ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

চট্টগ্রাম পাসপোর্ট অফিস

দালালের দৌরাত্ম্যে সেবা প্রত্যাশীরা হয়রানির শিকার

দালালের দৌরাত্ম্যে সেবা প্রত্যাশীরা হয়রানির শিকার

চট্টগ্রাম নগরীর দুটি পাসপোর্ট অফিসে দালালদের বেপরোয়া তৎপরতা থামেনি। আর দালাল ধরে পাসপোর্ট পেতে সেবাপ্রত্যাশিদের নানা হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। দালালদের কারণে লোকজনকে পাসপোর্ট প্রতি গুনতে হচ্ছে বেশি টাকা। আবার দালালদের শরনাপন্ন না হয়ে উপায় নেই বলে জানান অনেক ভুক্তভোগী। দালাল ছাড়া পাসপোর্ট প্রক্রিয়ায় যুক্ত হওয়া লোকজনকে আরো বেশি হয়রানির শিকার হতে হয়। তাই বাধ্য হয়ে পাসপোর্ট প্রত্যাশিদের বড় একটি অংশ দালালদের শরনাপন্ন হন বলে অভিযোগ রয়েছে।

রমজান মাহমুদ নামে একজন ভুক্তভোগী বলেন, দালাল না ধরে নিজে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করলে হয়রানির মুখে পড়তে হয় নানাভাবে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে আবেদনপত্র জমা দেওয়ার পর ভুল ধরে কর্মকর্তারা সেটি গ্রহণ করেন না। আবার সংশোধন করে জমা দিলেও আরেকটি ভুল ধরা হয়। এভাবে ভুল শুধরে আবেদন জমা দিতে দিনের পর দিন ছোটাছুটি করতে হয়। তবে দালাল ধরে আবেদন করলে আবেদনপত্রে বিশেষ চিহ্ন দেওয়া থাকে। তখন ভুল ধরা হয় না। এতে একদিনেই ফিঙ্গারপ্রিন্ট, ছবি তোলার সুযোগসহ দ্রুত পাসপোর্ট পাওয়া যায়। অন্যথায় দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হয় পাসপোর্টের জন্য। হয়রানির শিকার গ্রাহকদের প্রায় সবার অভিযোগ একই। মনসরাবাদ এলাকার বিভাগীয় এই পাসপোর্ট কার্যালয় থেকে পাঁচলাইশ এলাকার পাসপোর্ট অফিস সব জায়গার চিত্র একই। অর্থাৎ পদে পদে হয়রানির শিকার হচ্ছেন আবেদনকারীরা। বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসে প্রতিদিন গড়ে হাজারো ব্যক্তি পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন। এর মধ্যে বেশিরভাগ দালালের শরণাপন্ন হন। এতে সরকারি ফির অতিরিক্ত খরচ হয় ২ হাজার টাকা। কোনো জটিলতা থাকলে পাসপোর্ট পেতে আরো বেশি টাকা দিতে হয়। দালাল না ধরে নিজে পাসপোর্টের আবেদন করলে জমা দেওয়া এবং ডেলিভারি বুথে হয়রানির শিকার হতে হয়। হয়রানির অভিযোগ জানাতে কর্মকর্তাদেরও সাক্ষাৎ পাওয়া যায় না। সাক্ষাৎ পেলেও তারা হয়রানির কথা শোনার মতো সময় দেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। নগরীর চান্দগাঁও এলাকা থেকে পাসপোর্ট করাতে পাঁচলাইশ অফিসে আসা জসিম উদ্দিন বলেন, এক সময় দালালদের দৌরাত্ম্য কমে আসে প্রশাসনের তৎপরতায়। এখন তাদের তৎপরতা আবার বেড়েছে। দালাল ছাড়া কোনো কাজ হয় না। আবেদন জমা দিতে দালালদের সর্বনিম্ন ১ হাজার টাকা দিতে হয়। তাদের মাধ্যমে গেলে অফিসের কর্মকর্তারা আবেদনপত্রে বিশেষ চিহ্ন দেখে বুঝতে পারেন। কারণ আবেদনে বিশেষ সংকেত দেওয়া থাকে। তখন দ্রুত কাজ হয়। অন্যথায় নানা ভুল ধরেন। ফরম নিতে গড়িমসি করেন। এতে হয়রানির শিকার হতে হয়।

পাসপোর্ট কার্যালয়ের আশপাশের বাসিন্দারা দালালদের অভিনব তৎপরতা সম্পর্কে নানা তথ্য দেন। তারা বলেন, গেটের সামনে বসে থাকা ব্যক্তিরাই আসলে দালাল। প্রতিদিন সেবাপ্রার্থীদের নানা কাজে সহায়তা করে অর্থ নেন। আগে এদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের অভিযান জোরদার ছিল। তখন কার্যালয়ের আশপাশে আসত না তারা। নতুন পরিচালক যোগদানের পর দালালদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। এতে পাসপোর্ট করতে আসা ব্যক্তিরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। আগের মতো প্রশাসনের তৎপরতা না থাকায় দালালরা এখন বেপরোয়া।

জানা যায়, ২০১০ সালের নভেম্বর থেকে নগরীর আগ্রাবাদ এলাকার মনুসরাবাদে চট্টগ্রাম বিভাগীয় পাসপোর্ট কার্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয়। ২০২২ সালের নভেম্বর পর্যন্ত এই কার্যালয় থেকে ১০ লাখ ১৬ হাজার ৫৩৪টি মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি), ২ লাখ ৭৬ হাজার ৫৪৬টি ই-পাসপোর্ট ও ৬১ হাজার ৬৮৪টি মেশিন রিডেবল ভিসা ইস্যু করা হয়। কার্যালয়ের কার্যক্রম শুরুর সময় ৩১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়। একযুগ পরও জনবল বাড়েনি বরং কমেছে। আগে যেখানে ৩১ জন ছিলেন, বর্তমানে আছেন ২৮ জন। কার্যালয়ে জনবল কম ও আবেদনকারী বেশি হওয়ায় দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে বলে জানান পাসপোর্ট অফিসের এক কর্মকর্তা।

দালাল না ধরলে পদে পদে হয়রানির অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কর্মকর্তারা জানান, দালালদের কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। তাছাড়া সুনির্দিষ্টভাবে কেউ অভিযোগ লিখিতভাবে দেয়নি। অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করা হবে। দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত