ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

পাল্টে গেছে চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম

বহির্নোঙরে অপেক্ষার অবসান দ্রুত খালাস হচ্ছে জাহাজ

বহির্নোঙরে অপেক্ষার অবসান দ্রুত খালাস হচ্ছে জাহাজ

চট্টগ্রাম বন্দরের জেটি ও বর্হিনোঙর আবার খালি যাচ্ছে। বহির্নোঙরে অপেক্ষমাণ কোনো জাহাজ নেই। আবার জেটিতেও জাহাজ সংখ্যা কম। বহির্নোঙরে জাহাজ কম থাকায় কনটেইনার জাহাজগুলো অপেক্ষা করছে না। জেটিতে ভিড়ে দ্রুততার সঙ্গে পণ্য ওঠানামায় যুক্ত হতে পারছে। এতে বহির্নোঙরে অপেক্ষায় থেকে সময় ক্ষেপণ হচ্ছে না। আবার জেটিতে পণ্য খালাস কাজ শেষ করতেও সময় বেশি লাগছে না। চট্টগ্রাম বন্দরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, বন্দর বহির্নোঙর ও জেটিতে জাহাজ সংখ্যা হঠাৎ বেড়ে যায়। আবার হঠাৎ কমে যায়। এটা খুবই স্বাভাবিক একটি বিষয়। তবে নানা ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার কারণে বন্দরে এখন জাহাজ আসা যাওয়া ও পণ্য হ্যান্ডেল দ্রুততার সঙ্গেই সম্পন্ন হচ্ছে। অপারেশনাল কর্মকাণ্ডে বেড়েছে গতি।

বন্দর সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দর বহির্নোঙরে গড়ে ১০ থেকে ১২টি জাহাজ অপেক্ষমাণ থাকে। খোলা পণ্যবাহী জাহাজগুলো জেটি খালি থাকলেও ভিড়তে পারে না। কিছুদিন বহির্নোঙরে পণ্য লাইটারেজ করে খালি করতে হয়। অর্থাৎ খোলা পণ্যবাহী জাহাজগুলো জেটিতে ভেড়ার মতো ড্রাফট (পানির নিচ থেকে উপর পর্যন্ত লেভেল) না হলে ভিড়তে পারে না। ছোট লাইটার জাহাজে করে পণ্য খালাস করার পরই বন্দর চ্যানেল হয়ে জেটিতে ভেড়ার উপযোগী হয় বড় জাহাজগুলো। এরপর তা জেটিতে ভেড়ানো হয়। আবার কনটেইনারবাহী জাহাজগুলোকে বহির্নোঙরে ড্রাফট সংক্রান্ত জটিলতায় পড়তে হয় না। কনটেইনার জাহাজের বিশেষায়িত জেটিগুলো খালি থাকলেই ভিড়তে পারে। খালি না থাকলে শুধু বহির্নোঙরে অপেক্ষা করতে হয়। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ শিপিং অ্যাজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের এক কর্মকর্তা বলেন, আগের সময় এখন নেই। এক সময় দিনের পর দিন বহির্নোঙরে জাহাজ অপেক্ষা করত। এখন জাহাজ অপেক্ষা করতে হয় না। কারণ বন্দর কর্তৃপক্ষ জাহাজের গড় অবস্থান সময় কমানো এবং দ্রুততার সঙ্গে পণ্য জাহাজীকরণের ব্যাপারে নানা পদক্ষেপ নিয়েছেন। তাই জেটি খালি যাচ্ছে আবার বহির্নোঙরেও জাহাজ নেই। তবে জাহাজ আসা যাওয়া কমে যাওয়া মানে ব্যবসা-বাণিজ্য কম। এ ধরনের নেতিবাচক চিত্রও সামনে চলে আসে। আশা করছি বাণিজ্য বাড়বে। পাশাপাশি জাহাজ আসা যাওয়াও বাড়বে।

ফ্রেইট ফরোয়াডার্স অ্যাসোসিয়েশনের এক কর্মকর্তা জানান, বৈশ্বিক মন্দা পরিস্থিতির কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য এখন কিছুটা কম। যার প্রভাব বিশ্বের প্রায় সব দেশে পড়েছে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। তবে ডলার সংকটের জন্য বন্দরকেন্দ্রিক ব্যস্ততা কমে যাওয়া একটি কারণ হতে পারে। তবে তা খুবই সাময়িক। যে কোনো সময় ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়তে পারে। সেই সঙ্গে বন্দরগুলোর অলস সময়ও কেটে যাবে। আমাদের মনে হয় শুধু বৈশ্বিক মন্দা পরিস্থিতি নয়, বন্দর কার্যক্রমে গতি বেড়েছে অনেক। এজন্য জেটি খালি যাচ্ছে। পাশাপাশি অপেক্ষমাণ জাহাজের তালিকাও বড় হচ্ছে না।

তৈরি পোশাক শিল্পের সবচেয়ে বড় সংগঠন বিজিএমইএ’র প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, বিশ্বমন্দার প্রভাবে ব্যবসা-বাণিজ্যে কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব সব দেশেই দৃশ্যমান। বাংলাদেশ তার ব্যতিক্রম হতে পারে না। তবে তা খুবই সাময়িক। ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দা সময় আসে। আবার তা স্বাভাবিক হয়। এভাবে প্রতিযোগিতার বাণিজ্যে টিকে থাকার চেষ্টা করতে হবে। যাতে ব্যবসায়ীরা অভ্যস্ত। এক সময় বাণিজ্য কমলেও আবার ঘুরে দাঁড়াবে। বাড়বে আমদানি রপ্তানির হার। ব্যবসা হ্রাস পাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ব্যবসা কমে যাওয়ায় অনেক কারখানা অলস দিন কাটাচ্ছে। অর্ডার কম। তাতে কাঁচামাল আমদানির চাহিদাও কমেছে। পাশাপাশি ডলারের উচ্চমূল্যে কাঁচামাল কেনাও কঠিন হয়ে পড়েছে। এসবের কারণে ব্যবসা কমেছে। আর ব্যবসা কমে যাওয়ায় চট্টগ্রাম বন্দরের ব্যস্ততাও কমেছে। তবে তা খুবই সাময়িক। পরিস্থিতি যে কোনো সময় আবার ইতিবাচক ধারায় ফিরবে বলে আমরা ব্যবসায়ীরা মনে করি। এ ব্যাপারে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের এক নেতা বলেন, এক সময় চট্টগ্রাম বন্দরে দিনের পর দিন জাহাজ অপেক্ষা করত পণ্য খালাস করতে। কিন্তু এখন সেই দিন আর নেই। জাহাজ আসা মাত্রই খালাস হচ্ছে। অন্যদিকে কাস্টম হাউসে পণ্য ছাড় করতে বেশ সময়ক্ষেপণ হতো আগে। সেখানেও চিত্র পাল্টেছে। দ্রুত পণ্য ছাড় করণে ব্যবস্থা নিয়েছে কাস্টম কর্তৃপক্ষ। সার্বিক বিবেচনায় চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে কাস্টমস কার্যক্রমেও বেড়েছে গতি। এতে বন্দরে পণ্য জট হচ্ছে না।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত