পুতিন-কিম বৈঠকে অস্ত্র বিক্রি নিয়ে আলোচনা

সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অঙ্গীকার

প্রকাশ : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আন্তর্জাতিক ডেস্ক

রাশিয়ার পূর্বাঞ্চলের আমুরে অবস্থিত ভোসতোচনি রকেট ও মহাকাশ কেন্দ্রে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন ও উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন। তাদের এই বৈঠককে কেন্দ্র করে এলাকাটিতে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। উত্তর কোরিয়াকে স্যাটেলাইট তৈরিতে কিমকে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন পুতিন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় নিউজ এজেন্সি। এ সময় অস্ত্র চুক্তি নিয়ে আলোচনা হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আনুষ্ঠানিক বৈঠকে ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন কিম জং। তিনি পুতিনকে বলেছেন, ‘আধিপত্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে রাশিয়া তার সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা রক্ষায় লড়াইয়ে নেমেছে। উ. কোরিয়া পুতিনের যে কোনো সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানায়।’

গেল আগস্টে ভ্লাদিমির পুতিন ও উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের চিঠি বিনিময় হয়েছিল। চিঠিতে দুই নেতা দীর্ঘদিনের দ্বিপক্ষীয় কৌশলগত সম্পর্ক জোরদারের অঙ্গীকার করেছিলেন। সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে একসঙ্গে লড়াই চালানো এবং সাম্রাজ্যবাদ ধ্বংসের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। নতুন করে পুতিনকে বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিলেন কিম। গতকাল সকালে কসমোড্রোমে কিমকে স্বাগত জানান পুতিন। ২০১৯ সালের পর তাদের মুখোমুখি দেখা। প্রথমে পুতিন কিমকে বলেন, ‘আপনার ব্যস্ত সময় সূচিতেও আমাদের আমন্ত্রণ গ্রহণের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আপনাকে দেখে আমি খুবই খুশি হয়েছি। দুই দেশের মধ্যে কিছু স্পর্শকাতর ইস্যুতে আলোচনা এবং চুক্তি হবে বলে আগেই জানিয়েছে ক্রেমলিন। তবে বিষয়গুলো প্রকাশ করা হবে না বলে জানান ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ। অস্ত্র নিয়ে কোনো চুক্তি হচ্ছে কি না, এ বিষয়ে পেসকভ মন্তব্য করেননি। যুক্তরাষ্ট্র ধারণা করছে, ইউক্রেন যুদ্ধে হামলার গতি বাড়াতে উত্তর কোরিয়া থেকে অস্ত্র নিতে চাইছেন পুতিন। এ জন্য কিমের সঙ্গে তার একটি গোপন অস্ত্র চুক্তি হতে যাচ্ছে। দুই নেতার শীর্ষ সম্মেলনে ছোট বোন কিম ইয়ো জং’কে সঙ্গে নিয়ে গেছেন উত্তর কোরিয়ার নেতা। সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতেই তাকে রাখা হয়েছে বলে মনে করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা। রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু গত মাসে পিয়ংইয়ং সফরের সময় অস্ত্র প্রদর্শন করা হয়। কারখানায় পরিদর্শন করেন তিনি। তখন থেকেই সম্ভাব্য অস্ত্র ক্রয়ের বিষয়টি সামনে এসেছে।

উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে পূর্ব উপকূলে দুইটি স্বল্প পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে উত্তর কোরিয়া। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম আরআইএ নভোস্তি জানিয়েছে, গতকাল সকালে কিম রাশিয়ার পূর্ব আমুর অঞ্চলের কসমোড্রোমে পৌঁছেছেন। এর আগেই সেখানে যান পুতিন। ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে। এতে দেখা যায়, পুতিন ও কিম হাত মেলাচ্ছেন। পুতিন বলেছেন, উত্তর কোরিয়ার নেতাকে পেয়ে আমি খুশি। অন্যদিকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য পুতিনকে ধন্যবাদ দিয়েছেন কিম জং উন। কিমের এই সফরে সঙ্গী হয়েছেন উত্তর কোরিয়ার সামরিক ও অস্ত্র ইন্ডাস্ট্রির কর্মকর্তারা। বৈঠকে অস্ত্র বিক্রির বিষয়টি গুরুত্ব পাবে বলে মনে করা হচ্ছে। গত কয়েক দিন ধরেই জল্পনা ছড়িয়েছে ইউক্রেন যুদ্ধে ব্যবহারের জন্য উত্তর কোরিয়ার কাছ থেকে অস্ত্র কিনতে যাচ্ছে রাশিয়া। উত্তর কোরিয়ার বার্তা সংস্থা কোরিয়ান সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সি (কেসিএনএ) নিশ্চিত করে, একটি সামরিক ট্রেনে করে রাশিয়ার উদ্দেশে রওনা দেন কিম জং উন। এদিকে প্রায় দুই দিন ট্রেনে চড়ে উত্তর কোরিয়া থেকে রাশিয়ায় এসে পৌঁছান কিম জং উন। রুশ প্রেসিডেন্টের দপ্তর ক্রেমলিনের মুখমাত্র দিমিত্রি পেসকোভ দুই নেতার বৈঠক সম্পর্কে বলেছিলেন, তাদের মধ্যে ‘খুবই স্পর্শকাতর’ বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। এছাড়া আলোচনায় থাকবে দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিষয়ও। এদিকে পুতিন এবং কিমের এ বৈঠকটি একটি দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক বৈঠক হিসেবে বলা হলেও, পশ্চিমারা দাবি করছে, মস্কোর সঙ্গে অস্ত্র চুক্তি করতে রাশিয়ায় গেছেন কিম। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের হুঁশিয়ারি উপেক্ষা করে গত মঙ্গলবার সকালে ব্যক্তিগত বুলেট প্রুফ টেনে করে প্রায় ২৪ ঘণ্টা পর রাশিয়া পৌঁছান উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন। দুই দেশের নেতাই একপ্রকার পশ্চিমা হুঁশিয়ারিকে উপেক্ষা করে উল্টোপাল্টা বার্তা দিয়েছেন। রাশিয়ায় কিম পুতিনকে বলেছেন, তিনি নিশ্চিত রাশিয়ান সেনা এবং রাশিয়ান জনগণ শয়তানের বিরুদ্ধে বিজয় অর্জন করবেন। আল জাজিরার লাইভ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুই নেতার মধ্যে বৈঠক চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা ধরে হয়েছে এবং দুই নেতাই তাদের বন্ধুত্ব ও দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও জোরদারের অঙ্গীকার করেছেন। সূত্র : বিবিসি ও আল জাজিরা