মার্কিন ভিসা নীতি

সর্বত্র ছড়ানো হচ্ছে ভীতি ও বিভ্রান্তি

প্রকাশ : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ফারুক আলম

যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের আওতায় কারা কারা পড়ছেন তাদের নাম প্রকাশ না করায় সর্বত্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, টুইটার ও ইউটিউবে নানা রকমের গুজব এবং অপপ্রচার চলছে। এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে মিথ্যা, বানোয়াট ও মনগড়া তথ্য দিয়ে আওয়ামী লীগবিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করছে।

রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে গ্রামগঞ্জের হাটবাজারে চায়ের দোকান সর্বত্রই ভিসা নিষেধাজ্ঞার আলাপ-আলোচনা চলছে। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক বিশ্লেষকরা বলছেন, মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা গোপনীয় এবং ব্যক্তিগত হওয়ায় যে যেভাবে ইচ্ছে ব্যাখ্যা করছেন। এতে একদিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে, অন্যদিকে মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর প্রবণতা বেড়েছে। তবে কারা কারা চলমান ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েছেন, সেটির তালিকা চূড়ান্তভাবে প্রকাশ্যে এলে মিথ্যা ও বানোয়াট বন্ধ হতো। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আলী রিয়াজ বলেছেন, মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে গুজব এবং অপপ্রচার চলছে। রাজনৈতিকভাবে প্রতিপক্ষদের ঘায়েল করার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তির নাম দিয়ে তারা ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েছেন বলে দাবি করা হচ্ছে। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে যারা এবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাননি তারা ভিসানীতির আওতায় এমন কথাও বলা হচ্ছে। ভিসা নিষেধাজ্ঞা যাদের ওপর আরোপ করা হয়েছে তাদের তালিকা সরকারের কাছে থাকা উচিত।

জানা গেছে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ‘অবাধ ও সুষ্ঠু’ করার লক্ষ্যে মার্কিন ভিসানীতি গত শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) থেকে কার্যকর করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলা এটিকে পুঁজি করে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। অথচ চলমান মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েছেন বর্তমান ও সাবেক সরকারি কর্মকর্তা, সরকারি ও বিরোধী দলের সদস্য, আইনশৃঙ্খলান বাহিনী, বিচার বিভাগ ও নিরাপত্তা সংস্থার সদস্য। নাইজেরিয়া, উগান্ডা এবং সোমালিয়া কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল। বিশ্লেষকরা বলছেন, আফ্রিকার দেশগুলোর ওপর যে উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল, সেটি কার্যকর হয়নি।

মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞার ঘটনায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এমন সিদ্ধান্তের ফলে আগামী নির্বাচন কেন্দ্র করে বিএনপি জোট জ্বালাওপোড়াও করতে পারবে না। সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচনে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না বিএনপি। তবে মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ বাংলাদেশের জন্য লজ্জা- এমন মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এই নিষেধাজ্ঞার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। আওয়ামী লীগ সরকার এখন বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় আওয়ামী লীগ নয়, বিএনপি বেশি চিন্তিত। কারণ, ভিসানীতিতে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বাধাদানকারীদের ভিসা দেওয়া হবে না বলা আছে। বিএনপি নির্বাচন ব্যাহত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।

গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সরকারি ও বিরোধী দলের যেসব সদস্য বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে খাটো করার চেষ্টা করছে, তাদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলো। বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়তা করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে ওই ব্যক্তিদের তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি কীভাবে ভিসা নিষেধাজ্ঞার তথ্য জানতে পারবেন, সেই প্রশ্নের উত্তর এখনো কারো কাছে নেই।

এ প্রসঙ্গে ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেন, যাদের ভিসা প্রত্যাহার করা হয়েছে, তাদের ব্যক্তিগতভাবে জানিয়ে দেব। কারণ, এটি আমাদের রীতিতে রয়েছে। তবে যাদের এ মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নেই, তাদের কোনো তথ্য থাকবে না, তবে ভিসা আবেদনের পর তারা জানতে পারবেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতির আওতায় রয়েছেন- বর্তমান ও সাবেক বাংলাদেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী, সরকারপন্থি ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। সেই সঙ্গে তাদের পরিবারের সদস্যরাও এ নীতির আওতায় পড়বেন।

চীনে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফয়েজ আহমেদ বলেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করার লক্ষ্যে ভিসা নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বন্ধু দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা না দিয়েও ভিসা না দিতে পারত। ঘোষণা দিয়ে বিষয়টি পাবলিক করাটা দৃষ্টিকটূ, অবন্ধুসুলভ আচরণ। আমাদের সরকার ও বিরোধী দল কারোর এটি গ্রহণ করা উচিত না, সোচ্চার হওয়া উচিত।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে- আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সরকারের প্রশাসনের কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যদের ওপর এই ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে ডিএমপির মুখপাত্র স্বীকার করেছেন, পুলিশের কয়েকজনের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। তবে তারা কারা এই সম্পর্কে জানা যায়নি।