চট্টগ্রাম বিভাগে বন্দিতে ঠাসা ১১ কারাগার

পরিস্থিতি সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ

প্রকাশ : ০২ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  সাইফুদ্দিন তুহিন, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম বিভাগের ১১টি কারাগারেই বন্দির সংখ্যা ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি। অন্তত ৭ হাজার ৭৭৮ জন জন বন্দি বেশি আছে এসব কারাগারে। এর মধ্যে পুরুষ বন্দি ধারণক্ষমতা ৭ হাজার ৪০৯ জন এবং নারী বন্দি ৪১১ জন। তবে এসব কারাগারে বর্তমানে বন্দি আছেন ১৫ হাজার ৩৮৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১৪ হাজার ৭২৭ এবং নারী ৬৬০ জন। ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ বন্দি আছেন এসব কারাগারে। এ অবস্থায় অতিরিক্ত বন্দি সামাল দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে কারা কর্তৃপক্ষ। কারাগার সংশ্লিষ্টরা জানান, ধারণক্ষমতার সমান বন্দি না থাকলে কাজের পরিধি বেড়ে যায়। সেইসঙ্গে নিরাপত্তা শঙ্কাও কাজ করে।

কারাগার সূত্র জানায়, দুই হাজার ২৪৯ জনের ধারণক্ষমতার চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দির সংখ্যা পাঁচ হাজার ৩৬১ জন। এর মধ্যে মাদক মামলার আসামি এক হাজার ৬৯২ জন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দি আছেন ১৪৮ জন। এর মধ্যে নারী তিনজন। পুরুষ হাজতি চার হাজার ১৭৫ জন এবং নারী ১৬৯ জন। পুরুষ কয়েদি ৭৬৩ জন এবং নারী ৪৬ জন। বিদেশি বন্দি ১৩ জন, বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সদস্য ১২৭ জন। এক হাজার ৭৪২ জনের ধারণক্ষমতার কুমিল্লা কারাগারে বর্তমানে বন্দি আছেন দুই হাজার ৫৯ জন। এর মধ্যে হাজতি পুরুষ এক হাজার ৩৯৩ জন এবং নারী ৬০ জন। পুরুষ কয়েদি ৪৪২ জন এবং নারী ৩৯ জন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দি ১১৩ জন পুরুষ এবং ১০ জন নারী। মাদক মামলায় বন্দি আছেন ৮৭৮ জন। এই কারাগারে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সদস্য বন্দি ২০ জন। ৮৩০ জনের ধারণক্ষমতার কক্সবাজার কারাগারে বন্দি আছেন তিন হাজার ২২৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ হাজতি দুই হাজার ৭৩২ জন এবং নারী ১৪২ জন। পুরুষ কয়েদি আছেন ৩৩৮ জন এবং নারী ১০ জন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দি আছেন একজন। জঙ্গি সংগঠনের সদস্য ৯ জন। বন্দির মধ্যে এক হাজার ১১ জন মাদক মামলার আসামি।

৭৮০ জনের ধারণক্ষমতার ব্রাহ্মণবাড়িয়া কারাগারে বন্দি আছেন এক হাজার ৩২৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ হাজতি এক হাজার ৭৬ জন এবং নারী ৫৫ জন। পুরুষ কয়েদি আছেন ১৮১ জন এবং নারী ১৪ জন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দি আছেন একজন। মাদক মামলার আসামি আছেন ৩৪১ জন। ৫০০ জনের ধারণক্ষমতার নোয়াখালী কারাগারে বর্তমানে বন্দি আছেন ৯৩৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ হাজতি ৬৭৩ জন এবং নারী ১৮ জন। পুরুষ কয়েদি আছেন ২৩৪ জন এবং নারী ছয়জন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দি আছেন দুইজন। জঙ্গি সংগঠনের সদস্য একজন এবং মাদক মামলায় বন্দি আছেন ২৫৪ জন।

এভাবে এই বিভাগের বাকি সব জেলার কারাগারেও বন্দির সংখ্যা ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি। তাতে নানা ধরনের সমস্যা মোকাবিলা করছে কারাগারগুলো।

কারাগারের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, বেশি বন্দি থাকলে লোকবল বেশি দরকার। সমস্যা হচ্ছে লোকবল আছে ধারণক্ষমতার কম। আবার বেশি বন্দিদের নিয়মিত চিকিৎসাসেবা দেয়াও কঠিন হয়ে পড়েছে। কারণ কারা হাসপাতালগুলোতে বাড়তি বন্দির চিকিৎসা সুবিধা তেমন নেই বললেই চলে।

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার সূত্র জানায়, জেল কোড অনুযায়ী প্রত্যেক বন্দিকে ৩৬ বর্গফুটের জায়গা বরাদ্দ দেওয়ার কথা। অথচ চট্টগ্রামের ১১টি কারাগারে বন্দির সংখ্যা দ্বিগুণ হওয়ায় এ সুবিধা দেওয়া যাচ্ছে না। একজনের স্থলে দুই-তিনজন করে রাখতে হচ্ছে। একটি কক্ষে বন্দি থাকার কথা ২০ জন। বর্তমানে রাখতে হচ্ছে ৩৫-৪০ জন করে।