সংসদ নির্বাচন নিয়ে বাম দলের অবস্থান

অংশ নিচ্ছে সিংহভাগ পর্যবেক্ষণে ছোটগুলো

প্রকাশ : ০৭ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আরিফুল ইসলাম

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের সিংহভাগ বাম দল বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছে। তবে কিছু ছোট বাম দল বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। তারাও যে কোনো সময় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার ঘোষণা দিতে পারে। এজন্য দলগুলো তলেতলে প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বর্তমানে ইসিতে ৪৯টি রাজনৈতিক দল নিবন্ধিত রয়েছে। এদের মধ্যে বাম দল রয়েছে ডজন খানেকের মতো। তাদের মধ্যে দুটি দল ছাড়া সবাই নির্বাচনে অংশ নিতে যাচ্ছে। তবে ইসির নিবন্ধনের বাইরে থাকা কিছু বাম দল নির্বাচনে অংশগ্রহণের সদিচ্ছায় রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছে। কোনো কোনো বাম দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার কথা ভাবছে। আবার কোনো কোনো দল নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে রাজপথের অন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছে।

সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল হয়ে যাওয়ার পর থেকে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হচ্ছে। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ও বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলসহ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটে থাকা বাম দলগুলো বর্তমান নির্বাচনি ব্যবস্থা বহাল রাখার পক্ষে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, আমাদের দলের পক্ষ থেকে ভিন্ন কোনো প্রস্তাব নেই। আমরা এখন পর্যন্ত দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচনের কথা বলছি।

বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া বলেন, আমাদের নতুন কোনো প্রস্তাব নেই। সংবিধানে যে বিধিব্যবস্থা আছে, সেই মোতাবেক নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা উচিত। ভারত, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডাসহ গণতন্ত্রের সূতিকাগার সবখানেই দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়। আর বিএনপি যে অন্তবর্তীকালীন সরকারের কথা বলে, তারাই তো সেই ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে।

বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম শরিক দল বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, দলনিরপেক্ষ ব্যক্তিদের নিয়ে নির্বাচনকালীন একটা নিরপেক্ষ অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠন করতে হবে। যারা এই সরকারের অংশ হবেন, তাদের একটা আস্থা ও বিশ্বাসযোগ্যতা সবার মধ্যে থাকতে হবে।

জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বলেন, আমরা নিরপেক্ষ অন্তবর্তীকালীন সরকার চাই। তবে সেটা তত্ত্বাবধায়কের মতো তিন মাসের সরকার নয়। সেখানে কারা থাকবেন, কত দিন তারা দায়িত্ব পালন করবেন, এমন সামগ্রিক রূপরেখা সরকার পদত্যাগের দাবি আদায়ের পর চূড়ান্ত হবে। বাম গণতান্ত্রিক জোটের সঙ্গে যুক্ত দলগুলো হচ্ছে- বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, বাসদ (মার্কসবাদী), বাংলাদেশের ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি (মার্কসবাদী) এবং বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন।

এসব বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে সিপিবি সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, আমরা জনগণের স্বার্থের দাবি নিয়ে আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে রয়েছি। বিশেষ করে জনগণের ভোটাধিকারের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। বাম গণতান্ত্রিক জোট আন্দোলন-সংগ্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এই জোটের পরিধি আরো বাড়বে।

পরিস্থিতি হলে নির্বাচনে যাওয়ার কথা জানিয়ে সিপিবি সভাপতি বলেন, বর্তমানে রাজনীতি নিয়ে চলমান দেশীয় ও আন্তর্জাতিক টানাপড়েন খেয়াল রেখেই আমরা সামনে এগুচ্ছি। তবে জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হলে বাম গণতান্ত্রিক জোট বৈঠক করে নির্বাচনে যাওয়ার বিষয় সিদ্ধান্ত নেবে।

বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ বলেন, নির্বাচনকে আমরা আন্দোলনের অংশ হিসেবে নিয়েছি। আমরা জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিতসহ অন্যান্য দাবিতে জেলা ও থানা পর্যায় আন্দোলন অব্যাহত রেখেছি। এ মাসের শেষের দিকে ঢাকায় একটি মহাসমাবেশ করার চেষ্টা করছি। পাশাপাশি বাসদের পক্ষ থেকে ১০০টি আসনে প্রার্থীদের প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। পরিবেশ অনুকূলে থাকলে নির্বাচনে অংশ নেওয়া হবে। আর নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি না হলে ভোটে যাব না।

প্রধান দুই জোটের বাইরে লেখক ও বামতাত্ত্বিক বদরুদ্দীন উমরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলসহ বাম দল ও সংগঠন নিয়ে গড়ে উঠেছে ‘৯ সংগঠন’ নামে আরেকটি জোট। চারটি বাম দল নিয়ে গঠিত গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যের শরিকরা হচ্ছে- প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল, সাম্যবাদী দল (এমএল), সমাজতান্ত্রিক মজদুর পার্টি এবং সোস্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি। আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) রয়েছে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে। সাম্যবাদী দলের ক্ষুদ্র একটি অংশ বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলের ‘নামকাওয়াস্তে’ শরিক হিসেবে যুক্ত। এর বাইরে গণফ্রন্টসহ কিছু নামসর্বস্ব বামপন্থি দল ও জোটের অস্তিত্ব রয়েছে। এরা সবাই ভোটে যেতে চায়।

জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে তফসিল এবং জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ভোটের তারিখ ধরে ইসি তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।