ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

গৃহায়ন সংকট নিরসন

জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ

জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ

দেশের স্বল্প সম্পত্তির সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিতে মানসম্মত আবাসন সুবিধার ব্যবস্থা করতে সরকার জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ (জাগৃক) সৃষ্টি করেছে। গৃহায়ন সংকট নিরসনকল্পে দেশের বিভিন্ন স্থানে বহুতল ভবন ও প্লট তৈরি করার কাজ করছে সংস্থাটি। কিন্তু অদৃশ্য অথবা ওপেন সিক্রেট তদবির, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজোস, দুর্নীতি ও অনিয়মের আখড়ায় পরিণত হয়েছিল জাগৃক। কর্মক্ষেত্রে প্রভাব খাটিয়ে সেবাপ্রত্যাশীদের জিম্মি করে শত কোটি টাকার মালিক হওয়ারও নজির রয়েছে। দিনের পর দিন এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এবার নতুন করে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দুর্নীতির অভিযোগে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের একজন কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করার ঘটনা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি হয়। সেবাপ্রত্যাশীরা সিন্ডিকেটের হাত থেকে কিছুটা হলেও রেহাই পেয়েছেন। আগামীতে আরো কয়েকজন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে।

সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের বারান্দা থেকে শুরু করে অফিস রুমের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি। এতে হয়রানির শিকার হয়েছেন বহু সেবাপ্রত্যাশী। এবার সেই হয়রানি ও দুর্নীতি বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তাকে অন্যত্রে বদলি করা হয়েছে। এছাড়াও সনদ জালিয়াতি ও দুর্নীতির অভিযোগে একজন উচ্চমান সহকারীকে পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়। আরেকজন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্তও করা হয়েছে।

জাগৃকের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, রাজধানীসহ গ্রামাঞ্চলে আবাসন সংকট নিরসনে সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে জমির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করে দেশের স্বল্প ও মধ্যম আয়ের মানুষের জন্য টেকসই, নিরাপদ ও সাশ্রয়ী আবাসন নির্মাণ করছে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ। সরকারি চাকরিজীবীদের আবাসনের ব্যবস্থার পাশাপাশি স্বল্প আয়ের মানুষের জন্যও আবাসন নির্মাণ ও প্লট বরাদ্দ করেছে সংস্থাটি। এরই ধারাবাহিকতায় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ মিরপুরে সাধারণ নাগরিকদের জন্য ২ হাজার ৬০০ ফ্ল্যাট নির্মাণ করেছে। দেশের ৩৭টি উপজেলায় পরিকল্পিত আবাসিক এলাকা গড়ে তুলে সাধারণ মানুষের কাছে প্লট বিক্রি করা হয়েছে।

এছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রায় পাঁচ হাজার ফ্ল্যাট নির্মাণ করে সাধারণ জনগণের মধ্যে বিক্রি করা হয়েছে। আগামীতেও নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের বাসস্থানের ব্যবস্থা নিশ্চিতে পরিকল্পনা চলছে।

জমির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিতে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যত্রতত্র ভবন নির্মাণে মানুষকে নিরুৎসাহীত করতে পরিকল্পিত আবাসিক এলাকা করছে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ। এক্ষেত্রে স্বল্প আয়ের মানুষ আবাসনের আশায় জাগৃকে দরখাস্ত করার পর কিছু অসুধা কর্মকর্তা-কর্মচারীরর জন্য বছরে পর বছর দপ্তরে দপ্তরে ঘুরাঘুরি করেও সমস্যার সমাধান করতে পারেননি। তবে কাজী ওয়াছি উদ্দিন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষকে ঢেলে সাজানোর পদক্ষেপ নিয়েছেন। সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, কোনো সংস্থার ভেতরে দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। গৃহায়ন সংকট নিরসনকল্পে একটি সহায়ক পরিবেশ তৈরি করতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কিন্তু জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষকে ঘিরে দালালচক্র ও দুর্নীতির একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছিল, সেই সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া হয়েছে।

সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন আরো বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্যকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় গত ১৪ বছরে দেশের অর্থনৈতিক নানা সূচকে দারুণ অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু দুর্নীতির রাশ টেনে ধরতে না পারলে কোনো উন্নয়নই টেকসই হবে না, উন্নয়নের সুফল জনগণের কাছে পৌঁছাবে না। সেজন্য আবাসন খাতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গৃহায়ন কর্তৃপক্ষকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আর সেবা পেতে যে প্রতিবন্ধকতা ছিল, সেগুলো দূর করার চেষ্টা করা হচ্ছে। যাতে করে সেবাপ্রত্যাশীরা সহজেই সেবা পান।

সম্প্রতি সনদ জালিয়াতি ও দুর্নীতির অভিযোগে জাগৃকের উচ্চমান সহকারী দেলোয়ার হোসেনকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। ওই সময় সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে সনদ জালিয়াতির অভিযোগ ছিল। সে বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে শুনানি হয়। তদন্তে প্রমাণ পাওয়ায় তার বিরুদ্ধে মামলা করে শাহবাগ থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে ফাইল আটকে রাখা, ফাইল গায়েব করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ ছিল। এসব অনিয়ম করে তিনি সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। বিদেশে বাড়ি করার অভিযোগ রয়েছে। সেখানে জমি সংক্রান্ত কাজ বেশি হয়। সেই জমির ফাইল কিছু লোকের কাছে জিম্মি। ফলে সেবা গ্রহিতারা সেবা না পেয়ে নানা ধরনের হয়রানির শিকার হন।

এর আগে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় গৃহায়নে এক অফিস সহকারী দীর্ঘ সময় ফাইল আটকে রেখে ঘুষ আদায়ের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বরাদ্দপ্রাপ্ত জমির ফরমেট নকশা অনুমোদন ও বাস্তব দখল বুঝিয়ে না দিয়ে হয়রানির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুদক প্রধান কার্যালয় থেকে একটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানকালে বিভিন্ন শাখার অফিস সহকারীদের পরস্পরের যোগসাজশে ফাইল আটকে রেখে হয়রানির ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়। ৭ বছর আগে আবেদনকৃত একটি ফাইল নিষ্পত্তি করতে দীর্ঘ সময় ধরে আটকে রেখে অফিস সহকারী কর্তৃক ঘুষ গ্রহণের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছিল দুদক টিম। পুরো অফিসে দালালের দৌরাত্ম্য বিরাজমানসহ প্রশাসনের উদাসীনতা এবং দায়িত্বে অবহেলাসহ নানা অসামঞ্জস্যতা পরীলক্ষিত হয়। খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমানকে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান হিসেবে গত ৫ সেপ্টেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছিল। প্রজ্ঞাপন জারির ১৫ দিন পর গত বুধবারও জাতীয় গৃহায়নে বসতে পারেন তিনি। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, ‘সেবাপ্রত্যাশীদের সেবা পেতে হয়রানি কিংবা অন্যায় করলে কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেখানে যতটুকু অন্যায় করবে, ততটুকু শাস্তি পেতে হবে। আমরা চেষ্টা করব কোনো সিন্ডিকেট যেন জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের কোনো ক্ষতি করতে না পারে।’

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত