের ক্ষণ গণনা চলছে যান চলাচলে নানা দিকনির্দেশনা

* ভেতরে গাড়ি চলবে ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার বেগে * চলবে না থ্রি হুইলারসহ ছোট যানবাহন
টানেল উদ্বোধনের ক্ষণ গণনা চলছে যান চলাচলে নানা দিকনির্দেশনা

আগামী ২৮ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এজন্য চলছে ক্ষণ গণনা। সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে এখন উচ্ছ্বাস। নদীর দুই পাড়ের চিত্রও পাল্টে যেতে শুরু করেছে। দেশের ইতিহাসে যুগান্তকারী উন্নয়নের দৃষ্টান্ত হতে যাচ্ছে টানেল। আর এই টানেলকেন্দ্রীক বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা বাণিজ্য শুরু করতে উদ্যোক্তার এখনই শুরু করেছেন তোড়জোড়। টানেলটি যান চলাচলের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। গতকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রামে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব টানেল উদ্বোধন উপলক্ষ্যে করে গেছেন প্রস্তুতিমূলক সভা। টানেলের প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশিদ জানান, টানেলের রাস্তা ও অ্যাপ্রোচ সড়কসহ যাবতীয় কাজই শতভাগ শেষ হয়েছে। শুধু বাকি রয়েছে সার্ভিস এরিয়ার কিছু কাজ। শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে। ২৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানেলের উদ্বোধন করবেন।

চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের এক পরিচালক জানান, টানেলটি চট্টগ্রাম নয় বাংলাদেশের অর্থনীতির চিত্র পাল্টে দেবে। যোগাযোগের পাশাপাশি দক্ষিণ চট্টগ্রামের অর্থনৈতিক বিপ্লব ঘটাবে। টানেল চালু হলে পুরোপুরি বদলে যাবে চট্টগ্রামের চিত্র। অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

বাংলাদেশ ও চীন সরকারের যৌথ অর্থায়নে টানেল প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। শুরুতে ৮ হাজার ৪৪৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু নির্মাণসামগ্রীসহ ডলারের দাম বৃদ্ধিতে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৫৩৮ কোটি ৪২ লাখ টাকায়।

প্রকল্পের বিবরণ অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম নদীর তলদেশে নির্মিত এই টানেলের কাজ প্রায় শেষ। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে ১৮ থেকে ৩১ মিটার গভীরে টানেলটি নির্মাণ করা হয়েছে এবং এর মূল দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার। চার লেনবিশিষ্ট দুটি টিউবের প্রতিটির দৈর্ঘ্য হচ্ছে ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার। মূল টানেলের পশ্চিম ও পূর্ব প্রান্তে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক এবং আনোয়ারা প্রান্তে একটি ৭২৭ মিটার ফ্লাইওভার থাকছে। উদ্বোধনের অপেক্ষায় সরকারের মেগা প্রকল্প বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ২৮ অক্টোবর কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে নির্মিত এ টানেলের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরই মধ্যে মূল টানেলের কাজ শতভাগ কাজ শেষ হলেও সংযোগ সড়কসহ অন্যান্য অবকাঠামোগত উন্নয়নের সার্বিক অগ্রগতি শতভাগ শেষ বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক। এদিকে টানেলের উদ্বোধন উপলক্ষ্যে গতকাল সকাল ১০টায় চট্টগ্রাম সর্কিট হাউজে অনুষ্ঠিত হয় প্রস্তুতিমূলক সভা। এতে সভাপতিত্ব করেন সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগের সচিব মনজুর হোসেন। সভায় টানেলে সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়। এ সময় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা টানেলে মোটরসাইকেল ও থ্রি-হুইলার চলাচল ও টানেল কার্যক্রম পরিচালনায় লোকবল নিয়োগের ক্ষেত্রে স্থানীয়দের অগ্রাধিকার দেওয়ার দাবি জানান। টানেলে মোটরসাইকেল ও থ্রি-হুইলার চলাচলে জনপ্রতিনিধিদের দাবির পরিপ্রক্ষিতে সেতু বিভাগের সচিব মনজুর হোসেন বলেন, টানেলে কোন কোন গাড়ি চলবে, তা সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে। টোলও নির্ধারণ করা হয়েছে। আমাদের ডিজাইন অনুযায়ী, টানেলের ভেতর ৮০ কিলোমিটার বেগে গাড়ি চলবে। যেহেতু টানেল কনসেপ্ট আমাদের জন্য নতুন, সেজন্য কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। টানেল অন্য যেকোনো ব্রিজ বা সড়কের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা। সেক্ষেত্রে নিরাপত্তার বিষয়টি আমাদের নিশ্চিত করতে হচ্ছে। সেই ধারণা থেকে এই মূহূর্র্তে বাইক ও থ্রি-হুইলার চালানো টানেলের জন্য নিরাপদ হবে না। এতে টানেলও নিরাপদ থাকবে এবং যারা টানেল ব্যবহার করবেন তারাও নিরাপদ থাকবেন। টানেলের প্রকল্প পরিচালক হারুন উর রশিদ বলেন, টানেলের ইলেক্ট্রোমেকানিক্যাল কাজ শেষে হওয়ার পর প্রি-কমিশনিং ও কমিশনিং দেখা হয়েছে। এছাড়া সবগুলো সিস্টেম কাজ করছে কি না কয়েকবার করে দেখা হয়েছে। মূল টানেলের কাজ শতভাগ শেষ। তবে পুরো প্রকল্পের কথা বললে অগ্রগতি ৯৮ দশমিক ৫ শতাংশ। যে ১ দশমিক ৫ শতাংশ কাজ বাকি রয়েছে তা চলাচলে জন্য কোনো সমস্যা সৃষ্টি করবে না। অ্যাপ্রোচ রোড, সার্ভিস এরিয়া, পুলিশের ফাঁড়ি নির্মাণ ও ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণের কার্যক্রম চলছে। সভায় পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে টানেলে জরুরি মুহূর্তে সেবা দেওয়ার জন্য পুলিশের গাড়ি টোল ফ্রি চলাচলে অনুমতি চাওয়া হয়। সভায় আরো বক্তব্য দেন বিভাগীয় কমিশন তোফায়েল ইসলাম, পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়, ডিআইজি নুরে আলম মিনা, জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহাতাব উদ্দিন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, টানেলর প্রকল্প পরিচালক হারুন উর রশিদ, আনোয়ারা উপজেলা চেয়রাম্যান মো. নজরুল ইসলাম। প্রসঙ্গত, ৩ দশমিক ৪৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এ টানেলটির নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চীনা প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি। চট্টগ্রাম শহরপ্রান্তের বাংলাদেশ নেভাল অ্যাকাডেমির পাশ দিয়ে শুরু হওয়ায় এই টানেল নদীর দক্ষিণ পাড়ের আনোয়ারা প্রান্তের চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড এবং কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কারখানার মাঝামাঝি স্থান দিয়ে নদীর দক্ষিণ প্রান্তে পৌঁছাবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত