সংবাদ সম্মেলনে দেশবাসীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী

বিএনপির মিথ্যাচার বিশ্বাস করবেন না

* ভোটের অধিকার শেখাতে হবে না * স্যাংশন দেবে আবার, নিরাপত্তাও চাইবে * তত্ত্বাবধায়ক নিয়ে কেউ কথা বলেনি

প্রকাশ : ০৭ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  বিশেষ প্রতিনিধি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীর উদ্দেশ্যে বলেছেন, মিথ্যা বলা বিএনপির অভ্যাস। বিএনপি নেতারা মাইক লাগিয়ে কী হারে মিথ্যা কথা বলে, সেটা সবাই জেনে নেন। তাদের সবকিছুকেই খাটো করে দেখার চেষ্টা থাকে। এ বিষয়ে দেশবাসী যেন একটু সচেতন থাকে। তাদের মিথ্যা কথায় কেউ কান দেবেন না। মিথ্যা কথা কেউ বিশ্বাস করবেন না। এটাই আমার আহ্বান।

গতকাল বিকালে গণবভনে জাতিসংঘের ৭৮তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগদান ও যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য সফরের নানা দিক তুলে ধরতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন নিয়ে খুব বেশি কথা শুনি। যারা ভোট চুরি ও ডাকাতি করেছে, তাদের কাছ থেকে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা শুনতে হয়। সব জায়গায় এটা প্রচার করে বেড়াচ্ছে। সামরিক স্বৈরশাসক যখন ছিল, তখন তো আমরা সংগ্রাম করেছি, মানুষের ভোটের অধিকার নিয়ে। আমরা ক্ষমতায় এসে নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করেছি। জনগণের ভোটের অধিকার আওয়ামী লীগই তাদের হাতে ফিরিয়ে দিয়েছে। বিএনপি জানে নির্বাচন করে জনগণের ভোট পাবে না। তারা সব জায়গায় গিয়ে ধরনা দিয়ে বেড়াচ্ছে। কারণ, তাদের তো কোটি কোটি টাকা। ক্ষমতায় থেকে এত বেশি টাকা মানি লন্ডারিং করেছে এবং এত বেশি টাকার মালিক হয়েছে যে এখন সেই টাকা খরচ করে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই আজকে বাংলাদেশের উন্নয়ন হয়েছে। এর আগে তো অনেকে ক্ষমতায় ছিল, তারা মানুষকে কী দিয়েছে? মানুষ একবেলাও ঠিকমতো খেতে পারত না। এখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলে সব ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। মানুষ ভোট ও ভাতের অধিকার পেয়েছে। এখন নির্বাচন নিয়ে এত কথা কেন? তারা কি আমাদের এই এগিয়ে যাওয়া চায় না? সন্দেহ হয় রে! হঠাৎ সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে মাতামাতি সন্দেহজনক। আওয়ামী লীগকে তো জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দেয়। আমরা কাজের মধ্য দিয়ে আস্থা অর্জন করি। আমরা তো সেই আইয়ুব খানের আমল থেকে আন্দোলন করি, রাস্তায় থাকি। এমন নয় যে, নতুন এসেছি। স্কুলজীবন থেকেই রাস্তায় আন্দোলন-সংগ্রাম করছি। আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে করেছি, ইয়াহিয়া খানের বিরুদ্ধে করেছি। জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া সবই তো ভোট চোর। আওয়ামী লীগের ভোট চুরি করা লাগে না। আমাকে ভোটের অধিকার শেখাতে হবে না।

মার্কিন নিরাপত্তা উপদেষ্টা সুলিভানের সঙ্গে বৈঠকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে আপনার কোনো কথা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে কেউ কোনো কথা বলেনি। আমার মনে পড়ে না, এ ধরনের কোনো কথা হয়নি। কেউ জিজ্ঞেসও করেনি। ২০০৭-এ তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে যে অভিজ্ঞতা, এরপর এটা কেউ চায়?

বিএনপির আন্দোলন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা আন্দোলন করে যাচ্ছে, আমরা তো কোনো বাধা দিচ্ছি না। লোক সমাগম করে যাচ্ছে, খুব ভালো কথা। এতকাল চুরিচামারি করে যত পয়সা বানিয়েছিল এবং যত টাকা মানিলন্ডারিং হয়েছিল, সেগুলো এখন ব্যবহার হচ্ছে। অন্তত সাধারণ মানুষের কাছে কিছু টাকা তো যাবে। তারা যত আন্দোলন করবে, সাধারণ মানুষের পকেটে কিছু টাকা যাবে। মানুষ কিছু টাকা পাক, সেটা তো ভালো। আমি সাংবাদিকদের বলব, তাদের এই টাকার উৎস কি সেটা খবর নেওয়ার দরকার, তারা এত টাকা কোথা থেকে পায় এবং এত টাকা কীভাবে খরচ করে, সেটার একটু খোঁজ নেওয়া দরকার।

শেখ হাসিনা বলেন, আমি বলেছি, কিছু বলার দরকার নেই তারা আন্দোলন করতে থাকুক। তবে হ্যাঁ, মানুষের যদি কোনো ক্ষতি করতে চেষ্টা করে, অগ্নিসন্ত্রাস ওই ধরনের কিছু করে তখন তো ছাড়ব না। কারণ আমাদের সঙ্গে তো জনগণ আছে, আমাদের কিছু করা লাগবে না। জনগণকে ডাক দিলে তারাই ঠান্ডা করে দেবে। বিএনপি- জামায়াত যখন অগ্নিসন্ত্রাস করেছিল তখন সাধারণ মানুষই কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ছিল, এবারও তা হবে।

তিনি বলেন, সামনে পূজা, আমরা সব ধরনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করি এবং করব। আমরা অনুরোধ করেছি পূজামণ্ডপগুলো যেখানে সেখানে না করে, কলকাতায় এত বেশি জনসংখ্যা কয়টা পূজামণ্ডপ হয় সেই হিসেবে তো বাংলাদেশে অনেক বেশি হয়। তারপরও আমাদের স্থানীয় জনগণ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সবাই সচেতন আছে এটার নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য। বিএনপির আমলের অত্যাচার থেকে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান কেউ বাদ যায়নি। আবার সেটা যেন না করতে পারে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি কেউ যেন নষ্ট করতে না পারে, সে ব্যাপারেও সচেতন থাকতে হবে।

সরকারপ্রধান বলেন, তারা সরকার পতনের আন্দোলন করে যাচ্ছে। তারা তো তারিখ দিয়েই যাচ্ছে অমুক তারিখ ফেলে দিবে, তমুক তারিখ ফেলে দিবে। দিতে থাক অসুবিধা নেই, আমি এটাতে মাইন্ড করছি না। আমি মনে করি ভালো। আন্দোলনটা থাকলে মানুষ বেশ গরম থাকে, আমার পার্টিও ভালো থাকে। এখন এমপি সাহেবরাও দৌড়াচ্ছে এলাকায়, এখন সবাই দৌড়াদৌড়ি, ছোটাছুটি শুরু করে দিয়েছে। যার যার পজিশন ভাটায় টান দিয়েছিল, এখন দেখি তারা ভালোর দিকে যাচ্ছে। তবে পূজার সময় যেন কোনো অপকর্ম না করতে পারে, সেজন্য সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।

আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন কোন বিবেচনায় দেওয়া হবে তা জানিয়েছে আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, মানুষের কাছে যাদের গ্রহণযোগ্যতা আছে, সেটাই আমরা বিবেচনায় দেখব, বিবেচনা করব। প্রতি ছয় মাস পর পর আমি কিন্তু সার্ভে করি। কারো পজিশন খারাপ হলে সরাসরি মুখের ওপর বলে দিই। আমরা যথেষ্ট সচেতন বলে নির্বাচনে জনগণের আস্থা পাই, ভোট পাই এবং নির্বাচনে জয়ী হই।

শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের কাছে কার গ্রহণযোগ্যতা বেশি, যারা সংসদ সদস্য আছেন তারা কতটুকু জনগণের জন্য কাজ করেছেন, জনগণের আস্থা, বিশ্বাস কতটুকু অর্জন করেছেন, আমরা সেটাকেই বিবেচনায় নিই। সেটা বিবেচনায় নিই বলে আমরা নির্বাচনে জয়ী হয়ে মানুষের জন্য কাজ করতে পারি। আমাদের সংসদ সদস্য, মন্ত্রীরা যদি আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ না করত, তাহলে বাংলাদেশের এত পরিবর্তন হতো না। কতগুলো দুর্যোগ এসেছে, দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের কত নেতাকর্মী জীবন দিয়েছে। এই করোনার সময় আমাদের অনেক নেতাকর্মী, অনেক সংসদ সদস্য মানুষের সেবা করতে গিয়ে জীবন দিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণ সম্পৃক্ত ও দল সুসংগঠিত না হলে কোনো সমস্যা মোকাবিলা কঠিন হয়ে যায়। আমরা পারি শুধু একটাই কারণে আমাদের সুসংগঠিত রাজনৈতিক দল আছে, আমাদের কর্মীরা নিবেদিত প্রাণ। যখনই মানুষের জন্য ডাক দিয়েছি তারা ছুটে গেছে মানুষের কাছে।

‘দুর্নীতির সুবিধার্থে বড় বড় মেগা প্রকল্প করেছে এ সরকার, কিন্তু গরিবের জন্য কিছুই করেনি।’ বিএনপির নেতাদের এমন বক্তব্যের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ঘরে বসে যারা বলেন দরিদ্রদের জন্য কিছু করিনি, যখন ৪১ ভাগ ছিল দারিদ্র্য, তখন তারা ছিলেন ক্ষমতায়, কী করেছেন? আর আমরা ক্ষমতায় এসে সেটা ১৮ ভাগের নিচে নামিয়েছি। সারা দেশে ২ কোটি ৫০ লাখ দুস্থদের খাদ্য সহায়তা (ভিজিএফ) দিচ্ছে। ৩৩ লাখ মানুষকে খাদ্য ও অর্থ সহায়তা (জিআর) দিয়ে যাচ্ছি। কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা)/কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) ২৮ লাখ জনকে দিয়েছি। ওপেন মার্কেট সেল (ওএমএস)-এ ৪৫ লাখ মানুষকে খাদ্য দিয়েছি। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে ৬৩ লাখ মানুষকে খাদ্য দিয়েছি। বয়স্কভাতা কার্যক্রমে ৫৭ লাখ লোক উপকারভোগী। বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা দুস্থ মহিলা ভাতা কার্যক্রমে ২৪ লাখ ৭৫ হাজার মানুষ উপকার পেয়েছে। ২৪ লাখ প্রতিবন্ধী ভাতা পেয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা স্তরের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য উপবৃত্তি কর্মসূচিতে ১ কোটি ৪০ লাখ ছাত্র-ছাত্রীকে বৃত্তি দিয়েছি। মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও মাদরাসা শিক্ষা স্তরের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য উপবৃত্তি ৫৭ লাখ বরাদ্দ দিয়েছি।

তিনি স্বীকার করে বলেন, এখন করোনার ধাক্কা ও যুদ্ধের ফলে আমদানি ব্যয় বেড়েছে। তাই দ্রব্যমূল্য একটু বেশি। মানুষের কষ্ট হচ্ছে, আমরা বুঝি। নিরাপত্তা হুমকি নিয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসের অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমেরিকায় যিনি অ্যাম্বাসেডর আছেন, তাকে আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম আমেরিকা সরকার থেকে আমার অ্যাম্বাসেডরকে কি ধরনের নিরাপত্তা দেওয়া হয়। তিনি বললেন শুধু আমাদের অ্যাম্বাসিতে তারা কিছু নিরাপত্তা দেয়। তখন আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন, আমরা তো আমেরিকা অ্যাম্বাসিতে নিরাপত্তার জন্য ১৫৮ জন পুলিশকে ডিপ্লয় করেছি এবং এখানে যে অ্যাম্বাসেডর আছে তার জন্য গানম্যান দেওয়া আছে সিভিল ড্রেসে। কাজেই এখানে তার নিরাপত্তার তো এমন কোনো ঘাটতি নেই।

তিনি বলেন, হোলি আর্টিজানের পর কয়েকটা দেশ শঙ্কিত ছিল, তখন তাদের কিছু আলাদা ব্যবস্থা করা হয়েছিল। হলি আর্টিজানের পর আমাদের দেশে আর কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হয়নি। এর বাইরেও তো অনেক অ্যাম্বাসি আছে, যারা বলে যে ওরা পেলে আমরা কেন পাব না। তাছাড়া এখন সেরকম কোনো অসুবিধা নেই। আমাদেরও পুলিশ দরকার এখন সারা দেশের জন্য। কাজেই সেটা উইড্র করা হয়েছে। কিন্তু তার সঙ্গে তো গানম্যান দেওয়া আছে। এছাড়া তাদের নিজস্ব নিরাপত্তার ব্যবস্থাও কিন্তু অ্যাম্বাসির ভেতর আছে। এটা নিয়ে বারবার প্রশ্ন হচ্ছে, কিন্তু এটার কোনো অর্থ নেই। আমার অ্যাম্বাসেডর তো কোনো নিরাপত্তা পায় না।

তিনি বলেন, আমেরিকাতে প্রতিদিনই গুলি হয়। স্কুলে গুলি, শপিংমলে গুলি, খাবার দোকানে গুলি, বাড়ির ভেতরে গিয়ে গুলি করে মানুষ মেরে ফেলে। আমরা তো এমনিতেই শঙ্কায় থাকি আমাদের দেশের মানুষদের নিয়ে। বাঙালি এক মহিলা রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল তাকে ছুরি মারা হলো। একজন মুক্তিযোদ্ধা মসজিদ থেকে ফিরছিলেন তাকে গুলি করে মারা হলো। আওয়ামী লীগের ভাইস প্রেসিডেন্টকে মারল। যত্রতত্র গোলাগুলি- তাদের নিজেদের দেশ তো তাদের নিজেদেরই সামাল দেওয়া উচিত। ওখানে নিরাপত্তা সমস্যা, আমাদের দেশে তো নিরাপত্তা সমস্যা নেই। আমরা সন্ত্রাসবাদ জঙ্গিবাদকে জিরো টলারেন্স ঘোষণা দিয়েছি। অন্তত সেটি তো এখন আমরা কয়েক বছর ধরে রাখতে পেরেছি। আমাদের যারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা তারা অনেক ভালো কাজ করছে। আইনশৃঙ্খলা সংস্থার প্রতি স্যাংশন দেবে, আবার তাদের কাছ থেকে নিরাপত্তা চাইবে- এটা আবার কেমন কথা। আমি সেই প্রশ্নটাও করেছি।

সংবাদ সম্মেলনে রিজার্ভ কমার ব্যাখা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনার সময় আমাদের আমদানি বন্ধ ছিল, রফতানি বন্ধ ছিল, যাতায়াত বন্ধ ছিল। যার জন্য রিভার্জ বেড়ে গেল। এরপর যখন সব খুলে গেল আমাদের আমদানি শুরু হলো, তখন রিজার্ভ কমল। এটা তো স্বাভাবিক বিষয়। ২০০৯ সালে যখন সরকার গঠন করি, তার আগে আতেলরাই তো ক্ষমতায় ছিল, অনেক জ্ঞানীগুণীরা ছিল। রিজার্ভ কত ছিল? এক বিলিয়নও ছিল না। ০.৭৭ মিলিয়ন ছিল। যেটুকু বেড়েছে আমাদের সরকারের আমলেই বেড়েছে।

সরকারপ্রধান আরো বলেন, দেশের মানুষকে অন্ধকারে রেখে যদি বলেন রিজার্ভ বাড়াতে, আমি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দেই। পানি দেওয়া বন্ধ করে দেই। সার দেওয়া বন্ধ করে দেই। সব বন্ধ করে বসে থাকি, আমার রিজার্ভ রেট ভালো থাকবে। রিজার্ভ রেট বেশি রাখা আমার বেশি প্রয়োজন, নাকি আমার দেশের মানুষের কমফোর্ট, মানুষকে ভালো রাখা বেশি প্রয়োজন? বিদ্যুৎ ব্যবহারের ওপর মূল্য নির্ধারণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও এ সময় জানান প্রধানমন্ত্রী।

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডেঙ্গুতে মানুষ মারা যাচ্ছে, এটি খুবই দুঃখজনক। নাগরিকের নিজেরও দায়িত্ব আছে। ডেঙ্গু রোধে নাগরিকদেরও দায়িত্ব আছে। নিজেদের যতক্ষণ পর্যন্ত সুরক্ষিত না করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত সুরক্ষিত হবে না। যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলে, নিজের চারিদিকে পানি জমে থাকে, ময়লা ফেলে রাখে। তবে আমরা সরকারের পক্ষ থেকে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমাদের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

তিনি বলেন, এখন মশারি না টানানো ফ্যাশন হয়ে গেছে। নিয়মিত মশারি টানাতে হবে। বাড়ি থেকে গেলে কমোডের ঢাকনা বন্ধ করে যেতে হবে। নিজেদের আশপাশের মানুষকে সচেতন করতে হবে। শুধু কমিটি করে দিলেই কাজ হবে না। এ সময় তিনি তার সরকারের নানা পদক্ষেপ তুলে ধরেন।

সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবৃন্দ, আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ, সংসদ সদস্য ও সরকারের পদস্থ কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে ১৬ দিনের সফর শেষ করে গত বুধবার দেশে ফেরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছিলেন। নিউইয়র্ক সফরে প্রধানমন্ত্রী ১৭-২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে যোগ দেন। অধিবেশনের ফাঁকে অন্য উচ্চপর্যায়ের ও দ্বিপক্ষীয় বৈঠকসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নেন। শেখ হাসিনা ৩০ সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের একটি বিমানে ওয়াশিংটন ডিসি থেকে যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে যান। লন্ডনে ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশিদের পক্ষ থেকে দেওয়া সংবর্ধনায় যোগ দেন।

এছাড়া বাংলাদেশ ও রোহিঙ্গা বিষয়ে গঠিত এপিপিজির সভাপতি এবং যুক্তরাজ্যের বিনিয়োগ ও ক্ষুদ্র ব্যবসাবিষয়ক ছায়ামন্ত্রী রুশনারা আলী এমপির নেতৃত্বে অল পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপের (এপিপিজি) এক প্রতিনিধিদলসহ বেশ কয়েকজন বিশিষ্টজন তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। ওয়াশিংটন ডিসিতে শেখ হাসিনা ২৩ থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন এবং ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ দূতাবাস পরিদর্শন করেন।