ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

তৃণমূল বিএনপির নেতৃত্বে তৈমূর-শমসের

নতুন মেরুকরণে দেশের রাজনীতি

নতুন মেরুকরণে দেশের রাজনীতি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দেশের রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ দেখা দিয়েছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোন ফরমেটে বিএনপি আসবে এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে চলছে আলাপ-আলোচনা। দলটি রাজপথে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। তারা দাবি আদায় না হলে নির্বাচনে যাবে না বলে জানিয়েছে। অন্যদিকে বিএনপি নির্বাচনে না এলে তাদের দল ভেঙে গঠিত তৃণমূল বিএনপির সোনালি আঁশ প্রতীকে ভোট করতে যাচ্ছে দলটির অনেক সিনিয়র নেতা।

সূত্র জানায়, তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দিয়ে রাজনীতিতে আবার সরব হতে যাচ্ছেন, বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সাবেক সদস্য (বহিষ্কৃত) অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার। তারা দুজনে তৃণমূল বিএনপির নেতৃত্বে আসছেন। আজ রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে অনুষ্ঠেয় তৃণমূল বিএনপির প্রথম কাউন্সিল অনুষ্ঠানে দলটিতে যোগ দিতে যাচ্ছেন তারা।

জানা গেছে, তৈমূর আলম খন্দকারকে মহাসচিব পদ দেওয়া হতে পারে। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পায় বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা প্রতিষ্ঠিত দলটি।

রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন রয়েছে, বিএনপি থেকে বিভিন্ন সময় বাদ পড়া এবং ক্ষোভ-অভিমানে নিষ্ক্রীয় থাকা অনেক নেতাও তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দিতে পারেন। এই তালিকায় বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের সংসদ সদস্য উকিল আবদুস সাত্তারও রয়েছেন। উকিল সাত্তার বর্তমান জাতীয় সংসদে বিএনপির এমপি ছিলেন। আন্দোলনের অংশ হিসেবে গত ডিসেম্বরে বিএনপির অন্য এমপিদের সঙ্গে তিনিও সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন; কিন্তু পরে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে একই আসনে উপনির্বাচন করায় তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। তিনি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ছিলেন।

তৃণমূল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অন্তরা হুদা বলেন, শমসের মবিন চৌধুরী ও তৈমূর আলম খন্দকার আমাদের দলে যোগ দিচ্ছেন। তারা একটা ভালো পদে থাকবেন।

এ বিষয়ে তৈমূর আলম খন্দকার বলেন, বিএনপি আমাকে দেড় বছর ধরে বহিষ্কার করে রেখেছে। আমি তো দল ছাড়িনি। আওয়ামী লীগেও যাব না। তাহলে এখন আমার পরিচয় কী? মারা গেলে পরিচয় কী হবে? কোনো ব্যানারে রাজনীতি করব? তিনি জানান, যেহেতু বিএনপি বহিষ্কার করেছে, তাকে এখন তৃণমূল বিএনপিকে আঁকড়ে ধরে থাকতে হবে। তিনি সেখানেই যাচ্ছেন। তৃণমূল বিএনপির শীর্ষ পদে থাকবেন বলে আশা তার। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, বিএনপির সাবেক নেতা শমসের মবিন চৌধুরীর সঙ্গে তার কথা হয়েছে, তিনিও তাদের সঙ্গে থাকছেন। তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দেওয়ার জন্য বিএনপির অনেক নেতা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন বলেও দাবি করেন তৈমূর আলম খন্দকার।

এদিকে বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ও সাবেক নেতা ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা প্রতিষ্ঠিত ‘তৃণমূল বিএনপি’ রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পেয়েছে আগে। এখন বিএনপির নেতারা যোগ দেয়ায় নতুন করে চাপা অস্বস্তিতে পড়েছে রাজপথের প্রধান এই বিরোধী দলটি।

জানা যায়, জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সর্বশেষ ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। ১৯৯১ ও ২০০১ সালে দুই দফায় খালেদা জিয়ার সরকারের মন্ত্রী ছিলেন তিনি। মাঝে একবার দল থেকে বহিষ্কৃত হয়ে পুনরায় দলে ফিরেছিলেন তিনি। তবে, ২০১২ সালে বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট (বিএনএফ) নামে নতুন দল গঠন করেন। পরে সেই দল থেকে তাকে বহিষ্কার করেন দলটির প্রধান সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ। ২০১৪ সালের ৭ মে মাসে তিনি বাংলাদেশ জাতীয় জোট নামে একটি জোট গঠন করেন এবং ২১ নভেম্বর তিনি বাংলাদেশ মানবাধিকার পার্টি নামে দল গঠন করেন। ২০ নভেম্বর ২০১৫ সালে হুদা তৃণমূল বিএনপি নামে আরো একটি নতুন দল গঠন করেন।

২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছিল তৃণমূল বিএনপি। তখন নিবন্ধন মেলেনি। এরপর দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর আদালতের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি তৃণমূল বিএনপিকে নিবন্ধন দেয় ইসি। এরপরই দলটিকে নিয়ে বিএনপি অঙ্গনে চাপা অস্বস্তি সৃষ্টি হয় বলে জানা গেছে।

তৃণমূল বিএনপিসহ বিভিন্ন মহলের আভাস, আগামী নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ এখনও অনিশ্চিত। আর শেষ পর্যন্ত কোনো কারণে বিএনপি নির্বাচনে না এলে সেক্ষেত্রে তৃণমূল বিএনপির তৎপরতা আরো বেড়ে যাবে। বিএনপির পরিবর্তে এই দলকেই নির্বাচনি মাঠে শক্তভাবে দাঁড় করানোর চেষ্টা করতে পারে আওয়ামী লীগ। আর বিএনপির বিদ্রোহী বা দলত্যাগ করা কেউ কেউ তৃণমূল বিএনপিতে ভর করে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন।

উল্লেখ্য, তৃণমূল বিএনপির চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা মারা যান গত ১৯ ফেব্রুয়ারি। এরপর তার মেয়ে দলের হাল ধরেন। এখন শমসের মবিন চৌধুরী ও অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার দলে যোগ দিলে আরো শক্তিশালী হবে তৃণমূল বিএনপি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত