ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কর্মশালায় সিইসি

১ শতাংশ ভোট পড়লেও নির্বাচন আইনগত সঠিক

* নির্বাচনকালীন সময়ে মামলায় এজেন্টদের গ্রেপ্তার চান না সিইসি * কী এমন করেছি যে আমাদের ওপর আস্থা আনা যাচ্ছে না : ইসি রাশেদা
১ শতাংশ ভোট পড়লেও নির্বাচন আইনগত সঠিক

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, আমাদের দেশে যদি ১ শতাংশ ভোট পড়ে, ৯৯ শতাংশ না পড়ে তবুও ওই নির্বাচন আইনগতভাবে সঠিক। তবে প্রশ্ন উঠতে পারে- ওই নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে, কিন্তু আইনগতভাবে ঠিক কি না, সে প্রশ্ন আসবে না।

তিনি বলেন, আমরা লেজিটিমেসি (বৈধতা) নিয়ে মাথা ঘামাব না। আমরা দেখব ভোটটা অবাধ, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ হয়েছে কি না। ১ শতাংশ লোক মাত্র ভোট দিয়েছে। তারপরও যদি দেখি ভোটার যারা এসেছিলেন, তাদের তাড়িয়ে দেওয়া হয়নি, ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়েছে এবং তারা নির্বিঘ্নে, স্বাধীনভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন।

গতকাল রাজধানীর নির্বাচন ভবনে ‘অবাধ ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রার্থী ও পোলিং এজেন্টদের ভূমিকা’ শীর্ষক কর্মশালায় তিনি এসব কথা বলেন। নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে কর্মশালায় বক্তব্য দেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ, গণমাধ্যম ব্যক্তিসহ বিশিষ্টজনেরা।

ভার্চুয়াল মাধ্যমে ৬৪ জেলায় নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের মাধ্যমের রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিরা এই কর্মশালায় অংশ নিয়েছেন। ভোটকেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট নিশ্চিত করা ও তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনে জোর দিয়েছেন বক্তারা। একই সঙ্গে নির্বাচন কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষ দায়িত্ব পালনেরও তাগিদ দেন তারা।

প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন নিয়ে সিইসি বলেন, আমাদের দায়িত্ব কিন্তু অনেক কমে যাবে যদি নির্বাচনগুলো প্রতিযোগিতামূলক হয়। কেউ শব্দটা ব্যবহার করছেন পারটিসিপেটরি, কেউ ব্যবহার করছেন ইনক্লুসিভ। পারটিসিপেটরি ও ইনক্লুসিভের অর্থ কী- এটি নিয়ে আমি কনফিউশনে পড়েছি। পারটিসিপেটরি বলতে আমি যেটা বুঝেছি, ব্যাপক ভোটার যদি এসে ভোটদান করে, কে এলো কে এলো না। আমার সেটা নিয়ে মাথা ঘামাব না। আমার জেনুইন টার্নআউট হয়েছে ৭০ শতাংশ। তারপর যদি কনটেস্টেটেড হয়, তাহলে কনটেস্টের ক্ষেত্রে আমাদের অল্পকিছু রেফারির ভূমিকা থাকবে। কনটেস্টটা হবে পার্টিদের মধ্যে। ওরাই ওদের অবস্থান সুদৃঢ় রাখবে। সেই ক্ষেত্রে আমরা বিশ্বাস করি, ইফেকটিভ কনটেস্ট হলে ভোটকেন্দ্রের ভেতরে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভারসাম্য সৃষ্টি হয়ে যায়। আমাদের দায়িত্বটা সেই ক্ষেত্রে অনেকটা কমে আসে। এজন্য আমরা ইনক্লুসিভ নির্বাচন লাইক করি, এটা আমাদের দায়িত্ব না কাউকে নিয়ে আসা। তবুও আমরা আমাদের নৈতিক অবস্থান থেকে অনেকবার দাওয়াত করেছি আসুন, আমাদের সঙ্গে চা খান। ডিও লেটার পর্যন্ত লিখেছি, এর বেশি আমরা আর কিছু করতে পারছি না।

ভোট পরা নিয়ে তিনি আরো বলেন, আমাদের দেশে যদি এক শতাংশ ভোট পড়ে, ৯৯ শতাংশ না পড়ে লিগ্যালি দ্যাট ইজ রাইট (আইনগতভাবে এটা সঠিক)। কোশ্চেইন অব লেজিটিমেসি মে অ্যারাইজ। বাট দ্য কোশ্চেইন অব লিগ্যালিটি উইল নট অ্যারাইজ। সো দেয়ার ইজ এ কনফ্লিক্ট বিটুইন লিগ্যালিটি অ্যান্ড লেজিটিমেসি। আমরা লেজিটিমেসি নিয়ে মাথা ঘামাব না। আমরা দেখব ভোটটা অবাধ, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ হয়েছে কি না। ১ শতাংশ লোক মাত্র ভোট দিয়েছে। তারপরও যদি দেখি ভোটার যারা এসছিলেন, তাদের তাড়িয়ে দেওয়া হয়নি, ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়েছে এবং তারা নির্বিঘ্নে, স্বাধীনভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, আইনগত দিক থেকে লিগ্যালিটি আর লেজিটিমেসি। লিগ্যালি একটা জিনিস হলে লিগ্যালি ভ্যালিড। বাট লেজিটিমেসি (বৈধতা) একটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। যেখানে পারসেপশন তৈরি হয়। আমি ওই বিরোধে যেতে চাচ্ছি না। নির্বাচন কমিশন চেষ্টা করবে একটি ল’ফুল নির্বাচন করতে। আর রাজনৈতিক সমাজ লেজিটিমেসি নিয়ে ফাইট করবে। নির্বাচন কমিশন এই বিষয় নিয়ে ফাইট করবে না।

নির্বাচনকালীন ‘রাজনৈতিক মামলায়’ প্রার্থীর এজেন্টেরদের গ্রেপ্তার চান না সিইসি। তিনি বলেন, এতে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হবে। নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে। আমরা কলঙ্কিত হবো। তাই বারবার সরকারকে এটি জানাব, যদি তাদের অ্যারেস্ট (গ্রেপ্তার) করতে হয় ৬ মাস আগেই করে ফেলেন, নয়তো নির্বাচনের পর অ্যারেস্ট করেন।

আগে থেকেই পোলিং এজেন্টদের তালিকা প্রার্থী কাছ থেকে নেওয়ার প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, পোলিং এজেন্টের নাম প্রার্থীরা সাধারণত গোপন রাখেন। সকালবেলা দেওয়া হয়, যাতে তারা নিরাপদে ওখানে পৌঁছাতে পারেন। আমাদের কাছে তারা ১০০ জনের তালিকা দেবেন, ১৫০ জনের নাম দিলেন। দিলে পরে যদি আমরা দেখি ১৫০ জনই অ্যারেস্ট হয়ে গেছেন তখন আমাদের একটি নেগেটিভ ইমপ্রেশন নিতে হবে। কেন তারা এক মাস আগে অ্যারেস্ট হলেন না। কেন তারা দুই মাস আগে অ্যারেস্ট হলেন না। ভোটের আগের দিনই সবাই উধাও হয়ে গেল কেন। যেহেতু আমরা নির্বাচন করি, আমরা সৎভাবে করতে চাচ্ছি, আন্তরিকভাবে করতে চাচ্ছি। কোনো দলের পক্ষপাতিত্ব করার জন্য কিন্তু আমরা এ দায়িত্ব গ্রহণ করিনি।

তিনি আরো বলেন, এটিও হতে পারে- একটি লিস্ট যদি আগেই দেওয়া হলো আমরা তাদের প্রশিক্ষণ দেব। এরপর যদি সবাই পটাপট অ্যারেস্ট হতে থাকল, যে ১৫০ জন আছে এর মধ্যে ১৪০ জনই অ্যারেস্ট গেছে, তখন এটিই সুনির্দিষ্টভাবে বুঝাবে, যে তাদের অ্যারেস্ট করা হয়েছে বিশেষ একটা উদ্দেশে। আমরা ওই ক্ষেত্রেটিকেই কখনো চাই না। আমরা আশা করব, আমরা বারবার সরকারকে এটি জানাব, যদি তাদের অ্যারেস্ট করতে হয় ৬ মাস আগেই অ্যারেস্ট করে ফেলেন সবাইকে। নয়তো নির্বাচনের পর গিয়ে অ্যারেস্ট করেন। নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা উচিত হবে না। আামরাও কলঙ্কিত হব সেই ক্ষেত্রে, এটি আমি আন্তরিকভাবে মনে করি। এটিই সবাই বলবেন, পোলিং এজেন্ট যদি না থাকে, নির্বাচন তো গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এক্ষেত্রে নেতিবাচক জনমত তৈরি হবে।

এদিকে আক্ষেপ প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশনার (ইসি) রাশেদা সুলতানা বলেছেন, নির্বাচনে আমরা কী এমন করেছি যে আমাদের ওপর আস্থা আনা যাচ্ছে না। অনেককে বলতে শুনেছি আমরা নাকি লোক দেখানো কাজ করছি।

ইসি রাশেদা বলেন, আমাদের কাজ হচ্ছে জাল ভোটার থাকবে না। অবাধ ও উৎসমুখর ভোট করা। জনগণ যাকে ভোট দেবে সে নির্বাচিত হবে। সবাইকে নিয়ে কাজ করছি। তারপরও আমাদের ওপর অনেকে আস্থা রাখতে পারছে না।

সংলাপ প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার বলেন, সবাইকে এক করা আমাদের কাজ নয়। তারপরও সবাইকে নিয়ে বসেছি। জনগণের জন্য গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে কাজ করছি। সংলাপ করেছি। দুই দলকে সিইসি চিঠি দিয়েছে তারপরও আসেনি। যারা বলছে সুষ্ঠু ভোট করতে আমাদের সদিচ্ছা নেই এটা অমূলক। আমরা নাকি লোক দেখানো কাজ করছি, এরও ভিত্তি নেই।

তিনি আরো বলেন, দেশে নির্বাচন হতে হবে। এটা সংবিধানের মূল কাজ। সেই অনুযায়ী আমরা কাজ করছি।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম বলেছেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে অংশগ্রহণমূলক ভোট নিয়ে আশঙ্কা রয়েছে।

তিনি বলেন, রাজনৈতিক বিদ্যমান পরিস্থিতিতে অংশগ্রহণমূলক ভোট নিয়ে আশঙ্কা রয়েছে। সব দলকে ভোটে আনা এটা ইসির দায়িত্ব নয়, রাজনৈতিক দলের ভূমিকা রয়েছে।

পোলিং এজেন্ট নিয়ে তিনি বলেন, প্রার্থীকে অবশ্যই সব কেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট দিতে হবে। যদি না দেয় জবাবদিহির মধ্যে আনা যায় না। এজেন্ট বের করে দিচ্ছে, শুধু হাওয়ার মধ্যে অভিযোগ দিলে হবে না। প্রার্থীর একটা দায় রয়েছে। নির্বাচন কমিশনকেও সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।

নির্বাচন কমিশনের সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলি বলেন, ভোট অবাধ করতে সবাইকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে হবে। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ভালো ভূমিকা নিতে হবে। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় বাধা দেওয়া হয় যাতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়া যায়। ভোটের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ বলেছেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের আওতায় ৯০০-এর বেশি নির্বাচন হয়েছে। সব নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে বর্তমান নির্বাচন কমিশন বেস্ট।

তিনি বলেন, বর্তমান কমিশন বিজ্ঞ। অথচ বিএনপি-জামায়াত কমিশনের পদত্যাগ দাবি করছে। জামায়াতকে বহু আগে থেকে নিষিদ্ধ করা দরকার ছিল। কিন্তু জিয়াউর রহমান তাদের প্রতিষ্ঠিত করেছে। তারা নির্বাচন কমিশন ও সরকার মানে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে ভন্ডুল করেছে কে? তারা নির্বাচন কমিশনকে এখন পদত্যাগ করতে বলছে। আমার প্রশ্ন কমিশন কেন পদত্যাগ করবে?

তিনি আরো বলেন, সরকারের জন্য এই নির্বাচন চ্যালেঞ্জ। দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব, এবার তার প্রমাণ দিতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত