ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

দুদকের অর্থপাচার ও অর্থ আত্মসাৎ মামলা

অপরাধ করিনি, শঙ্কিত কেন হব : ড. ইউনূস

সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতেই তলব : দুদক সচিব
অপরাধ করিনি, শঙ্কিত কেন হব : ড. ইউনূস

আমি কোনো অপরাধ করিনি, শঙ্কিত কেন হব, এটা লিগ্যাল বিষয় বলে উল্লেখ করেছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, আমাকে ডেকেছে তাই এসেছি। অভিযোগের বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই। এটা আইনি বিষয়, আমার আইনজীবী বলবেন।

গতকাল সকালে দুদকের ডাকে কার্যালয়ে হাজির হন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন আইনজীবীরা। সকাল ৯টা ৩৭ মিনিট থেকে ১০টা ৫৮ মিনিট পর্যন্ত তাকে সংস্থাটির পরিচালক বেনজির আহমেদের নেতৃত্ব একটি টিম জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বের হলে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রশ্ন করা হলেও তিনি আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য দেননি। পরে আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল মামুন সাংবাদিকদের সঙ্গে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আইনজীবী আব্দুল আল মামুন শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের ২৫ কোটি ২২ লাখ টাকা আত্মসাতের মামলা মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও কাল্পনিক অভিযোগের ভিত্তিতে করা বলে দাবি করেন। শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের অর্থ আত্মসাতের মামলায় আগের দিন গতকাল বুধবার গ্রামীণ টেলিকমের তিন পরিচালককে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। গত ২৭ সেপ্টেম্বর গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৩ জন আসামিকে তলব করে দুদক।

গত ৩০ মে গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের ২৫ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। সংস্থার উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে মামলাটি করেন।

মামলার আসামিরা হলেন- গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূস, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজমুল ইসলাম, পরিচালক ও প্রাক্তন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশরাফুল হাসান, পরিচালক পারভীন মাহমুদ, নাজনীন সুলতানা, মো. শাহজাহান, নূরজাহান বেগম ও পরিচালক এস. এম হাজ্জাতুল ইসলাম লতিফী। এছাড়া অ্যাডভোকেট মো. ইউসুফ আলী, অ্যাডভোকেট জাফরুল হাসান শরীফ, গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মাহমুদ হাসান ও প্রতিনিধি মো. মাইনুল ইসলামকে আসামি করা হয়েছে।

এদিকে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেছেন, সুনির্দিষ্ট কিছু তথ্যের ভিত্তিতেই দুদক গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ সাতজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।

তিনি বলেন, গ্রামীণ টেলিকমের কর্মচারীরা কলকারখানা অধিদপ্তরে একটি অভিযোগ করেন। সেই অভিযোগ তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পেয়ে কলকারখানা অধিদপ্তর প্রতিবেদন পাঠায় দুদকে। অভিযোগগুলোর কিছু বিষয় দুদকের তফসিলভুক্ত হওয়ায় মামলার তদন্ত করেছে দুদক। তদন্তের অংশ হিসেবেই দুদক তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।

গতকাল অর্থপাচার ও আত্মসাতের অভিযোগে করা মামলায় নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে দুদকে তলব ও জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে জানতে চাইলে দুদক সচিব এসব কথা বলেন।

ড. ইউনূসের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা এবং ব্যক্তি ইমেজের প্রভাবে দুদকের তদন্ত প্রভাবিত করার সুযোগ আছে কি না, সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দুদক সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, দুদক কারো ব্যক্তিগত পরিচয় দেখে না। প্রভাবিত করার ও সুযোগ নেই। অপর এক প্রশ্নের জবাবে দুদক সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, কাউকে বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা ও গ্রেপ্তারের জন্য সুনির্দিষ্ট তিনটি বিষয় অনুসরণ করা হয়। তদন্তকারী কর্মকর্তা যদি মনে করেন যার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি আত্মগোপন করতে পারেন কিংবা আলামত নষ্ট করতে পারেন অথবা সাক্ষীদের প্রভাবিত করতে পারেন, সে ক্ষেত্রে তদন্ত কর্মকর্তা আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে পারেন।

দুদক সচিব লিখিত বক্তব্যে আরো বলেন, ২০১০ থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরের নিট মুনাফার ৫ শতাংশ লভ্যাংশ বণ্টনের অনিয়মের বিষয়ে গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন তাদের নিজস্ব প্যাডে একটি অভিযোগ দাখিল করে। এই অনিয়ম সংক্রান্ত কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে- মর্মে একটি প্রতিবেদন দাখিল করে। প্রতিবেদনসহ গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানির শ্রমিক-কর্মচারীদের অভিযোগ দুদকের তফসিলভুক্ত হওয়ায় দুর্নীতি দমন কমিশন বরাবর পাঠান।

অভিযোগগুলো নিম্নরূপ : ১. গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে বণ্টনের জন্য সংরক্ষিত লভ্যাংশের ৫ শতাংশ অর্থ লোপাটের অভিযোগ। ২. তাদের পাওনা ৩৬৪ কোটি, ১৭ লাখ ৯ হাজার ১৪৬ টাকা পরিশোধকালে অবৈধভাবে অ্যাডভোকেট ফি ও অন্যান্য ফির নামে ৬ পার্সেন্ট অর্থ কর্তনের অভিযোগ। ৩. তাদের কল্যাণ তহবিলে বরাদ্দকৃত সুদসহ ৪৫ কোটি ৫২ লাখ ১৩ হাজার ৬৪৩ টাকা বিতরণ না করে আত্মসাতের অভিযোগ।

৪. কোম্পানি থেকে ২ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে অন্যান্য সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তরের অভিযোগ।

অভিযোগগুলো অনুসন্ধান করার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশন, প্রধান কার্যালয়, ঢাকার পক্ষ থেকে একটি অনুসন্ধান দল গঠন করা হয়। অনুসন্ধানী দল অনুসন্ধান শেষে অভিযোগটির প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় দুর্নীতি দমন কমিশনে মামলার সুপারিশ করে একটি অনুসন্ধান প্রতিবেদন দাখিল করে। ওই প্রতিবেদন কমিশনে উপস্থাপিত হলে মামলার অনুমোদন দেওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে কমিশনের পক্ষে মো. গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ ধারা ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ৪ (২) (৩) ধারায় মামলাটি করেন।

যা বলা হয়েছে মামলার এজাহারে : গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বোর্ডের সদস্যরা অসৎ উদ্দেশ্যে অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গ করেছেন। তারা ভুয়া সেটেলমেন্ট অ্যাগ্রিমেন্টকে খাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে, জাল-জালিয়াতির আশ্রয়ে গ্রামীণ টেলিকম থেকে ২৫ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা আত্মসাৎ করে স্থানান্তর-রূপান্তরের মাধ্যমে অবস্থান গোপন করে পাচার করায় ১৩ জনের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি ১৮৬০-এর ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ ধারা ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় একটি মামলার সুপারিশ করে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। কমিশনের অনুমোদন প্রেক্ষিতে দুদক গত ৩০ মে মামলা করে। বর্তমানে সাত জনের বক্তব্য রেকর্ড করা হয়েছে। বাকিদেরও বক্তব্য রেকর্ড করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। দুদক সচিব আরো বলেন, ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মাধ্যমে গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানির শ্রমিক-কর্মচারীরা অভিযোগ দিয়েছেন বিধায় দুদক কর্তৃক হয়রানির অভিযোগ সঠিক নয়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত