কঠিন সংকটে বিএনপি

প্রকাশ : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  শামীম সিদ্দিকী

স্মরণকালের কঠিন সংকটের মুখে পড়েছে রাজপথের রাজনৈতিক দল বিএনপি। শক্তিশালী রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে রাজপথে সাংগঠনিক রাজনীতিতে কুলিয়ে উঠতে পারছে না দলটি। দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ার পরও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাহী আদেশে সাজা স্থগিত থাকায় দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কারাগারের বাইরে থাকলেও তিনি এখন হাসপাতালে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দণ্ডপ্রাপ্ত তারেক রহমান লন্ডনে আইনি ভাষায় ‘পলাতক’ জীবনযাপন করছেন। তার যে কোনো বক্তব্য বা বিবৃতি গণমাধ্যমে প্রকাশের ওপর আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ইতোপূর্বে তার দেয়া বক্তব্য বা বিবৃতি সরিয়ে নিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। এ কারণে বিএনপিকে দিকনির্দেশনা দেয়ার মতো কোনো নেতা জিয়া পরিবারে নেই। ফলে নেতাকর্মীরা অনেকটা হতাশ হয়ে পড়েছেন। বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতা তৈমূর আলম খন্দকার ও শমশের মোবিন চৌধুরীর নেতৃত্বে তৃণমূল বিএনপির নতুন কমিটি দেশের রাজনীতিতে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই দলটি অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সব দলের অংশগ্রহণের মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠিত হওয়ার পথ অনেকটাই সুগম হয়েছে।

অন্যদিকে বিএনপি ‘সরকারের পদত্যাগ’ দাবি করে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করছে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগও বিএনপির নৈরাজ্য ঠেকাতে শক্তিশালী অবস্থানে মাঠে রয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের লাগাতার কর্মসূচি গতকাল থেকে শুরু হয়েছে। আগামী ২৮ অক্টোবর কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে নির্মিত বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধনের দিন পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকবে। দেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে টিকে থাকার মতো অবস্থা বিএনপির নেই। কেন্দ্রীয়ভাবে বিএনপি বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করলেও তাদের এ কর্মসূচিতে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে পারছে না। আর সে কারণে আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে ক্ষমতায় রয়েছে। বিএনপির জন্য সবচেয়ে বড় খড়গ নেমে এসেছে মার্কিন ভিসা নীতি। এই ভিসানীতি গত শুক্রবার ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার পেছনে দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার বিষয়টি ভিসানীতির প্রথমেই উল্লেখ করা হয়েছে। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলারের এ সংক্রান্ত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের পাশাপাশি তাদের পরিবারের সদস্যরাও এ ভিসানীতির আওতায় যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য বিবেচিত নাও হতে পারেন। এছাড়া বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত ব্যক্তিরা ভবিষ্যতে এই ভিসানীতির আওতায় মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারেন। শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন আয়োজন নিয়ে বাংলাদেশের যে লক্ষ্য, তাকে সমর্থন করতেই এ পদক্ষেপ। এছাড়া যারা বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায়, তাদের সমর্থন করতেই এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেছেন, এই মার্কিন ভিসানীতিতে সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় পড়বে বিএনপি। কেন না, দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলের নির্বাহী কমিটির কয়েকজন নেতা ‘সরকার পতনের যে একদফা’ কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নেমেছেন, তারা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রতিহত করার ডাক দিয়েছেন। তারা হরতাল কিংবা অবরোধের কর্মসূচি দিয়ে ২০১৪ সালের মতো আগুনসন্ত্রাসের পথ বেছে নেয়ার জন্য নেতাকর্মীদের উসকানি দিচ্ছেন। সংবিধান অনুসারে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আগামী জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আর এই নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগেই বিএনপির এই ধরনের হুমকি যুক্তরাষ্ট্র আমলে নেবে। কেন না, খালেদা জিয়ার এই দলটির শীর্ষপর্যায়ের নেতাদের জাতীয় নির্বাচন নস্যাতের হুমকি গণমাধ্যমে আসায় নিশ্চয়ই তা ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের নজরে আসবে। যুক্তরাষ্ট্র কাদের ওপর ভিসা নীতি প্রয়োগ করবে, সেটি প্রকাশ করা হবে না। সে কারণে বিএনপি দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের ‘নজরবন্দি’ হয়ে থাকবে। এদিকে আগামী জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণে পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক দল না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ)। ইইউ’র এই সিদ্ধান্তে বিএনপির ‘স্বপ্ন’ ভঙ্গ হয়েছে বলে রাজনৈতিক অঙ্গনের আলোচনায় উঠে এসেছে। কেন না, বিএনপি ‘বিদেশী প্রভূ’ নির্ভর একটি নালিশ পার্টিতে পরিণত হয়েছে। নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বিদেশি পর্যবেক্ষকদের দৃশ্যত কোনো ভূমিকা নেই। নির্বাচন কেমন হচ্ছে তারা সেটা দেখে প্রতিবেদন দেবেন। এর বাইরে তাদের অন্য কোনো চর্চা করার অধিকার নেই। রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বিএনপিও তাদের দাবি থেকে অনেকটা নমনীয় পর্যায়ে এসেছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করার দাবি থেকে তারা এখন নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠনের দাবি জানাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে তারুণ্যের সমাবেশে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি দেখে বিএনপির নেতারা আশান্বিত হলেও ভোটের রাজনীতি বলছে ভিন্ন কথা। সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির জন্য সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক ধাক্কা হচ্ছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে তৃণমূল বিএনপির নতুন কমিটি গঠন। বিএনপির সাবেক নেতাদের নিয়ে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিএনপির নির্বাচন বর্জনের রাজনীতির সঙ্গে একমত পোষণ না করে এসব নেতা ভিন্ন নামে ও ভিন্ন আঙ্গিকে এই রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন। নির্বাচন কমিশনের নানা রকম যাচাই-বাছাইয়ে প্রত্যাখ্যাত হলেও পরবর্তীতে আদালতের মাধ্যমে তৃণমূল বিএনপি সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন পেয়েছে। ফলে আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে তাদের অংশগ্রহণ করার পথে আর কোনো বাধা রইল না। একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে এ দলটির ভূমিকাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। কেন না, জনগণকে ভোটারাধিকার থেকে বঞ্চিত করতে চাপ সৃষ্টি করা কোনো রাজনৈতিক শিষ্টাচার নয়। মানুষের সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার শ্বাশত। বিএনপি তাদের দাবি আদায়ে ‘বিদেশি হস্তক্ষেপে’র ওপর নির্ভর করলেও কোনো বিদেশি রাষ্ট্র এখন আওয়ামী লীগ সরকারের ওপর ‘হস্তক্ষেপ’ করার বিবেকবর্জিত নীতিতে বিশ্বাস করছে না। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান এখন অনেক বেশি জোরাল। কোনো দেশ এখন আর বাংলাদেশ সম্পর্কে কোনো বিরূপ মন্তব্য করার ঝুঁকি নিচ্ছে না। বঙ্গবন্ধুর ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব কারো সাথে বৈরীতা নয়’ এমন পররাষ্ট্র নীতির আলোকে আওয়ামী লীগ সরকার পরিচালিত হওয়ায় বিশ্বের প্রতিটি দেশ, সংস্থা ও মিশনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নতুন উচ্চাতায় পৌঁছেছে। বিএনপি যুক্তরাষ্ট্রের ওপর ভর করে রাজনীতি করলেও সেই দেশটি এখন আর বিএনপির অযৌক্তিক দাবির প্রতি সাড়া দিচ্ছে না। সব দেশের জন্য প্রয়োজ্য এমন নীতিতে তারা বিশ্বাসী। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বান সব দেশের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। জাতিসংঘের চলতি অধিবেশনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে অবস্থানকালে বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠান ও অংশীদারীত্বমূলক করার ব্যাপারে তার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। ঢাকায় কূটনৈতিক সূত্র বলেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বাংলাদেশ সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোনো ঘাটতি না থাকায় বাংলাদেশের প্রতি তাদের আস্থা ও নিভরশীলতা বেড়েছে। তাদের মধ্যে এমন ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, বাংলাদেশের নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হবে। কার্যত এই আত্মবিশ্বাস থেকেই আগামী জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণে পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক দল না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। এরই মধ্যে ইইউর পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেলের নেওয়া এই সিদ্ধান্তের কথা চিঠির মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ইইউ’র ই-মেইলে পাঠানো চিঠির মাধ্যেমে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি জানানোর পর ই-মেইলটি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে পাঠানো হয়। চিঠিতে ইইউ’র বাজেট স্বল্পতার কথা বলা হয়েছে। ইইউ’র রাজেট স্বল্পতা দৃশ্যত কোনো জোরাল কারণ নয় বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল। কেন না, এত বড় একটি প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সংকটের মুখে পড়া অস্বাভাবিক। বাজেটের নিশ্চয়তা পেয়েই তো ইইউ তাদের নির্বাচনি অগ্রবতী দল পাঠিয়ে ছিল। আর তাদের পর্যবেক্ষণ বিচার-বিশ্লেষণ করেই এই সংস্থাটি বাংলাদেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেনি। তাদের মধ্যে এমন আস্থা সৃষ্টি হয়েছে যে বাংলাদেশে নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে একটি সুষ্ঠু ও অংশদারীত্বমূলক নির্বাচনের আয়োজন করা সম্ভব। ইইউ’র এই ‘ইউর্টান’ বিএনপিকে গভীর হতাশার মধ্যে ফেলেছে। কেন না রাজপথের এই বিরোধী রাজনৈতিক দলটি ‘নালিশ’ জানানোর আরেকটি মোক্ষম সুযোগ হারাল।

নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের কাছে ইইউ’র পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, গত জুলাই মাসে ঢাকা সফর করে যাওয়া ইইউর প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলের সুপারিশের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। নির্বাচন পর্যবেক্ষণে ২০২৩-২৪ সালের জন্য ইইউ’র বাজেটের স্বল্পতার কথা বলা হয়েছে। চিঠিতে ইইউ’র পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে নির্বাচন যাতে অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক হয়, তা নিশ্চিত করতে তারা সব ধরনের প্রচেষ্টাকে উৎসাহিত করছে। বিএনপির সামনে এখন একমাত্র ভরসা মার্কিন প্রাক-নির্বাচন মূল্যায়ন মিশন। যুক্তরাষ্ট্র আগামী ৭ অক্টোবর বাংলাদেশে তাদের এই মিশন পাঠাবে। ‘প্রতিনিধি দলটি ৭ থেকে ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশ সফর করবে এবং এতে ছয়জন প্রতিনিধি ও সহায়তা কর্মী থাকবেন। এই মিশন বিএনপির সঙ্গে কোনো আলোচনায় বসবে কি না, তা নিয়েও শঙ্কিত সংসদের বাইরে থাকা এ দলটি। বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে মার্কিন মিশনকে বোঝাতে পারলে তারাও হয়তো নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা রাখবে এবং বাংলাদেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষক পাঠানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে পারে। এমনটি হলে আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন হবে সম্পূর্ণভাবে নিজস্ব আঙ্গিকে। বাংলাদেশ বিদেশি হস্তক্ষেপমুক্ত একটি দেশ হিসেবে বিশ্বের কাছে পরিচিতি পাবে। মার্কিন মিশনও যদি পর্যবেক্ষণ শেষে বাংলাদেশের নির্বাচন পর্যবেক্ষণে কোনো দল না পাঠায় তাহলে বিএনপির সামনে আর কোনো স্বপ্ন থাকবে না। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের পর্যবেক্ষক আসুক কিংবা নাই-ই আসুক বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্টু গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক হবে। এক দেশের পর্যবেক্ষকরা অন্য দেশে গিয়ে নির্বাচন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করে- এমন দেশের সংখ্যা কম। নির্বাচনি বছরে আমাদের দেশের রাজনৈতিক সচেতন মানুষ বলে আসছে, আমাদের রাজনৈতিক দলের কারণে বিদেশিরা নির্বাচন পর্যবেক্ষণের নামে আমাদের ওপর অযাচিতভাবে হস্তক্ষেপ করছে। জাতি হিসেবে এটা আমাদের জন্য সুখকর নয়। অথচ বিএনপি অতিমাত্রায় বিদেশি নির্ভর হওয়ায় তারা ক্ষমতার পট-পরিবর্তনে বিদেশিদের হস্তক্ষেপ ছাড়াও নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বিদেশিদের সম্পৃক্ততা কামনা করে জাতিকে গ্লানিময় পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলীয়ভাবে বলা হয়েছে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। আর পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমও বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বিধিনিষেধ নিয়ে সরকার চিন্তিত নয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, সেই প্রত্যাশা বুক বেঁধে ছিল বিএনপি। তবে আখেরে সেই আশা পূরণ হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র তার ভিসা নীতিতে পরিষ্কার করে উল্লেখ করেছে, যারা গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বাধা দেবে তাদের জন্য এই ভিসা নীতি। অথচ বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শুক্রবারও উত্তরায় এক সমাবেশে বলেছেন, এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন করতে দেয়া হবে না। মির্জা ফখরুলের বাইরে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্যদের মধ্যে অনেকেই বলেছেন, হরতাল ও অবরোধের মতো কঠিন কর্মসূচি দিয়ে এই সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজনের পথ রুগ্ধ করে দেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিকে এগিয়ে গেলেও বিএনপি তাতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।

অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণের প্রতি যে আহ্বান জানিয়েছেন, তা যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন করে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি আজরা জেয়া। নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তিনি এ কথা জানান। গত শুক্রবার ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বৈঠকে তারা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেছেন। বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র সারা বিশ্বে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতন্ত্রের উন্নয়নের বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বন্ধু হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে জনগণের প্রতি শেখ হাসিনার আহ্বানকে সমর্থন করে।