ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিএনপির ভাষায় রেজুলেশন নিয়েছে

শান্তি সমাবেশে ড. আব্দুর রাজ্জাক

প্রকাশ : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিএনপির ভাষায় আরেকটি রেজুলেশন নিয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আপনারা (ইউরোপীয় ইউনিয়ন) বাংলাদেশে টিম পাঠান। আপনারা বলেছেন, বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার নেই, কথা বলার অধিকার নেই, মানবাধিকার হুমকির মুখে। মানবাধিকার কি শুধু মিথ্যাচার করা? আপনারা সংখ্যালঘুদের সঙ্গে কথা বলেন। বাংলাদেশের দুই-এক ভাগ সংখ্যালঘু যদি বলে- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তাদের নিরাপত্তা দেয়নি, সবচেয়ে ভালো অবস্থানে নেই, আমরা এ দেশে সরকারে থাকব না।

তিনি বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে এমপি হিসেবে বলছি, এ দেশ হিন্দু, খ্রিষ্টান, গারো-চাকমা প্রতিটি মানুষের। এই সংখ্যালঘুদের ৯৯ ভাগ আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়। তারা আওয়ামী লীগের পক্ষে। হেফাজত নিয়ে মিথ্যাচার করা হয়েছে। কিছু সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, কিছু লবিস্ট বিএনপি-জামায়াত ধর্মান্ধদের টাকা খেয়ে মিথ্যা রিপোর্ট দেয়। আদিলুর রহমান টাকা খেয়ে মিথ্যা রিপোর্ট দিয়ে বিদেশিদের বিভ্রান্ত করেন।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, ২০১৩ সালে ৫ মে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে হেফাজত সমাবেশ করেছিল। আমি সেদিন ত্রাণমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বে ছিলাম। খুব কাছে থেকে দেখেছি, তাদের খুব অনুরোধ করেছিলাম সমাবেশ শেষ করতে, সন্ধ্যার দিকে সরকারের কাছে খবর এলো তারা সমাবেশ থেকে উঠে যাবে না। রাতের মধ্যে তারা গণভবন ঘেরাও করে, সচিবালয় ঘেরাও করে, তারা সরকারের পতন ঘটাবে। রাত ৮টার দিকে কি দেখেছিলাম? খালেদা জিয়া বিবৃতি দিয়ে জানাল বিএনপি নেতাদের হেফাজতের পাশে দাঁড়াতে। এরশাদ ফ্রিজের ঠান্ডা পানি নিয়ে হেফাজতের পাশে দাঁড়ালেন, খাবার নিয়ে দাঁড়ালেন। সারা দেশ আতঙ্কগ্রস্ত। গণভবন ঘেরাও হবে কি না, সচিবালয় ঘেরাও হবে কি না, হেফাজতের কে প্রধানমন্ত্রী হবেন, নাকি বিএনপির কাছে দেবে ক্ষমতা- এমন এক পরিস্থিতি। আপনারা নিশ্চয়ই ভুলে যাননি, রাত ৩টার মধ্যে শাপলা চত্বর পরিষ্কার হয়েছিল। সেখানে সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছিল ঢাকা মহানগরের নেতারা।

আব্দুর রাজ্জাক বলেন, হেফাজতের সেই সমাবেশে ৬১ জন মানুষ মারা গেছে এর চাইতে বড় মিথ্যাচার আর কি হতে পারে। সে মিথ্যাবাদীর যদি বিচার হয় আইনে, সেটা কি অন্যায়? বিএনপি একটানা আন্দোলন-সংগ্রাম করছে, একই দাবি নিয়ে ২০১৩ সাল থেকে আন্দোলন করছে। শেখ হাসিনা পালাবার পথ পাবে না, একই কথা বারবার বলছে। শেখ হাসিনার পতন না হলে তারা কোনো নির্বাচনে যাবে না।

শান্তি সমাবেশে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করে পতন ঘটানো যাবে না। বিদেশি যারা গণতন্ত্রের কথা বলে, মানবতার কথা বলে তারা এই ষড়যন্ত্রকারীদের সঙ্গে থাকবে না। আশা করি, সব দল নির্বাচনে অংশ নেবে। নির্বাচনে অংশ নিয়ে জনপ্রিয়তা যাচাই করুন। বিএনপি-জামায়াতের অশুভ তৎপরতা নস্যাৎ করে দিয়ে শেখ হাসিনাকে আবারও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আনব। তিনি বলেন, মির্জা ফখরুলের এখন আর হাসি-খুশি মুখ নেই। স্যাংশন-ভিসানীতি করে ভেবেছিল তারা ক্ষমতায় এসে গেছেন। কিন্তু এখন মুখ শুকিয়ে গেছে।

অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমানের সাজার বিষয়ে যড়যন্ত্র হচ্ছে দাবি করে মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, হেফাজতের মহাসমাবেশ ৬১ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে অধিকার বলেছিল। সেই মিথ্যা প্রচারের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। তার ২ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে। এ জন্য মির্জা ফখরুলের দুঃখ কীসের। এই স্বাধীনতাবিরোধীরা এক হয়ে সরকারপতন ঘটাতে চায়। বিদেশি বন্ধুদের বলব, জনগণের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র থেকে বিরত থাকুন। আমরা পরিষ্কার করে বলছি, বিএনপি-জামায়াত কর্মসূচি দিলে আমরা রাজপথে থেকে তাদের যেকোনো ষড়যন্ত্রের মোকাবিলা করব।

বিএনপি ভেবেছিল হেফাজতের সমাবেশ যোগ দিয়ে সরকারপতন করবে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, হেফাজতের আন্দোলনের ওপর ভর করে, সেসময় বিএনপি ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন দেখেছিল। খালেদা জিয়া ভেবেছিলেন হেফাজতের আন্দোলনে সরকার নেমে যাবে। ২০০ গরু খাওয়ার ব্যবস্থা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

এ সময় হানিফ নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় ফটোগ্রাফার শহিদুল আলমের আল জাজিরায় সাক্ষাৎকার নিয়ে সমালোচনা করে বলেন, শহিদুল আলম একাত্তরের পরাজিত শক্তির বংশধর। তিনি রাজাকার সবুর খানের ভাগ্নে।

সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ প্রমুখ।