ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

এটিইউয়ের সংবাদ সম্মেলন

নতুন জঙ্গি সংগঠন তাওহীদুল উলূহিয়্যাহ

ছিল হামলার পরিকল্পনা
নতুন জঙ্গি সংগঠন তাওহীদুল উলূহিয়্যাহ

তাওহীদুল উলূহিয়্যাহ (আল-জিহাদী) নামে নতুন আরো একটি জঙ্গি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। গত ২ থেকে ৩ মাস ধরে সংগঠনটি তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। আগামী বছর দেশে বড় হামলার পরিকল্পনা ছিল সংগঠনটির।

গোয়েন্দা সূত্রে এসব তথ্য জানার পর সংগঠনটির শীর্ষ নেতা মো. জুয়েল মোল্লাসহ (২৯) তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট (এটিইউ)। বাকি দুজন হলেন, মো. রাহুল হোসেন (২১) ও মো. গাজিউল ইসলাম (৪০)। গতকাল শনিবার দুপুর ১২টায় রাজধানীর বারিধারায় অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট হেড কোয়ার্টারের কনফারেন্স রুমে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান এটিইউয়ের ডিআইজি (অপারেশন্স) মোহা. আলীম মাহমুদ। তিনি বলেন, গত ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে অভিযান পরিচালনা করে জুয়েলকে বাগেরহাট থেকে, জয়পুরহাট থেকে রাহুলকে ও রাজধানীর ভাসানটেক এলাকা থেকে গাজীউল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারদের মধ্যে জুয়েল এই সংগঠনের প্রধান। বাকি দুই জন শীর্ষ পর্যায়ের নেতা। সংগঠনটি ২-৩ মাস তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। তাদের পরিকল্পনা ছিল ২০২৪ সালে দেশে বড় ধরনের জঙ্গি হামলা করা।

এটিইউয়ের ডিআইজি (অপারেশন্স) মোহা. আলীম মাহমুদ বলেন, আমরা গত কয়েক মাস ধরে গোয়েন্দা তথ্যের মাধ্যমে খবর পাচ্ছিলাম কিছু উগ্রবাদী মানুষ একত্রিত হচ্ছে। যারা দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে বিশ্বাস করে না। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে বানচাল করে উগ্রবাদী ব্যবস্থা কায়েমের জন্য তারা একত্রিত হচ্ছিল। গ্রেপ্তাররা সবাই আগে কোনো না কোনো জঙ্গি সংগঠনের সদস্য ছিল। কিন্তু তারা নতুন লক্ষ্য নিয়ে এক ব্যানারে সবাই নতুন করে একত্রিত হচ্ছিল। তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ভিডিও ও পোস্টের মাধ্যমে নতুন সদস্য সংগ্রহ করে আসছিল। এই দলের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নেতা হলেন জুয়েল। আমরা প্রথমে জুয়েলকে বাগেরহাটের রামপাল থেকে গ্রেপ্তার করি। পরে তার দেওয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করে বাকি দুই শীর্ষ নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের গ্রেপ্তারের সময় নতুন সংগঠনের আটটি ব্যানার জব্দ করা হয়। তিনি বলেন, তারা প্রাথমিকভাবে সদস্য সংগ্রহের পাশাপাশি অর্থও সংগ্রহ করছিল। এই অর্থ দিয়ে অস্ত্র কেনা ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম সংগ্রহ করার পরিকল্পনা ছিল তাদের। এই অস্ত্র ও বোমা দিয়ে তাদের বড় ধরনের জঙ্গি হামলার পরিকল্পনা ছিল। তিনি আরো বলেন, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য জসীম উদ্দিন রহমানি, যিনি বর্তমানে কারাগারে সাজা ভোগ করছেন, তারা বক্তব্যে মূলত উদ্বুদ্ধ হন জুয়েল। এর ফলে তিনি নতুন এ জঙ্গি সংগঠনটি সৃষ্টি করে। জুয়েল নিজেও আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য ছিলেন। জসীম উদ্দিন রহমানিকেও কারাগার থেকে মুক্ত করার পরিকল্পনা ছিল জুয়েলের। সংগঠনটির অর্থের যোগানদাতা কারা এবং সংগঠনটির সদস্য সংখ্যা কত- জানতে চাইলে তিনি বলেন, সংগঠনটিতে এখন পর্যন্ত ৮০ থেকে ৯০ জন সদস্য আছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। তাদের অর্থদাতা কে তা এখনো জানা যায়নি। তবে সংগঠনটির অর্থ সংগ্রহের কাজ করছিলেন রাহুল। এছাড়া রাহুল বোমা তৈরির দায়িত্বেও ছিল। নির্বাচন কেন্দ্র করে তাদের হামলার পরিকল্পনা ছিল কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে তাদের আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করব। নির্বাচন কেন্দ্র করে হামলার পরিকল্পনা ছিল কি না, সে সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে ২০২৪ সালে বড় একটি জঙ্গি হামলার পরিকল্পনা ছিল। সেই জন্য তারা অর্থ ও অস্ত্র সংগ্রহসহ বোমা বানানোর চেষ্টা করছিল। তবে তাদের হামলার টার্গেট কি, তা এখনো জানা যায়নি, সে বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে আমরা জানার চেষ্টা করব। সংবাদ সম্মেলনে এটিইউয়ের পুলিশ সুপার (অপারেশনস্) ছানোয়ার হোসেন বলেন, নতুন জঙ্গি সংগঠনটির মূল পরিকল্পনাকারী জুয়েল মোল্লা নিষিদ্ধঘোষিত আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য ছিলেন। পরবর্তীতে র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়। ৯ মাস কারাগারে ছিলেন। এই সময়ে কারাগারে বসেই নিজের একটি সংগঠন করার পরিকল্পনা করে। মাত্র ক্লাস সেভেন পাস জুয়েল মোল্লা পেশায় একটি বেকারি কর্মী ছিলেন। আর বাকি গ্রেপ্তার দুইজন হিজবুত তাওহীদের সদস্য ছিলেন। তিনি আরো বলেন, রাহুল হোসেন পেশায় একটি আইটি প্রতিষ্ঠানের কর্মী ছিলেন। প্রযুক্তির বিষয়ে জ্ঞান থাকায় রাহুল বোমা তৈরির বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছিলেন। এছাড়া বোমা হামলার অর্থ জোগাতে নিজের জমি বিক্রির প্রস্তুতি নিচ্ছেলন রাহুল। রাহুল অনলাইনে সদস্য সংগ্রহের কাজও করছিলেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত