শিল্পীর তুলির আঁচড় অনেক শক্তিশালী : প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশ : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে কেউ যেন ধূলিসাৎ করতে না পারে সে জন্য দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমাদের জন্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে কেউ যেন ধ্বংস করতে না পারে এজন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।

গতকাল রাজধানীর শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মিলনায়তনে চিত্রশিল্পী বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাবুদ্দিন আহমেদের আঁকা শিল্পকর্ম নিয়ে আয়োজিত ‘শাহাবুদ্দিন: এ রেট্টোস্পেক্টিভ (১৯৭৩-২০২৩)’ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। এই রেট্রোস্পেক্টিভ শীর্ষক চিত্রকর্মের প্রদর্শনী চলবে মাসব্যাপী।

শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ জাতির পিতাকে হত্যা করা পর স্বাধীনতার চেতনা, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ সবই মুছে গিয়েছিল। আমাদের কবি, শিল্পী, সাহিত্যিক, লেখকরা তাদের লেখনীর মধ্য দিয়ে এ চেতনাকে ধরে রেখেছিলেন। আমরা রাজনীতিবিদরা রাজনীতির মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছিলাম। জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করেছি। তিনি বলেন, শিল্পীর তুলির আঁচর অনেক শক্তিশালী। শিল্পীর আঁকা অনেক ছবি আমার কাছে গণভবনে আছে। আমি যদি গণভবনে নাও থাকি তাহলে এসব ছবি আমি নিয়ে যাব। এসব ছবিতে, চিত্রে পথ দেখা যায়। এসব চিত্র আমি পরিবর্তন করার কাজ করছি।

শিল্পী শাহাবুদ্দিনের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধের সময় তিনি ভারতের ত্রিপুরায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ছবি এঁকেছেন। যে হাতে অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করেছেন সেই হাতেই তিনি শিল্পকর্ম করেছেন। যুদ্ধের সময় তার কাছে কোনো রং ছিল না, কাগজ ছিল না। ক্যালেন্ডার আর পেন্সিল দিয়ে তিনি বঙ্গবন্ধুর ছবি এঁকেছেন। একজন শিল্পীর যখন আবেগ বিকশিত হয় তখন শিল্পীকে কোনো কিছুতে দমানো যায় না।

বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিদেশে আমাদের নাম পরিবর্তন করে রিফিউজি হিসেবে থাকতে হয়েছিল। যখন আমরা রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছিলাম তখন আমাদের নাম পরিবর্তন করতে হয়েছিল। তারা তখন আমাদের নিরাপত্তাও দিয়েছিল।

জিয়াউর রহমানের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার করার পর জিয়াউর রহমান বিচার চাওয়ার অধিকারটুকুও কেড়ে নিয়ে ছিল। ১৯৭৫ সালে বাবা-মাসহ পরিবারের সদস্যের হত্যার পর বিচার চাওয়া অধিকার ছিল না। তখন আমরা বিদেশে রিফিউজি হিসেবে থাকি, এইটা যে কত কষ্টের ছিল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তদন্ত কমিশনকে জিয়াউর রহমান আসতে দেয়নি। তাদেরকে ভিসা দেওয়া হয়নি।

চিত্রশিল্পী শাহাবুদ্দিনকে ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকের চিত্র কর্ম দেখে আমি খুবই আনন্দিত। কারণ চিত্রকর্মগুলোতে প্রকৃতির, দেশের অবস্থা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে স্মার্ট জনগণের সামনে তুলা ধরা হয়েছে। এই মুহূর্তে বাংলাদেশের যুব সমাজের জন্য এই চিত্রকর্মগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই এক মাসব্যাপী এই শিল্পকর্মের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ইতিহাস মানুষ জানতে পারবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে থেকে বঙ্গবন্ধু ছয় দফা দিয়েছিলেন, স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এই বাড়িতেই ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে। এই বাড়িটি জনগণের জন্য উৎসর্গ করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু মেমারিয়াল ট্রাস্ট করে এই বাড়িটি আমরা দান করেছি। যদিও আমার ছোট বোন ও আমার কোনো থাকার জায়গা ছিল না। ১৯৮১ সালে বিদেশ থেকে ফিরে আমি ফুফুর বাসায় থাকতাম। বঙ্গবন্ধু তো দেশের মানুষের জন্য জীবন উৎসর্গ করে গেছেন তাই ধানমন্ডি ৩২ নাম্বার বাড়িও আমরা জনগণের জন্য উৎসর্গ করে দিয়েছি।

সরকারপ্রধান বলেন, বঙ্গবন্ধুকে যেখানে হত্যা করা হয় সেখানে শিল্পী শাহাবুদ্দিনের আঁকা বঙ্গবন্ধুর ছবি রাখা হয়েছে। শিল্পীর আঁকা ছবি দিয়ে দেশপ্রেম উদ্বুদ্ধ হওয়া যায়, আবার মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়ও উদ্বুদ্ধ হওয়া যায়। আমাদের জন্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেই চেতনায় বাংলাদেশের মানুষ জাগ্রত হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে কেউ যেন ধ্বংস করতে না পারে এজন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।

সরকারপ্রধান বলেন, চিত্রশিল্পীদের তুলির আঁচড়ে ফুটে উঠে আমাদের প্রকৃতি, আমাদের দেশের নানা চিত্র। আমাদের ইতিহাস যেমন ফুটে ওঠে, সেইসঙ্গে দরিদ্র মানুষের দৃশ্যগুলো উঠে আসে। আমি ’৯৬ সালে সরকার গঠন করার পর আন্তর্জাতিক চিত্রশিল্পীর একটা সম্মেলন করি। সেখানের কয়েকটি শিল্পকর্ম আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। আমি নিজেও একটি কিনে নিই। তার সঙ্গে কয়েকটি উপহারও পাই। আমাদের পরিকল্পনা কমিশনে, যেখানে বসে উন্নয়নের পরিকল্পনা করি, সেখানে সেই চিত্রটি লাগিয়ে রেখেছি।

শেখ হাসিনা বলেন, আমি রেখেছি কেন জানেন? সেখানে কতগুলো ছোট ছোট বাচ্চা রাস্তায় পড়ে আছে। আমি সেখানে বসেই সব সময় আমার সঙ্গে যারা কাজ করে তাদের বলি, এই চিত্র আমি বাংলাদেশ থেকে বদলাতে চাই। আমরা অনেক ক্ষেত্রে সফল হতে পেরেছি। আমাদের মনে রাখতে হবে, শিল্পীর তুলির আঁচড় অনেক শক্তিশালী।