সাহসী শিশু জোনায়েদ তোমাকে ‘অভিনন্দন’

পাসপোর্ট ভিসা ও বোডিং পাস ছাড়াই তুমি হলে বিমানযাত্রী!

প্রকাশ : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  শেখ কুতুব আলী

সাহসী বালক জোনায়েদ তোমাকে অভিনন্দন! পাসপোর্ট ভিসা ও বোডিং পাস ছাড়াই তুমি হলে বিমান যাত্রী! কোথায় তুমি এমন সাহস পেলে, কে তোমাকে এমন দুঃসাহসিক স্বপ্ন দেখাল। তাকেও ধন্যবাদ। কন না, তুমি যে কাজটি করেছো সেটি দুঃসাহসিক। বাংলাদেশের বিমানবন্দরের ভেতরে গিয়ে তোমার মতো ১০ বছরের কোনো শিশুর পক্ষে এমন কাজ করা সম্ভব হলেও বিশ্বের অন্য কোনো দেশের বিমানবন্দরে সেটি সম্ভব কি না, তা নিয়ে গবেষণা করা যেতে পারে। জোনায়েদ তোমার এ কাজের সঙ্গে কিছুদিন আগে বিমানবন্দর থেকে ৫৫ কেজি স্বর্ণ গায়েব হওয়ার ঘটনার অনেক মিল আছে। ওই স্বর্ণ উদ্ধার কিংবা এখন কোথায় রয়েছে, সে ব্যাপারে কোনো তথ্য গণমাধ্যম এখনো জানতে পারেনি। তবে তুমি অল্প বিড়ম্বনা পাড়ি দিয়ে চাচার সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে আনন্দময় সময় কাটাচ্ছো, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তোমার মতো সাহসি বালককে আমরা কীভাবে দুঃসাহসিক কাজে লাগাতে পারি, সেই চিন্তাভাবনা করার সময় আমাদের এসেছে। তুমি খেলারছলে কিংবা খানিকটা কৌতূহলি হয়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে নিরাপদ ও সুরক্ষিত একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মধ্যে যে কাণ্ডটি ঘটালে, সেটি অনেকের পক্ষে সম্ভব নয়। তোমার বয়স কম বলে তোমাকে তোমার চাচার জিম্মায় মুক্তি দেয়া হয়েছে। তবে তোমার এই কাজটি আমাদের বিমানবন্দর নিয়ে অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। এসব প্রশ্ন যদি বিমান কর্তৃপক্ষের কোনো কর্মকর্তার মনে না জাগে, তাহলে তুমি বেঁচে যাবে। বিমান কর্তৃপক্ষ তোমার বিষয়টি হালকা করে মনে করলেও এদেশের সচেতন মানুষ যারা স্পর্শকাতর এমন একটি কেপিআই প্রতিষ্ঠান নিয়ে ভাবেন তাদের মনে অনেক প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তারা তোমার দুঃসাহসিক অভিযানে আতঙ্কিত ও ভীত। জানি না, তুমি কার আসনে, কী পোশাকে বিমানে বসেছিলে। তবে যদি কোনো বিদেশি যাত্রী ওই আসনের টিকিট কেটে বিমান উঠে থাকেন, তাহলে তিনি তার নিজ দেশে গিয়ে তা সবার সঙ্গে শেয়ার করবেন। পরের আসনে বসার বিড়ম্বনা কি, সেটা তুমি বড় হয়ে একবার বাস কিংবা ট্রেনে উঠে পরীক্ষা করতে পার। প্রতিনিয়ত বাস কিংবা ট্রেনে অন্যের আসনে বসে পড়ার খেসারত কীভাবে দিতে হয়, সেই অভিজ্ঞতা তোমার হয়নি। আর সে কারণে তুমি বিমানে আরোহন করে অপরে আসনে বসে বেশ আয়েশ করে খানিকটা সময় কাটালে, এটাই বা কম কিসের। মানুষ লাখ লাখ টাকা ব্যয় করে বিদেশ যেতে বিমান ভ্রমণ করেন, তবে তোমাকে বিমান বন্দরের কোনো পর্যায়ের নিরাপত্তা বেষ্টনি আটকায়নি।

কেমন ভাগ্য তোমার বাবা : তোমাকে জীবনে একবার হলেও দেখতে ইচ্ছে করে। তুমি বাংলাদেশের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটিতে বিনা বাধা, বিনা টিকিট, বিমা পাসপোর্ট কিংবা বিনা টাকায় ঢুকে পড়ে প্লেনের আসন গ্রহণ করলে তুমি আসলেই ভাগ্যবান। তবে মনে হচ্ছে, তোমার এ ঘটনার পর বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ হয়তো কিছুটা নড়েচড়ে বসবে। হয়তো কিছু নির্দেশনা দেবে। আবার যা তাই-ই হবে। মনে করছি তোমাকে সঙ্গে নিয়ে অন্যরাও আগামীতে তোমার মতো বিমানবন্দরে ঢুকে এমনি অসম্ভবকে সম্ভব করার সাহস পাবে। তোমার মোবাইল ফোন থাকলে তাতে ফেসবুক খুলে দেশবাসী ও তোমার শুভানুধ্যায়ীদের জানিয়ে দাও। ‘আমি পেরেছি তুমিও পারবে’। তোমাকে নিয়ে গবেষণা হোক। তোমার ভেতরে যে শক্তি, সাহস ও হিম্মত জাগ্রত হয়েছে, তুমি তাতে ‘হিরো’ বনে গেছো। তবে আমাদের প্রশাসনিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে আর যাতে কোনো ‘হিরোর’ অভিভাব না ঘটে সেই কামনাই রইল।

এই শিশুটিকে নিয়েই হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তোলপাড় শুরু হয় গত সোমবার রাতে। সে সময় জোনায়েদ একাই হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কুয়েত এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে উঠে। কিছু সময় উড়োজাহাজের ভেতর ঘুরে একটি আসনে বসে পড়ে। তবে যে ব্যক্তি এই আসনের টিকিট কেটেছেন, তিনি গিয়ে দেখেন তার আসনে একটি শিশু বসে আছে। ওই শিশুকে তার বাবা-মার সঙ্গে নির্দিষ্ট আসনে বসার জন্য বলা হয়। কিন্তু শিশুটি কোনো কথা বলছিল না। বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের জানান ওই যাত্রী। তখন এই শিশুর অভিভাবক কে, তা খোঁজা হয়। উড়োজাহাজের যাত্রীর সংখ্যাও গণনা করা হয়। এ সময় তারা জানতে পারেন এই শিশু পাসপোর্ট, ভিসা, বোডিং পাস না নিয়ে একাই বিমানের ভেতর ঢুকে পড়েছে। পরে শিশুটিকে প্লেনের দরজা খুলে বিমানবন্দরের এভিয়েশন সিকিউরিটির (এভসেক) কাছে দেয় কুয়েত ওয়ারওয়েজ। গত মঙ্গলবার সকালে শাহজালাল বিমানববন্দর কর্তৃপক্ষ আবার শিশুটিকে বিমানবন্দর থানায় হস্তান্তর করে। বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত (ওসি) আজিজুল হক মিয়া জানান এই শিশুটির নাম জোনায়েদ মোল্লা (১০)। তার তার গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে। ঘটনার পর তার গ্রামের বাড়িতে খবর পাঠানো হয়েছিল। পরে তার চাচা মো. ইউসুফ মোল্লা থানায় আসে। তার জিম্মায় বাচ্চাটিকে দেওয়া হয়েছে। ওসি জানান, জোনায়েদ মোল্লার বাবার নাম ইমরান মোল্লা। পেশায় কৃষক। তার বাবা-মার মধ্যে বিচ্ছেদ হয়ে গেছে। এখন কেউ বাচ্চাটির খোঁজখবর রাখেন না।