জাতীয় সংসদ নির্বাচন

প্রস্তুত হচ্ছে নির্বাচন কমিশন

প্রকাশ : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আরিফুল ইসলাম

আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। চলতি বছরের নভেম্বরের শুরুতে তফসিল ঘোষণা করে ডিসেম্বরের শেষে বা আগামী বছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ভোট করতে চায় সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। এরই অংশ হিসেবে চলছে নির্বাচন প্রশিক্ষণ ও উপকরণ সংগ্রহের কাজ। ইসি সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।

সূত্র জানায়, নির্বাচন কমিশন সংবিধান অনুযায়ী সময় মতো আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ করতে চায়। নির্বাচনে কোন রাজনৈতিক দলের অংশ গ্রহণ করা কিংবা না করার বিষয়টি গুরুত্ব না দিয়ে সময় মতো ভোট করতে চায় ইসি।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গত বছরের সেপ্টেম্বরে নিজেদের কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করে ইসি। সে অনুযায়ী নির্বাচন-সংক্রান্ত আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) ও নির্বাচনি বিধিতে সংস্কারের কাজ শেষ হয়েছে। ৩০০ সংসদীয় আসনের সীমানা পুননির্ধারণের কাজও শেষ। এখন হালনাগাদ ভোটার তালিকা তৈরির কাজ চলছে। গত ২ মার্চ পর্যন্ত নিবন্ধিত ভোটারদের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। এরপর যারা নিবন্ধিত হয়েছেন, তাদের যুক্ত করে সম্পূরক তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। ভোটকেন্দ্র স্থাপনের কাজও চূড়ান্ত পর্যায়ে। সারা দেশে ৪২ হাজার ৩৮০টি ভোটকেন্দ্রের খসড়া তালিকা করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী, তফসিল ঘোষণার পর চূড়ান্ত ভোটকেন্দ্রের তালিকা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে। ইসি কর্মকর্তারা জানান, নির্বাচন সামনে রেখে নতুন দুটি দলকে নিবন্ধন দিয়েছে ইসি। দেশীয় ৬৬টি সংস্থাকে পর্যবেক্ষক হিসেবে নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে। আরো কিছু সংস্থাকে নিবন্ধন দেওয়া হবে। এ জন্য এখনো আবেদন নেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে নির্বাচনি প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি শুরু করা হয়েছে। এর পাশাপাশি তফসিল ঘোষণার আগেই জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্বাচন-সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় মালামাল কেনাকাটার কাজও অনেকটা শেষ পর্যায়ে।

এদিকে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিতকরণে প্রার্থী ও পোলিং এজেন্টের ভূমিকাকে স্পষ্ট করতে সাবেক নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কর্মকর্তা ও সিনিয়র সাংবাদিকদের অভিজ্ঞতার সম্পর্কে জানতে অক্টোবর মাসের ৪ তারিখে তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসবে ইসি।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আহসান হাবিব খান বলেন, অবাধ ভোটাধিকার প্রয়োগ জনগণের সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ মৌলিক মানবাধিকার। তিনি বলেন, প্রার্থী ও পোলিং এজেন্টের ভূমিকা বিষয়ে একটা কর্মশালা অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে আয়োজন করতে যাচ্ছে ইসি। এ কর্মশালায় সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার বা নির্বাচন কমিশনার, সাবেক জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কমিশন কর্মকর্তা, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা অংশ নেবেন।

ইসির জনসংযোগ শাখার সহকারী পরিচালক মো. আশাদুল হক জানান, বৈঠকে মূল আলোচ্যবিষয়ের মধ্যে রয়েছে, নির্বাচনে অনিয়ম ও কারচুপি রোধে প্রার্থীর পক্ষে পোলিং এজেন্টের ভূমিকা কী হতে পারে; পোলিং এজেন্ট তার প্রার্থীর পক্ষে আইন ও বিধি অনুযায়ী কীভাবে দায়িত্ব পালন করে পোলিংকে স্বচ্ছতার রূপ দিয়ে নির্বাচনকে প্রভাবমুক্ত রাখতে পারেন এবং নির্বাচনের ফলাফলে জনমতের প্রকৃত প্রতিফলন ঘটিয়ে কীভাবে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করিয়ে আনতে পারেন। এছাড়াও প্রার্থী কী ধরনের পোলিং এজেন্ট নিয়োগ করবেন এবং কীভাবে তাকে দায়বদ্ধ করবেন, এ বিষয়েও আলোচনা করা হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-নির্বাচন মূল্যায়ন মিশন বাংলাদেশ সফর করবে ৭ অক্টোবর : যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-নির্বাচন মূল্যায়ন মিশন আগামী ৭ অক্টোবর বাংলাদেশ সফর শুরু করবে। প্রতিনিধি দলটি যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) ও ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউটের (এনডিআই) সমন্বয়ে গঠিত। প্রতিনিধি দলটির বাংলাদেশ সফরে অর্থায়ন করবে যুক্তরাষ্ট্র। প্রতিনিধি দলটি আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের জন্য এনডিআইয়ের নীতিমালা অনুযায়ী নির্বাচনপূর্ব পরিবেশ মূল্যায়ন করবে।

ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার সাংবাদিকদের বলেন, প্রতিনিধি দলটি আগামী ৭ থেকে ১৩ অক্টোবর বাংলাদেশ সফর করবে। এতে ছয়জন প্রতিনিধি ও সহযোগী স্টাফ থাকবেন। যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস জানায়, সফরকালে মার্কিন প্রতিনিধি দলটি বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন, সরকারের প্রতিনিধি, রাজনৈতিক দল, নাগরিক পর্যবেক্ষক, নারী ও যুব সংগঠনসহ নাগরিক সমাজ, বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সংস্থা এবং বিদেশি কূটনৈতিক মিশনগুলোর সঙ্গে বৈঠক করবে। সফর শেষে প্রতিনিধি দল ইতিবাচক বিষয়গুলোর পাশাপাশি উদ্বেগের ক্ষেত্রগুলো নিয়ে বাস্তবসম্মত সুপারিশ তুলে ধরে বিবৃতি দেবে।