ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

জাতীয় স্থানীয় সরকার দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

মানুষের আস্থা অর্জন করে এগিয়ে যেতে হবে জনপ্রতিনিধিদের

মানুষের আস্থা অর্জন করে এগিয়ে যেতে হবে জনপ্রতিনিধিদের

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জনপ্রতিনিধিদের সোচ্চার হওয়ার আহবান পুনর্ব্যক্ত করে তৃণমূলের মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করে এবং তা ধরে রেখে তাদের এগিয়ে যাবার আহ্বান জানিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা তৃণমূলের মানুষ জনগণের ভোটে নির্বাচিত, জনগণের সেবক। জনগণের কল্যাণে কাজ করা আপনার আমার সবারই দায়িত্ব। আর এই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে মানুষের সেবা করে এবং মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করে আপনারা এগিয়ে যাবেন।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল তার সরকারি বাসভবন গণভবনে প্রথমবারের মতো আয়োজিত ‘জাতীয় স্থানীয় সরকার দিবস ২০২৩’ উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন। গণভবনে সারাদেশের স্থানীয় সরকারের পাঁচটি স্তরের জনপ্রতিনিধিদের বিশাল মিলনমেলায় তিনি বলেন, ‘মানুষ একবার যখন আপনাদের ভোট দিয়েছে তারা আবারও যেন আপনাকে ভোট দিতে পারে, আপনাদের জনগণের সেই আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আজকের যে উন্নয়ন সেটা দীর্ঘদিনের কষ্টের ফসল। এটা যেন কেউ আর নষ্ট করতে না পারে। কারণ ’৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত যতটুকু এগিয়ে ছিলাম বিএনপি জামায়াত জোট আবার সেটা পিছিয়ে দিয়েছিল।’

তিনি বলেন, মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আপনাদের দাঁড়াতে হবে। কেউ যেন এই মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ত না হয়, সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।

তার সরকার ৫৬০টি মডেল মসজিদ করে দিচ্ছে এবং আমাদের মন্দিরগুলো সংস্কারেও অর্থ দিচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মসজিদ, মন্দির, গীর্জা বা প্যাগোডা যেটার যেখানে যা প্রয়োজন, আমরা তা করে দেব। আমাদের যারা অন্যান্য সম্প্রদায় তাদের সাথে এক হয়ে চলব, কেন না একই সাথে আমরা যুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করেছি।

বিএনপি’র অগ্নিসন্ত্রাস ও উপাসনালয়ে আগুন দেওয়ার মতো ঘটনার উল্লেখ করে জনপ্রতিনিধিদের তিনি এই বিষয়গুলো ভালোভাবে দেখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, এই দেশ সবাই মিলে স্বাধীন করেছি। এই দেশ অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ এবং সেভাবেই এগিয়ে যাবে।

বিদেশগামীরা যাতে তার সরকারের করে দেয়া প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক প্রদত্ত সুবিধা নিয়ে বিদেশে যেতে পারেন এবং দালালের খপ্পড়ে পড়ে সর্বস্বান্ত না হন, সেদিকেও লক্ষ্য রাখার আহ্বান জানান।

সারাদেশের তার সরকারের প্রতিষ্ঠিত কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর চিকিৎসাব্যবস্থা সম্পর্কে খোঁজ-খবর রাখার জন্য জনপ্রতিনিধিদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি উল্লেখ করেন, বিএনপি-জামায়াত জোট ২০০১ সালে সরকারে এসে এগুলো বন্ধ করে দিয়েছিল। তিনি দৃঢ় প্রত্যয়ের সঙ্গে বলেন, তার সরকার যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রভূত উন্নয়ন করেছে আর আগামীবার ক্ষমতায় আসতে পারলে আর কোনো গ্রামে কোনো রাস্তা যেগুলো কাঁচা রয়েছে, সেগুলো আর কাঁচা থাকবে না।

তিনি বলেন, ২০০৯ থেকে ২০২৩ সালে বাংলাদেশের যে অগ্রযাত্রা, এটা যেন অব্যাহত থাকে। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলে জাতিসংঘ ঘোষিত এসডিজি বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিশ্বদরবারে আরো উচ্চ আসনে নিয়ে গিয়ে বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাব বলেও এ সময় তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা ব্যর্থ হয় নাই, আমরা ব্যর্থ হতে দেব না। আমাদের বাংলাদেশ, আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি এগিয়ে যাবে।

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মুহম্মদ ইবরাহিম স্বাগত বক্তব্য দেন।

বক্তব্য দেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, রাজশাহী সিটি কর্পোারেশন মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী, খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীসহ স্থানীয় সরকারের পাঁচটি স্তরের বিভিন্ন জনপ্রতিনিধিরা।

সরকার প্রতি বছর ২৫ ফেব্রুয়ারিকে ‘জাতীয় স্থানীয় সরকার দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। ‘সেবা ও উন্নতির দক্ষ রূপকার, উন্নয়নে-উদ্ভাবনে স্থানীয় সরকার’- এই স্লোগান নিয়ে দিবসটি উদযাপন করা হচ্ছে। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর জবাবদিহিতা, কর্মতৎপরতা, গুরুত্ব ও সর্বোপরি জনসচেতনতা তৈরি এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে জনগণের সম্পৃক্ততা বাড়াতে দিবসটি উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ বছর প্রথম বর্ষ হিসেবে এ কর্মসূচি ১৪ সেপ্টেম্বর পালিত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী ডেঙ্গু প্রতিরোধে সবার সচেতনতার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।

তিনি বলেন, এখন মশার উপদ্রব, ডেঙ্গুর উপদ্রব। এই ক্ষেত্রে আমি মনে করি, সবারই কিছু করণীয় আছে। আপনারা নিশ্চয়ই যার যার নিজের ঘরবাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখবেন এবং মশার হাত থেকে বাঁচতে হলে মশারির ব্যবস্থা করতে হবে। নিজেদের সচেতন হতে হবে, শুধু মশা মেরেই শেষ করা যাবে না। নিজেদেরও সচেতনতা সৃষ্টি করার জন্য আমি আন্তরিকভাবে আহ্বান জানাচ্ছি।

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং এর প্রেক্ষপটে সৃষ্ট বিশ্বমন্দার প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশের মানুষের যাতে কোনো কষ্ট না হয়, সেজন্য আমাদের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি চালু আছে, যার উপকারভোগী ৫১ লাখ মানুষ। বর্গাচাষিদের আমরা কৃষিঋণ দিচ্ছি বিনা জামানতে। বিনা জামানতে বর্গাচাষিরা কখনো কৃষিঋণ পেত না। মহাজনের কাছ থেকে উচ্চ সুদে আর ঋণ নিতে হোত। তিনি বলেন, ১ ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে। সব জায়গায় ফসল ফলাবেন। তাতে আপনারাই লাভবান হবেন। নিজেরা ফসল ফলাব, নিজেরা খাব। কারো কাছে হাত পাততে হবে না। আমি অনুরোধ করব, আপনারা নিজেদের জমি চাষ করেন, গাছ লাগান। নিজস্ব সকল জমি চাষের আওতায় এনে, ব্যক্তিগতভাবে নিজেও লাভবান হয়েছেন বলেও তিনি জানান।

প্রধানমন্ত্রী দেশে ১৬ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য মজুত রয়েছে বলে জানিয়ে বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, যে টাকা খরচ হয় বিদ্যুৎ উৎপাদনে তার তুলনায় অল্প টাকা ধরা হয়, ভর্তুকি দেওয়া হয়। এখানে বড়লোকরাই সুবিধা ভোগ করে। সেই কারণে তিনি সাধারণ মানুষের বিদ্যুৎ ব্যবহারে একটি সুরক্ষা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমি এরই মধ্যে নির্দেশ দিয়েছি, আমাদের সাধারণ মানুষ যেভাবে ব্যবহার করে তাদের জন্য একটা সুরক্ষার ব্যবস্থা থাকবে। আর যারা অতিরিক্ত বিদ্যুৎ ব্যবহার করে একটা লেভেলে উঠে গেলে তার দামও বাড়বে। সেই ব্যাপারটা আমরা আস্তে আস্তে করে ফেলব। তাহলে যারা অল্প খরচ করে তাদের সুরক্ষা দিতে পারব। যারা বেশি ব্যবহার করে তারা বেশি টাকা দেবে।

১৮ জন কৃষককে গুলি করে হত্যা করেছে খালেদা জিয়া- উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আর আজ কৃষকের ঘরে সার পৌঁছে যায়। তাদের কৃষি উপকরণ কার্ড দিয়েছি। এটা দিয়ে কৃষি উপকরণ কিনতে পারে। ১০ টাকায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে। এর মাধ্যমে ভর্তুকির টাকা সরাসরি কৃষকের কাছে পৌঁছে যায়।

তৃতীয় লিঙ্গসহ সব শ্রেণিপেশার মানুষকে সামাজিক সুরক্ষাবলয়ের আওতায় আনা হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, বিদ্যুৎ ’৯৬ সালে ১৬০০ মেগাওয়াট ছিল। আমরা ৪ হাজার ৩০০ করে যাই। পরে বিএনপির আমলে সেটা কমে যায়। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর এখন ২৫ হাজার মেগাওয়ার্ট বিদ্যুৎ উৎপাদন করার সক্ষমতা অর্জন করেছি। শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের বই, বৃত্তি, উপবৃত্তি দিচ্ছি। ডিজিটাল সেন্টার করে দিয়েছি। ইনকিউবেটর, হাইটেক পার্ক করে দিয়েছি। হাতে হাতে মোবাইল ফোন।

প্রধানমন্ত্রী ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার উল্লেখ করে বলেন, ঘরে বসে চাকরির আবেদনসহ যাবতীয় সেবার কাজ করতে পারছে মানুষ। অনলাইনে কেনা-বেচাসহ সব কিছু হচ্ছে। আমরা তরুণ-তরুণীদের ফ্রিল্যান্সিং শিখাচ্ছি। সে এই ট্রেনিং নিয়ে বিদেশেও কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার সুফল বাংলাদেশের প্রতি ঘরে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে তার সরকার ইতোমধ্যে সর্বজনিন পেনশন স্কিম চালু করেছে। যেটা তার সরকারের নির্বাচনি ওয়াদাও ছিল।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির জনক আদর্শ নিয়ে সংবিধানে বর্ণিত পন্থায় আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা, পৌর ও সিটি করপোরেশন আইন করে তার সরকার স্থানীয় সরকারকে যথেষ্ট অর্থ বরাদ্দ দিয়ে একদম তৃণমূল পর্যন্ত যেন উন্নয়ন হয় সেই ব্যবস্থা নিয়েছে। তিনি বলেন, ২০০৬ সালে বিএনপি আমলে স্থানীয় সরকারের জন্য বরাদ্দ ছিল ৫ হাজার ৭৯৯ দশমিক ৩৬ কোটি টাকা। আর আওয়ামী লীগ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে স্থানীয় সরকার বিভাগের জন্য ৪৬ হাজার ৭০৩ দশমিক ৯২ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা দিয়ে গেছেন জাতির পিতা। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যায়ের মানুষকে ক্ষমতায়ন করে দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছেন। তখনই এল আঘাত। জাতির পিতাকে সপরিবারে শাহাদতবরণ করতে হয়। হারিয়েছিলাম বাবা-মা ভাইবোন। পেয়েছি বিশাল জনগোষ্ঠী। বাংলাদেশের মানুষই আমার পরিবার, আমার আপনজন। তারাই আমার সব শক্তি।

শেখ হাসিনা সারাদেশ থেকে আসা জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা তৃণমূল পর্যায়ের জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি। আপনাদের উপস্থিতিতে গণভবনের মাটি ধন্য হয়েছে। তৃণমূল মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে আপনারা এখানে এসে বক্তব্য দিয়েছেন, আপনাদের আমি ধন্যবাদ জানাই।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত