ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বাড়ছে না প্রকল্পের মেয়াদ, মিলছে না বরাদ্দ

ইতিহাসবন্দি হয়ে থাকছে ইভিএম!

ইতিহাসবন্দি হয়ে থাকছে ইভিএম!

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ব্যালটের ম্যধ্যমে করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ফলে বাংলাদেশে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ভবিষৎ অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। সরকার এ প্রকল্পে নতুন করে আর কোনো টাকা দিতে চাচ্ছে না। আবার প্রকল্পর মেয়াদ বাড়ানোরও কোনো সম্ভাবনা নেই। অন্যদিকে ইভিএমের জন্য সরকার নতুন করে কোনো প্রকল্প নেবে না বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।

সূত্র জানায়, ইসি ভোট গ্রহণে প্রযুক্তির ব্যবহারের স্বপ্ন দেখলেও দেশের অর্থনৈতিক কারণে সেটি সম্ভব হচ্ছে না। এ যন্ত্রের প্রতি গুরুত্ব না দিলে আগামীতে হয়তো ইতিহাস বন্দি হয়ে থাকবে ইভিএম মেশিন।

জানা যায়, প্রায় সাড়ে ৫ বছর আগে দেড় লাখ ইভিএম ক্রয় করে নির্বাচন কমিশন। এই সময়ে প্রায় ১ হাজার ২০০ ভোট হয়েছে এসব মেশিন দিয়ে। এরই মধ্যে অর্ধেকের বেশি ইভিএম নষ্টও হয়ে গেছে। সেগুলো সংস্কার করার জন্য বরাদ্দ চেয়েছিল ইসি। না পাওয়ায় ইভিএমের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চিত কমিশন।

ইসি সূত্র জানায়, আগামী ডিসেম্বরের শেষ দিকে কিংবা জানুয়ারির প্রথম দিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ কিংবা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন হতে পারে। তিনি বলেন, তফসিল কবে হতে পারে সে সিদ্ধান্ত কমিশন সভায় নেয়া হবে। সেটি নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহেও হতে পারে। সাধারণত ৫০ থেকে ৬০ দিন আগে তফসিল হয়। তবে সংসদ ভোট উপলক্ষ্যে সব ধরেনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে ইসি। এর আগে ইভিএম নিয়ে কোনো রকম আলোচনায় যাবে না ইসি। এখন ব্যালট নিয়ে ব্যস্ত সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।

সূত্র জানায়, ২০১৮ সালে ৩ হাজার ৮২৫ কোটি টাকায় দেড় লাখ ইভিএম কেনা হয়। গত সংসদ নির্বাচনে ছয়টি আসনে ইভিএমে ভোট হয়েছিল। এবার ১৫০ আসনে ব্যবহার করতে চেয়েছিল ইসি। এ লক্ষ্যে ২ লাখ ইভিএম কিনতে ৮ হাজার ৭১১ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছিল কমিশন। কিন্তু একনেক সে প্রকল্পে অনুমোদন দেয়নি। আর হাতে থাকা ইভিএম মেরামতের জন্য চাওয়া হয়েছিল ১ হাজার ২৫৯ কোটি টাকা। সে টাকাও মেলেনি। ফলে বাধ্য হয়ে প্রকল্পই বন্ধ করে দিতে হচ্ছে।

ইভিএম প্রকল্প পরিচালক কর্নেল সৈয়দ রাকিবুল হাসান বলেন, ২০২৪ সালের জুন মাসে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু এর আগেই প্রকল্পের ইভিএম ও আনুষঙ্গিক বিষয়গুলো কমিশনকে বুঝিয়ে দিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অযত্নে অবহেলায় পড়ে থেকে ৫ বছরে কমপক্ষে ৭৫ হাজার ইভিএম নষ্ট হয়ে গেছে। মেরামতের জন্য টাকা না পাওয়ায় বাকিগুলোও অকেজো হওয়ার পথে।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, ইলেক্ট্রনিক জিনিসের একটি আয়ু আছে। সে আয়ুর থাকার মধ্যেই অনেকগুলো অকেজো হয়ে পড়ে। যেগুলোকে নতুন করে মেরামত করা সম্ভব হবে না। আবার অনেকগুলোর মেয়াদের পরও কার্যকর থাকে। সেগুলো যতটুকু পারা যায় মেরামত করে যে কয়দিন চালানো যায়।

জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচন মিলে প্রায় ১ হাজার ২০০ ভোট ইভিএমে হয়েছে। ভোট দিয়েছেন প্রায় ৪ কোটি ভোটার। এছাড়া, প্রায় ৪ লাখ জনগোষ্ঠী প্রশিক্ষণ নিয়েছে। অথচ জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার হচ্ছে না। তাহলে যে ৪ হাজার কোটি টাকা খরচ হলো সেটা কি শুধুই অপচয়?

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, বড় বড় রাজনৈতিক দল যদি চায় ইভিএমে নির্বাচন হবে তাহলে আবার ইভিএমের ট্রেন্ডার হতেও পারে। সেগুলো নিয়ে জাতীয় নির্বাচনের পর আমরা চিন্তা করব।

নির্বাচন কমিশন সচিব জাহাংগীর আলম বলেন, নির্বাচন কমিশন সর্বোচ্চ ১৫০টি আসনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সে সময়। এজন্য ইভিএম মেরামতের জন্য সরকারের কাছে টাকা চেয়েছিল ইসি। ওই টাকা পাওয়ার ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হওয়ায় ইসি সিদ্ধান্ত নেয়, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনেই স্বচ্ছ ব্যালট পেপারে ভোট অনুষ্ঠিত হবে।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, ইভিএম নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান রয়েছে। দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শেষে ইভিএমে ভোট করার পরিকল্পনা নিয়েছিল কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন। তবে ইভিএম কেনার প্রকল্পে সরকারের সায় না পাওয়ায় ইসির প্রস্তাবিত প্রকল্প স্থগিত হয়ে যায়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত