ভোয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী

বিদেশ যেতে হলে খালেদা জিয়াকে আবার জেলে যেতে হবে

প্রকাশ : ০১ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির দায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের করা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ৫ বছরের সাজা হয়। সেদিন থেকে কারাবন্দি হন তিনি। পরে হাইকোর্টে এ সাজা বেড়ে ১০ বছর হয়। তবে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা বিবেচনা নিয়ে বাসায় থেকে চিকিৎসা নেওয়া এবং বিদেশ যেতে না পারার দুটি শর্তই বহাল রাখা হয়েছে। তবে ধাপে ধাপে খালেদা জিয়ার মেয়াদ বাড়ানো হয়। সর্বশেষ চলতি বছরের ১২ সেপ্টেম্বর দণ্ড স্থগিত করে খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ ৬ মাস বাড়ানোর সম্মতি দেয় আইন মন্ত্রণালয়। প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

জানা গেছে, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে প্রায় ২ বছর জেলে ছিলেন। সরকার নির্বাহী আদেশে সাজা স্থগিত করে দুটি শর্তে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়েছিল ২০২০ সালের ২৫ মার্চ। তখন দেশে করোনা মহামারি চলছিল। এরপর থেকে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৬ মাস অন্তর অন্তর তার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে। তবে বর্তমানে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা বেড়ে যাওয়া বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাওয়ার বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। বিএনপি চেয়ারপারসনের বিদেশে চিকিৎসা নেওয়ার বিষয়ে ভয়েস অব আমেরিকার শতরূপা বড়ুয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করাতে হলে তাকে আদালতে গিয়ে আবেদন করতে হবে। আদালত যদি অনুমতি দেন, তাহলে তিনি বিদেশে যেতে পারবেন।

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ভালো নয় বলে তার পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন। এজন্য তাকে বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা করাতে চান তারা- এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘আমি জিজ্ঞেস করি, পৃথিবীর কোন দেশ সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে পেরেছে। পৃথিবীর কোন দেশ দেবে? তাদের (বিএনপি) যদি চাইতে হয়, তাহলে আবার আদালতে যেতে হবে। আদালতের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। এখানে আদালতের কাজের ওপর আমাদের হস্তক্ষেপ করার কোনো সুযোগ নেই।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘তবে হ্যাঁ, যেটুকু করতে পেরেছি তার (খালেদা জিয়া) জন্য, সরকার হিসেবে আমার যেটুকু ক্ষমতা আছে, সেখানে তার সাজা স্থগিত করে বাড়িতে থাকার পারমিশন (অনুমতি) দেওয়া হয়েছে। সে নিজেই চিকিৎসা নিচ্ছে এখন। বাংলাদেশের সব থেকে দামি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। যদি তাকে বাইরে যেতে হয়, তাহলে তাকে যে বাসায় থাকার পারমিশন দিয়েছি, এটা আমাকে উইথড্রো (প্রত্যাহার) করতে হবে। তাকে আবার জেলে যেতে হবে এবং কোর্টে যেতে হবে। কোর্টের কাছে আবেদন করতে হবে। কোর্ট যদি রায় দেন, তখন সে যেতে পারবে। এটা হলো বাস্তবতা।’

এদিকে শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি আছেন খালেদা জিয়া। গত ৯ আগস্ট থেকে তিনি হাসপাতালে। এরই মধ্যে তিন দফায় তাকে সিসিইউতে নেওয়া হয়। তিনি অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন। তার লিভার, হৃদযন্ত্র ও কিডনির সমস্যা জটিল অবস্থায় আছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। এ অবস্থায় সর্বশেষ ২৫ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসা দেওয়ার অনুমতি চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন তার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার। শামিম ইস্কান্দার সরকারের কাছে যে চিঠি দিয়েছেন, সেখানে বলা হয়েছে- খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস ও হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন, যার আধুনিক চিকিৎসা বাংলাদেশে সম্ভব নয়।

চিঠিতে বলা হয়েছে, তিনি উঠে দাঁড়াতে পারেন না, এমনকি কারও সাহায্য ছাড়া ওয়াশ-রুম কিংবা শয়নকক্ষের বাইরেও যেতে পারেন না।

খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার আবেদনের বিষয়ে গতকাল শনিবার আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে করা আবেদনের বিষয়ে মতামত জানানো হবে শিগগিরই।

এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, মতামতের জন্য আবেদনটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

দণ্ডপ্রাপ্তদের বিষয়ে কোনো আবেদন করলে সেটির নিয়ম অনুযায়ী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে করতে হয়। তাই আইন মোতাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামতের জন্য সেটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।

এর আগে অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ (এএম) আমিন উদ্দিন বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাগারে গিয়েই বিদেশ যাওয়ার আবেদন করতে হবে। বিদেশে উন্নত চিকিৎসা নিতে হলে তাদের নতুন করে আবেদন করতে হবে। তখন আগের আদেশ বাতিল হয়ে যাবে। আদেশ বাতিল হলে তিনি (খালেদা জিয়া) বাইরে থাকতে পারবেন না।

উল্লেখ্য, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার ৫ বছরের সাজা হয়। সেদিন থেকে কারাবন্দি হন তিনি। পরে হাইকোর্টে এ সাজা বেড়ে ১০ বছর হয়। এরপর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার আরো ৭ বছরের সাজা হয়।