ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

লিবিয়ায় ভয়াবহ বন্যা

নিহত ছাড়াল ৫ হাজার নিখোঁজ ১০ হাজার

নিহত ছাড়াল ৫ হাজার নিখোঁজ ১০ হাজার

উত্তর আফ্রিকার দেশ লিবিয়ার দেরনা শহরে ভয়াবহ বন্যার পর নিখোঁজ হাজার হাজার মানুষের খোঁজে অনুসন্ধান কাজ গতকাল তৃতীয় দিনে গড়িয়েছে। ভয়াবহ এই বন্যায় হাজার হাজার মানুষ এরইমধ্যে নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করা হয়েছে। এমনকি মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এছাড়া বন্যার পর আরো প্রায় ১০ হাজার মানুষ নিখোঁজ রয়েছে বলে জানানো হয়েছে। গতকাল এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

আফ্রিকার এই দেশটির পূর্বাঞ্চলে গত সোমবার আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় ড্যানিয়েল। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সেখানে প্রবল বৃষ্টিপাত হয় এবং পরে বৃষ্টির পানির চাপে দেরনা শহরের কাছে নদীর ওপর দেওয়া দুটি বাঁধ ধসে পড়ে। মূলত সেই বাঁধের পানির কারণেই সেখানে বিপর্যয়কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। বাঁধ ধসে পড়ার পর ভূমধ্যসাগরীয় শহর দেরনার এক-চতুর্থাংশ বা তারও বেশি অংশ কার্যত ধ্বংস হয়ে গেছে এবং বাসিন্দাদের পাশাপাশি সেখানকার অনেক ভবনও ভাসিয়ে নিয়ে গেছে পানির তোড়ে। লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় কর্মকর্তারা বলছেন, এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৫ হাজারের বেশি। এছাড়া এখনো প্রায় ১০ হাজার মানুষ নিখোঁজ বলে অনুমান করা হচ্ছে। নিখোঁজদের অনেককে বন্যার পানি সমুদ্রে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাঁধের পানির কারণে সৃষ্ট বন্যা হাজার হাজার মানুষকে সমুদ্রের দিকে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। এই বন্যাটিকে অনেকে সুনামির মতো আখ্যায়িত করেছেন। বন্যার পানির তোড়ে অনেক এলাকাই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। সমুদ্রের পানিতে যেসব মানুষ ভেসে গেছেন তাদের মরদেহ পানি থেকে উদ্ধার করতে হিমশিম খাচ্ছে সাহায্যকারীরা।

ভয়াবহ এই বন্যার পানিতে ডুবে বা ভেসে গিয়ে এখন পর্যন্ত ৫ হাজার ৩০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে লিবিয়ার স্বঘোষিত পূর্বাঞ্চলের সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে প্রাণহানির এ সংখ্যাটি নিশ্চিত করতে পারেনি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো। অবশ্য লিবিয়া রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত থাকায় সেখানে উদ্ধার অভিযান পরিচালনাও বেশ জটিল কাজ হয়ে উঠেছে। লিবিয়ার আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকার দেশটির পশ্চিমে ত্রিপোলিতে অবস্থিত। এদিকে দেরনা শহরটি পূর্বাঞ্চলীয় এলাকায় অবস্থিত যেখানে আরেকটি সমান্তরাল প্রশাসন কাজ করে। আর এই প্রশাসন কমান্ডার খলিফা হাফতারের লিবিয়ান ন্যাশনাল আর্মির নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ত্রিপোলিভিত্তিক সরকারের প্রধান এবং লিবিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবদুল হামিদ আল-দাবিবাহ গত মঙ্গলবার বলেছেন, বন্যা নজিরবিহীন বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে। এছাড়া জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন লিবিয়ার প্রেসিডেন্ট কাউন্সিলের প্রধান মোহাম্মদ আল-মেনফি।

৬ বাংলাদেশির মৃত্যু : সর্বশেষ পাওয়া তথ্য মতে, ঘূর্ণিঝড় ড্যানিয়েলের প্রভাবে লিবিয়ার দারনা শহরে বসবাসরত ছয় বাংলাদেশি নাগরিক মৃত্যুবরণ করেছে। তাদের চারজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন রাজবাড়ী জেলার শাহীন ও সুজন এবং নারায়ণগঞ্জ জেলার মামুন ও শিহাব। তবে দূতাবাসের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত আরো দুইজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া সম্ভব হয়নি। এছাড়া দারনা শহরে বসবাসরত আরো কিছুসংখ্যক বাংলাদেশি নিখোঁজ থাকার আশঙ্কা করা হচ্ছে। গতকাল বুধবার লিবিয়াতে বাংলাদেশ দূতাবাসের এক ফেসবুক পোস্টে একথা জানানো হয়। পোস্টে জানানো হয়, এ পরিপ্রেক্ষিতে ঘূর্ণিঝড় ড্যানিয়েলের প্রভাবে লিবিয়ার বিভিন্ন শহরে ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসীদের তথ্য জানতে এবং ঘূর্ণিঝড়ে নিখোঁজ প্রবাসীদের তথ্য জানানোর জন্য দূতাবাসের প্রথম সচিব (শ্রম) মো. রাসেল মিয়ার (মোবাইল নম্বর : +২১৮৯১৮৫৮০৯৮৯) সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ জানানো যাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় ড্যানিয়েল ও বন্যার তাণ্ডবে লিবিয়ার পূর্বাঞ্চল বিশেষত দারনা, সাহাত, আল-বাইদা, আল-মার্জ শহর ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অতি বৃষ্টির কারণে দারনা বাঁধের ভয়াবহ ধসে সৃষ্ট বন্যায় কয়েক হাজার মানুষ নিহত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এছাড়া বর্তমানে আরো হাজার হাজার মানুষ নিখোঁজ রয়েছে। এমতাবস্থায় দারনা শহরে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের সর্বশেষ অবস্থা জানার জন্য দূতাবাসের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং বাংলাদেশ কমিউনিটির সদস্যসহ উদ্ধার কার্যক্রমে নিয়োজিত স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে।

ত্রাণ পাঠাচ্ছে বাংলাদেশ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুসারে বাংলাদেশ সরকার ঘূর্ণিঝড় ‘ড্যানিয়েল’ এবং বন্যায় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত পূর্ব লিবিয়ার জনগণের জন্য মানবিক সহায়তা হিসাবে ত্রাণসামগ্রী পাঠানোর পদক্ষেপ নিয়েছে। বিশ্বের কাছে লিবিয়ার প্রেসিডেন্টের মানবিক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশনা দিয়েছেন বলে গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। লিবিয়ার বন্যাকবলিত মানুষের জন্য ওষুধ ও শুকনো খাবারসহ ত্রাণসামগ্রী বহনকারী একটি সি-১৩০ বিমান যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ঢাকা থেকে রওনা হবে এবং লিবিয়ার স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সে দেশের তোব্রুক বিমানবন্দরে বাংলাদেশ সরকারের পাঠানো ওই ত্রাণসামগ্রী গ্রহণ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। ঝড় ও বন্যায় লিবিয়ায় ৫ সহস্রাধিক লোকের মৃত্যুর আশঙ্কা করা হচ্ছে এবং আরো হাজার হাজার মানুষ এখনো নিখোঁজ রয়েছে। এদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন লিবিয়ার এই প্রাণঘাতি প্রাকৃতিক দুর্যোগে সে দেশের জনগণ ও সরকারের প্রতি শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত