সুন্দরবন রক্ষায় সরকারের উদ্যোগের প্রশংসায় ইউনেস্কো

প্রকাশ : ০৫ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেছেন, ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট সুন্দরবনের সুরক্ষায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে সরকারের কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ সম্প্রতি সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পরিষদের ৪৫তম বর্ধিত সভায় গত এক দশকে বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগের ভূয়সীপ্রশংসা করা হয়েছে। সভায় পরিকল্পিত বনায়নের মাধ্যমে কার্যকর সংরক্ষণ ব্যবস্থা গ্রহণ করায় সুন্দরবন ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ-এর সম্পদের সুরক্ষা বৃদ্ধি করার জন্য বাংলাদেশের অব্যাহত প্রচেষ্টাকে সমর্থন জানানো হয়েছে। ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশনের অংশ হিসাবে ছয়টি কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিল করার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানানো হয়েছে। গতকাল বুধবার পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে সুন্দরবনের সুরক্ষা ও উন্নয়নে বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ ও সফলতা বিষয়ে প্রেস ব্রিফিং এ পরিবেশ মন্ত্রী এসব কথা বলেন। শাহাব উদ্দিন বলেন, সুন্দরবনের ওপর উন্নয়ন কার্যক্রমের প্রভাব নিরসনের লক্ষ্যে ২০২১ সালে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের স্ট্র্যাটেজিক এনভায়রনমেন্টাল অ্যাসেসমেন্ট করা হয় এবং এর আলোকে স্ট্র্যাটেজিক এনভায়রনমেন্টাল ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান প্রস্তুত করায় ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটি বাংলাদেশের ভূয়সীপ্রশংসা করেছে। কোভিড-১৯-এর কঠিন সময়ে ন্যাশনাল অয়েল অ্যান্ড কেমিক্যাল স্পিল কন্টিনজেন্সি প্ল্যান ২০২০ গ্রহণ এবং জরুরি পরিস্থিতিতে সম্ভাব্য বিরূপ প্রভাব প্রশমনে এটির বাস্তবায়নের জন্য কমিটি সভায় বাংলাদেশের প্রশংসা করা হয়েছে। ভারত ও বাংলাদেশ অংশে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য উন্নয়নে যৌথ ব্যবস্থাপনার কার্যক্রমকে স্বাগত জানানো হয়েছে এবং এই কার্যক্রম আরো জোরদার করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, সুন্দরবন ও এর জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের লক্ষ্যে ২০৩০ সাল পর্যন্ত সরকার কর্তৃক গাছকাটা, ক্রয়-বিক্রয়, ব্যবহার ও পরিবহন নিষিদ্ধ করেছে। সুন্দরবনে মোট আয়তনের ৫৩.৫২ শতাংশ রক্ষিত এলাকা থেকে সব ধরনের সম্পদ আহরণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সরকার বন্যপ্রাণীর প্রধান প্রজননকাল জুন, জুলাই এবং আগস্ট এই ৩ মাস সুন্দরবন থেকে সব ধরনের বনজদ্রব্য সংগ্রহ এবং পর্যটকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ২০২১ সাল থেকে রাসমেলা বন্ধ করায় সুন্দরবনে এ সময় আগের মতো হরিণ শিকারের কোনো ঘটনা ঘটেনি এবং সুন্দরবনের পরিবেশের ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়েনি। শাহাব উদ্দিন বলেন, বাঘ সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ টাইগার অ্যাকশন প্ল্যান ২০১৮-২০২৭ প্রণয়ন করা হয়েছে। বাঘ জরিপ, বাঘের শিকারবিষয়ক প্রাণী জরিপ, বাঘ মানুষ দ্বন্দ্ব নিরসনে লোকালয় সংলগ্ন এলাকায় ৬০ কিলোমিটার দীর্ঘ নাইলনের বেষ্টনী নির্মাণ, জলোচ্ছ্বাসের সময় বন্যপ্রাণীর আশ্রয়ের জন্য মাটির উঁচু টিলা নির্মাণসহ বাঘ সংক্রান্ত অন্যান্য গবেষণা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বনমন্ত্রী বলেন, সরকার সুন্দরবনে স্মার্ট পেট্রোলিং ব্যবস্থা চালু করেছে এবং এর মাধ্যমে সুন্দরবনের বিভিন্ন অপরাধ দমনে উল্লেখযোগ্য সফলতা পাওয়া গেছে। জানুয়ারি ২০১৮ থেকে জুন ২০২৩ পর্যন্ত স্মার্ট পেট্রোলিং-এর মাধ্যমে ২ হাজার ৪৯৮ জন অপরাধীকে আটক এবং ১ হাজার ১৬৯টি ট্রলার-জলযান জব্দ করা হয়েছে। সুন্দরবনে বিভিন্ন বন্যপ্রাণী সুপেয় পানীয় জল সরবরাহের জন্য ৪টি নতুন পুকুর খনন এবং ৮৪টি বিদ্যমান পুকুর পুনঃখনন করা হয়েছে। সুন্দরবনের অভ্যন্তরে বন বিভাগের বিভিন্ন ক্যাম্প, স্টেশন, রেঞ্জে অকেজো টেলিযোগাযোগব্যবস্থা পুনঃস্থাপন করা হয়েছে। সহব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণ, ইকোলজিক্যাল মনিটরিংয়ের ফ্রেমওয়ার্ক প্রস্তুত এবং টহলের জন্য জলযান ক্রয় করা হচ্ছে। ইকোটুরিজম সুবিধা সম্প্রসারণ ও উন্নয়নে কাজ চলমান আছে। তিনি বলেন, বর্তমানে সুন্দরবন ও এর জীববৈচিত্র্যের সংরক্ষণ ও উন্নয়নে সরকার মোট ২ শত ৯৫ কোটি ৯৫ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ৬টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে সুন্দরবনের প্রতিবেশ, বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলা, বিজ্ঞানভিত্তিক বন ব্যবস্থাপনা ও উপকূলীয় এলাকায় সবুজ বেষ্টনী তৈরির কাজ চলমান রয়েছে। বনমন্ত্রী বলেন, ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পরিষদ সুন্দরবনের অধিকতর টেকসই ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে এবং ভবিষ্যতে সুন্দরবনের ভূমি ও সামুদ্রিক ব্যবস্থার বাস্তুসংস্থান উন্নয়নে পরিবেশ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা অনুযায়ী আরো গবেষণা পরিচালনা এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছে। দীর্ঘমেয়াদি সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য, বিশ্ব ঐতিহ্য এলাকায় ভবিষ্যতের সব শিল্প কারখানা ও অন্যান্য উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণকালে সুন্দরবনের ওপর প্রভাব মূল্যায়নে বিশেষভাবে জোর দেয়া হয়েছে। সুন্দরবনের সুরক্ষা ও উন্নয়নে সরকারের উদ্যোগ অব্যাহতভাবে বাড়ানো হচ্ছে।