সুশীল সমাজের সঙ্গে ইসির বৈঠক

পরামর্শের নামে ক্ষোভ প্রকাশ আলোচকদের

প্রকাশ : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আরিফুল ইসলাম

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য এবং অংশগ্রহণমূলক করতে দেশের সুশীল সমাজের সঙ্গে বৈঠক করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বৈঠকে বক্তারা, পরামর্শের নামে ইসির প্রতি নিজেদের ক্ষোভ ঝেড়েছেন। তবে প্রত্যেকের কথা শুনে আগামীতে সে অনুযায়ী নিজেদের কিছু ভুল শোধরানোর কথা জানিয়েছে সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠানটি।

সূত্র জানায়, নভেম্বরের তফসিল দিয়ে ডিসেম্বরের শেষে অথবা আগামী বছরের জানুয়ারির শুরুতে নির্বাচন করতে চায় ইসি। ভোট সুষ্ঠু ও গ্রহণ যোগ্য করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। এর আগে সব অংশীজনের সঙ্গে বৈঠক করলেও দ্বিতীয়বারের মতো আবারও সুশীল সমাজের পরামর্শ নিচ্ছে ইসি। আগামীতে আবারও রাজনৈতিক দলকে সংলাপের জন্য আমন্ত্রণ করতে পারে তারা। গতকাল সকালে নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি নিয়ে ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন : প্রত্যাশা ও বাস্তবতা’ শীর্ষক কর্মশালার আয়োজন করে ইসি। এ সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, আমরা সামনের দিকে তাকাতে চাই। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে জনগণের প্রত্যাশা জানতে চাই। সেটা পারলে আমরা সমৃদ্ধ হবো।

অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া অতিথিদের উদ্দেশে সিইসি বলেন, আমরা কিছুটা নতুন আঙ্গিকে বিষয়টা উপস্থাপনের চেষ্টা করেছি। যারা রাজনীতিতে সম্পৃক্ত নন, বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়, তারা বিদগ্ধজন। তাদের কাছ থেকে জনগণের প্রত্যাশাটা জানতে চাই। আপনাদের মাধ্যমে যতদূর সম্ভব উঠে আসে। প্রত্যাশার বিপরীতে অনুকূল-প্রতিকূল বাস্তবতা রয়েছে। আপনারা একাডেমিক আলোচনা করলে আমাদের জন্য বুঝতে সুবিধা হবে। আমরা সমৃদ্ধ হবো।

সিইসি বলেন, আমরা জানি, আমাদের দেশে রাজনীতি তীক্ষèভাবে বিভক্ত। এতে রাজনৈতিক বিতর্ক উপস্থাপন হলে আলোচনাগুলো খুবই ধারালো ও আক্রমণাত্মক হয়ে থাকে। আজ সেদিকে যাব না। আমরা সামনের দিকে তাকাতে চাচ্ছি। অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, বিদেশি রাষ্ট্রগুলো বাংলাদেশের নির্বাচনের সঙ্গে নানাভাবে সম্পৃক্ত হয়েছে। আমরাই এদের ডেকে এনেছি। পৃথিবীর বিভিন্ন রাষ্ট্র আমাদের নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। নির্বাচন ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ নিয়ে তিনি বলেন, বিদেশি রাষ্ট্রগুলো আমাদের নির্বাচন ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ করছে। কেননা, তাদের আমরা ডেকে এনেছি। যদি আমরা ঠিক থাকতাম তাহলে এমনটা হতো না। পৃথিবীর বিভিন্ন রাষ্ট্র আমাদের দিকে তাকিয়ে রইছে, আমরা ব্যর্থ তাহলে এর মাশুল দিতে হবে। আলী ইমাম মজুমদার আরো বলেন, নির্বাচন কমিশন তাদের হাতে ক্ষমতা থাকার পরও গাইবান্ধা নির্বাচনে কোনো ব্যবস্থা নেয় নেই। সেখানে পক্ষপাতের অভিযোগ করা হলে তা ভুল হবে না। পরামর্শগুলো গ্রহণ করে নাই। সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত বলেছেন, জামালপুরের ডিসি বলেছেন আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতায় আনতে হবে। এই খবর সব পেপারে দেখলাম। এমন ডিসিদের নিয়ে নির্বাচন করতে হবে বিষয়টি এমন নয়। এদের দিয়ে বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনও হবে না।

নির্বাচন কমিশনারদের উদ্দেশ্যে সাবেক এই কমিশনার বলেন, এসব ডিসিদের বিরুদ্ধে আপনাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে কী করবেন। কীভাবে কাজ করবেন। একজেলায় চারজন রিটার্নিং কর্মকর্তা দিয়ে নির্বাচন করাতে পারবেন। একই ডিসিদের রিটার্নিং করাতে হবে বিষয়টি এমন নয়।

পর্যবেক্ষক নিয়ে সাবেক নির্বাচন কমিশনার বলেন, কয়েকদিন আগে মালদ্বীপে ভোট হয়েছে বড় বড় পর্যবেক্ষক সেখানে ছিল। ভোটে কখনো অভিযোগ হয়নি। আপনারা একা সিদ্ধান্ত নেবেন, কোনো পলিটিক্যাল পার্টির কথা শুনবেন না। অতীত ভুলগুলো সুধরে নেবেন।

তিনি আরো বলেন, আমি বারবার বলছি ভোটে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে নিয়োগ নিয়ে। ঢাকায় দেখলাম একটা প্রার্থীকে মারা হলো এটা কীভাবে হলো। পলিটিক্যাল পার্টি সেন্টার পাহারা দেয়। কার ভোটার কে এরা জানে? প্রত্যেক সেন্টারে পাহারা দেয় এদের শনাক্ত করে পদক্ষেপ নিতে হবে। কারণ এদের কারণে ভোটার ভোটকেন্দ্রে যেতে পারে না।

মুখে বললেও বাস্তবে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কোনো ক্ষমতা নাই বলে মন্তব্য করেছেন, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, আমরা মুখে শুধু বলি নির্বাচন কমিশন ক্ষমতাবান; কিন্তু বাস্তবে কিছুই নাই। সংকটটা এতো কঠিন সব দায় কমিশনের উপর দিয়েও লাভ নাই।

সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান বলেছেন, বাস্তবতা আপনাদের অনুকূলে নেই। সরকার না চাইলে কমিশনের পক্ষে ভালো নির্বাচন সম্ভব না। এখনও গাইবান্ধা নির্বাচনে দায়িদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় নাই।

প্রথম আলোর যুগ্মসম্পাদক সোহরাব হাসান বলেছেন, নির্বাচন কমিশন ভোটার ও ভোটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন কীভাবে। নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক হতে হবে। প্রধান চ্যালেঞ্জ সবাইকে নিয়ে নির্বাচন করা। সরকারকে এমন চাপ দিতে হবে যাতে, সবদল নির্বাচনে আসবে। গণতন্ত্র না থাকলে এমন নির্বাচন অর্থহীন। ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেছেন, বাস্তবতা হচ্ছে নির্বাচন ব্যবস্থা বিশ্বাসহীনতায় রয়েছে। একটা ভালো নির্বাচন হলেই যে সব সমস্যা সমাধান হবে তা নয়। তবে ভালো নির্বাচন সমাধানের সূচনা হতে পারে।