ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিনারে তথ্যমন্ত্রী

সর্বত্র উন্নয়ন : প্রবাসীদের কাছে বাংলাদেশ এখন বড়ই অচেনা

প্রকাশ : ০৬ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ঢাবি প্রতিনিধি

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, আজকে দেশের যে উন্নয়ন হয়েছে; প্রতিটি মানুষের যে ভাগ্যের উন্নয়ন হয়েছে, তা আমরা যারা এই উন্নয়নের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি, তারা এটা অনুভব করতে পারি না।

আজ থেকে ১৫ বছর আগে যে মানুষটি বিদেশে গেছেন, সে এখন দেশে এসে আর এই দেশকে চিনতে পারে না। সে যখন গ্রামে যায় তখন তার গ্রামকে চিনতে পারে না। সে দেখে আগের কুঁড়েঘরগুলো আর নাই হারিয়ে গেছে গেছে। সবগুলোই টিনের চালা, আধা পাকা ও পাকা বাড়িতে রূপান্তরিত হয়েছে। গ্রামের যে মেঠোপথ সেখানে পিচঢালা পথ তৈরি হয়েছে। তখন সে বুঝতে পারে দেশটা কোথায় গেছে। টেকসই অর্থের জন্য পুঁজিবাজারের গুরুত্ব, দেশের অর্থনীতিতে ক্যাপিটাল মার্কেট ও মানি মার্কেটের ভূমিকা ও আগামী দিনে দেশের অর্থনীতি উন্নয়নের নানা দিক নিয়ে গতকাল দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ ২০২৩ উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকারস অ্যাসোসিয়েশন এই সেমিনারের আয়োজন করে। তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে মানি মার্কেট ও ক্যাপিটাল মার্কেটের বিরাট অবদান রয়েছে। অর্থনীতিকে সচল রাখতে হলে এর ভূমিকা অগ্রগণ্য এবং এই দুটি যদি একসাথে কাজ করে তাহলে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে অত্যন্ত সহায়ক হিসেবে কাজ করবে। আমাদের দেশে মানি মার্কেটের অনেক গ্রোথ হয়েছে; এটা কখনোই হতো না যদি না বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার ভালো না হতো এবং ক্যাপিটাল মার্কেটের দিকে যদি আমরা তাকাই সেখানেও অনেক ভালো গ্রোথ হয়েছে।

সরকারের অতীত ও বর্তমানের বিভিন্ন অর্থনৈতিক উন্নয়ন তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, আমাদের অর্থনীতির আকার গত ১৫ বছরে প্রায় ৫ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে বাজেটের আকার বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ১২ গুণ। আমরা যখন ২০০৯ সালে সরকার গঠন করি তখন বাজেটের আকার ছিলো ৮৮ হাজার কোটি টাকা। সেটি বাস্তবায়িত হয় ৮১ হাজার কোটি টাকায়। আর এখন তা ৭ লাখ ৭৩ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা। বাংলাদেশে যেখানে বাজেটের আকার বৃদ্ধি পেয়েছে সেখানে বোঝা যায় সমৃদ্ধি এসেছে। ২০০৬ সালে আমাদের মাথাপিছু আয় ছিল ৫০৭ ডলার আর ২০০৭ সালে ছিলো ৬০০ ডলার। এখন তা ২ হাজার ৮৫৯ ডলার। যদি ডলারের ডিভ্যালুয়েশন না হতো তাহলে এটা ৩ হাজার ছাড়িয়ে যেত।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, করোনার মধ্যে পৃথিবী যখন থমকে গেছে; মানুষ ঘরের মধ্যে আবদ্ধ তখন আমাদের মাথাপিছু আয় ভারতকে ছাড়িয়ে গেল। এটা নিয়ে তখন ভারতে হৈচৈ শুরু হয়ে গেল। সামাজিক অঙ্গন, টেলিভিশন, টকশোতে হৈচৈ এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা শুরু হলো। পাকিস্তানের পার্লামেন্টে তুলকালাম কাণ্ড ঘটে গেল। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী কয়েক দফা স্বীকার করলেন- বাংলাদেশ আমাদের থেকে অনেক এগিয়ে। অথচ আমাদের দেশে প্রশংসার ঢেউ দেখতে পাই না। যেভাবে প্রশংসা হওয়া দরকার, সেভাবে হয় না। আর যারা সেমিনার, টেলিভিশনের আলোচনায় অংশগ্রহণ করে তাদের কাছ থেকেও আমরা প্রশংসা দেখতে পাই না।

সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ওপর দিয়ে যখন প্রথম যাচ্ছিলাম তখন আমার ড্রাইভার বলছিল- স্যার দুবাই দুবাই মনে হচ্ছে। আর একজন বলছিল- স্যার আমরা সিনেমায় ইউরোপ, আমেরিকার যে শহরগুলো দেখি, সেরকম মনে হচ্ছে। এটিই বদলে যাওয়া বাংলাদেশ এবং এটি সম্ভব হয়েছে নেতৃত্ব ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকার কারণে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা যদি না থাকতো তাহলে কি পদ্মা সেতু নিজেদের টাকায় করা সম্ভব হতো? রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা যদি না থাকত, তাহলে আজকে মাথাপিছু আয় ৬০০ ডলার থেকে ৩ হাজার ডলারে নিয়ে যাওয়া কি সম্ভব হতো? আজকে পাকিস্তানের দিকে তাকিয়ে দেখুন সেখানে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না থাকার কারণে কিছুদিন আগে পর্যন্ত তারা দেউলিয়া হওয়ার পর্যায়ে ছিল; সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি গার্মেন্টস সেক্টরে ২২ শতাংশ শ্রমিক সংকট, কৃষিখাতে ধান কাটার লোক নাই এবং যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন আমরা দেখতে পাচ্ছি তাতে সামনে আমাদের কর্মদক্ষ লোকের অভাব হবে।

সুতরাং, আমাদের মনোযোগী হতে হবে বিনিয়োগে এবং এই বিনিয়োগ এমনভাবে করতে হবে, যাতে আমরা ফেইল না করি; যেভাবে এমডিজি বা অন্যান্য লক্ষ্যে কিংবা কোনো লোন পেমেন্টে বাংলাদেশ কখনো ফেইল করেনি। আমাদের সামনের গোল হচ্ছে এসডিজি এবং ডেলটা প্ল্যান সেগুলোতেও আমরা ফেইল করতে চাই না। তবে সেটার জন্য যে ৯৬৫ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন, সেটা এই ৭ বছরের মধ্যে আমাদের নিজেদের সম্পদ থেকে জোগাড় করাটা একটু কঠিন।

তিনি আরো বলেন, মানি ও ক্যাপিটাল মার্কেটকে যৌথভাবে কাজ করতে হবে এবং সেটার জন্য আমাদের দেশীয় বিনিয়োগ হয়ত সাড়ে ৪০০ বিলিয়নের মতো সম্ভব হবে; বাকিটা বাইরে থেকে আনতে হবে। এই দুইটার জন্য এখন আমাদের দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ দরকার। এর জন্য আমাদের বিনিয়োগ ফ্রেন্ডলি ডেভেলপ করা দরকার এবং বাংলাদেশ গত কয়েক বছর আমাদের সকল ব্যবসা বাণিজ্য অনেক ভালো করছে কিছু সময় আপস অ্যান্ড ডাউন থাকে।

এই মেসজগুলো আমাদের বিদেশিদেরা যদি পায় এবং সামনের দিনগুলোয় যেখানে বিনিয়োগ করলে ভালো রিটার্ন পাওয়ার সম্ভাবনা আছে- এই জিনিসগুলো আমরা এই ইনভেস্ট উইকের মাধ্যমে পৌঁছে দিতে চাই।

‘টেকসই অর্থের জন্য পুঁজিবাজার’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি মো. রিয়াদ মতিন। মূল প্রবন্ধের ওপর আলোচনা করেন চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক ইসতার মহল, শান্তা ইক্যুইটি লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান আরিফ খান, ঢাবি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তারেক। স্বাগত বক্তব্য দেন অনুষ্ঠানের সভাপতি ও বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাইদুর রহমান। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবু।