ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

মিয়ানমারের ‘চামিলায়’ মানব পাচারকারীচক্রের আস্তানা

মিয়ানমারের ‘চামিলায়’ মানব পাচারকারীচক্রের আস্তানা

বাংলাদেশ সর্বদক্ষিণের প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনের দক্ষিণ-পূর্বে মিয়ানমারের উপকূলবর্তী একটি গ্রাম ‘চামিলা’। যে গ্রামটি দেড় শতাধিক ঘর করে বসবাস করে মগ ও রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের মানুষ। আর এই গ্রামটি এক-একটি ঘরই বন্দিশালা। গ্রাম বসবাসকারি সবাই একটি সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্রের সদস্য। যেখানে বর্তমানে কয়েকশ’ বাংলাদেশিকে জিম্মি করে মুক্তিপণের টাকার জন্য চালানো হচ্ছে নির্মম নির্যাতন। যার মধ্যে গত ৩ বছর আগে থেকে বন্দি থাকা বাংলাদেশি যুবকও রয়েছে।

সংঘবদ্ধ মানব পাচারকারী চক্রের কবলে পড়ে মিয়ানমারে পাচারের পর সেই বন্দিশালা নানা প্রক্রিয়ায় পুলিশের ফেরত আনা সাতজন এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গত রোববার রাতে মিয়ানমার থেকে সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্যরা এই সাতজনকে এনে নামিয়ে দেন টেকনাফের মিঠাপানি ছড়ার সংলগ্ন সৈকতে। যেখান থেকে পুলিশ এই ৭ জনকে উদ্ধার করে। এর আগে এ ঘটনায় পুলিশ সংঘবদ্ধ পাচারকারী চক্রের নারীসহ চার সদস্যকে গ্রেপ্তারও করেছে। গতকাল দুপুর আড়াইটার দিকে কক্সবাজার সদর থানায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন, কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. মিজানুর রহমান। গ্রেপ্তার পাচারকারী চক্রের সদস্যরা হলেন, টেকনাফ উপজেলার সদর ইউনিয়নের লেঙ্গুর বিল এলাকার মৃত ওমর হামজার ছেলে মো. বেলাল উদ্দিন (২৮), সাবরাং ইউনিয়নের লাফার ঘোনার এলাকার আবদুল গফুরের মেয়ে মাহফুজা (২২), একই ইউনিয়নের গোলারপাড়া এলাকার মৃত আবদুল গণির ছেলে আব্দুল্লাহ (৫৫) ও মিয়ানমারের বুচিডং এলাকার নুরুল ইসলামের ছেলে মো. আয়াছ (২৬)।

পাচারকারি চক্রের আস্তানা থেকে উদ্ধার হওয়ারা হলেন, চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়নের স্টেশন পাড়ার আবদুর রহমানের ছেলে রায়হান উদ্দিন (২৮), সিরাজগঞ্জ জেলার কাজীপুরের মো. হোসেন আলীর ছেলে মো. হাবিব উল্লাহ (১৬), কক্সবাজার পৌরসভার বৈদ্যঘোনা এলাকার কফিল উদ্দিনের ছেলে মো. রায়হান কবির (১৬), একই এলাকার আবুল হাশেমের ছেলে মো. আলমগীর (১৮), মহেশখালী উপজেলার শাপলাপুর ইউনিয়নের সোনা মিয়ার ছেলে সফর আলী (১৭), একই এলাকার আলী আজগরের ছেলে শওকত আজিজ (১৮) ও উখিয়ার থাইংখালী এলাকার মো. ইউনুসের ছেলে মো. মামুন মিয়া (২১)।

সংবাদ সম্মেলনে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, গত ৪ সেপ্টেম্বর থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর কক্সবাজার সদর থানায় লিপিবদ্ধ হওয়া দুটি সাধারণ ডায়রির তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ নিশ্চিত হয় যে, একটি সংঘবদ্ধ মানব পাচারকারি চক্র কক্সবাজার সদর, চকরিয়া, মহেশখালী, উখিয়ার কিছু কিশোর ও যুবককে নানা প্রলোভ দেখিয়ে উন্নত জীবনের কথা বলে মালেয়শিয়া পাচারের উদ্দেশ্যে জিম্মি করে। তাদের প্রথমে টেকনাফের লেঙ্গুর বিল এলাকায় নিয়ে যায়। এরপর সাগরপথে মিয়ানমারের একটি আস্তানায় নিয়ে গিয়ে জিম্মি করে। ওখানে জিম্মি করার পর নির্যাতন চালিয়ে ফোনে স্বজনদের কাছ থেকে মুক্তিপণের টাকা দাবি করে।

তিনি জানান, স্বজনরা নির্যাতনের খবর পেয়ে নানাভাবে পাচারকারিদের বিভিন্ন অংকের টাকাও প্রদান করে। এই টাকা গ্রহণকারী লোকজন, তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় পুলিশ পাচারকারি চক্রের সদস্যদের চিহ্নিত করে চারজনকে গ্রেপ্তার করে।

এরপর গ্রেপ্তারদের কৌশলে ব্যবহার করে রোববার রাতে মিয়ানমার থেকে টেকনাফের সমুদ্র সৈকত এলাকায় ফেরত আনা হয় সাতজনকে।

মিজানুর রহমান জানান, উদ্ধার হওয়া ব্যক্তি ও গ্রেপ্তারের কাছ থেকে আরো নানা তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। এসব তদন্ত করে পাচারকারি চক্রের অন্যান্য সদস্যদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার ও নিখোঁজ অন্যদের বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। এসব ঘটনায় কক্সবাজার সদর থানা ছাড়াও পৃথকভাবে উখিয়া, টেকনাফ, মহেশখালী ও চকরিয়া থানায় মামলা হয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত