থার্ড টার্মিনাল উদ্বোধন আজ

প্রকাশ : ০৭ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের অন্যতম বিমানবন্দর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের আংশিক উদ্বোধন হচ্ছে আজ। এ উপলক্ষ্যে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিমানবন্দরে উপস্থিত থেকে তৃতীয় টার্মিনালের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। জানা গেছে, উদ্বোধনের পর সেদিন বিমান বাংলাদেশের একটি ফ্লাইট তৃতীয় টার্মিনাল ব্যবহার করে ঢাকা ত্যাগ করবে। সেই ফ্লাইটের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংও করবে রাষ্ট্রায়ত্ত এয়ারলাইন্স। এ টার্মিনালের একাংশে ইতোমধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে দুটি ফ্লাইট পরিচালনা করছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। টার্মিনাল-৩ এর পার্কিং বে’ থেকে প্রথমবারের মতো ফ্লাইটে যাত্রী তুলেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট। ২ অক্টোবর বিমানের ঢাকা থেকে কাঠমান্ডু রুটের ফ্লাইটটি (বিজি-৩৭১) প্রথমবারের মতো তৃতীয় টার্মিনালের হাই-স্পিডি ট্যাক্সিওয়ে দিয়ে পার্কিং বে-তে প্রবেশ করে। পার্কিং বে-তে অবস্থানের পর তৃতীয় টার্মিনালের বোর্ডিং ব্রিজ দিয়ে ফ্লাইটে ওঠেন কাঠমান্ডুর যাত্রীরা। ফ্লাইটটি বিমানের বোয়িং-৭৩৭ মডেলের ‘ময়ূরপঙ্খি’ নামের একটি এয়ারক্রাফট নিয়ে পরিচালিত হচ্ছিল। গত বৃহস্পতিবার একইভাবে টার্মিনাল-৩ ব্যবহার করেছে বিমানের ঢাকা-কাঠনান্ডু-রুটের আরেকটি ফ্লাইট। এ বিষয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. শফিউল আজিম জানান, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মিনাল-৩ এর সফট ওপেনিংয়ের জন্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সম্পূর্ণ প্রস্তুত। টার্মিনাল-৩ এর গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের জন্য নতুন ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ করা হয়েছে। এছাড়া, দায়িত্ব পালনকারী জনবলের জন্য আন্তর্জাতিক মানের নতুন ইউনিফর্ম প্রস্তুত করা হয়েছে। এর আগে এক সংবাদ সম্মেলনে বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ারভাইস মার্শাল মো. মুফিদুর রহমান বলেন, নির্ধারিত সময়ের আগেই আমরা প্রকল্প উদ্বোধন করতে যাচ্ছি। যখন প্রকল্প শুরু হলো, তখন মহামারি শুরু হয়ে গেল। মহামারি চলাকালীন অবস্থায় এই প্রকল্প বাস্তবায়ন থেকে আমরা সরে যাইনি। এ সময় নির্মাণকাজে জড়িত সব প্রতিষ্ঠানের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা জানান। জানা গেছে, ২০১৭ সালে তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়। এরপর নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২১ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাপানি সহযোগিতা সংস্থা জাইকা ঋণ হিসেবে দিচ্ছে ১৬ হাজার ১৪১ কোটি টাকা। আর বাকি টাকা দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। এই নির্মাণকাজ করছে জাপানের মিতসুবিশি ও ফুজিতা এবং দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাং। ৩০ লাখ বর্গফুট জায়গায় তিন তলাবিশিষ্ট এ টার্মিনাল ভবনটির আয়তন হবে ২ লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার এবং লম্বা ৭০০ মিটার ও চওড়া ২০০ মিটার। এ ভবনটির নকশা করেছেন রোহানি বাহারিন। তিনি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সিপিজি কর্পোরেশন প্রাইভেট লিমিটেড, সিঙ্গাপুরের স্থপতি। তৃতীয় টার্মিনাল ভবনে প্রথম পর্যায়ে ১২টি বোর্ডিং ব্রিজ চালু করা হবে। পরবর্তী পর্যায়ে আরো ১৪টি বোডিং ব্রিজ স্থাপন করা হবে। বহির্গমনে মোট ১১৫টি চেক-ইন-কাউন্টার থাকবে, এর মধ্যে ১৫টি থাকবে সেলফ সার্ভিস চেক ইন কাউন্টার। আগমনি লাউঞ্জে পাঁচটি স্বয়ংক্রিয় চেক ইন কাউন্টারসহ মোট ৫৯টি পাসপোর্ট চেক ইন কাউন্টার থাকবে। এছাড়া, ১০টি স্বয়ংক্রিয় পাসপোর্ট কন্ট্রোল কাউন্টারসহ মোট ৬৬টি ডিপার্চার ইমিগ্রেশন কাউন্টার থাকবে। তৃতীয় টার্মিনালের সঙ্গে মাল্টিলেভেল কার পার্কিং ভবন নির্মাণ করা হবে। সেখানে প্রায় এক হাজার ২৫০টি গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে। তৃতীয় টার্মিনাল ভবনের ভিতরেই ভিভিআইপি ও ভিআইপিদের জন্য সর্বাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন আলাদা নির্ধারিত অংশ থাকবে। শুধু তৃতীয় টার্মিনাল দিয়ে বছরে এক কোটি ২০ লাখ যাত্রীকে সেবা দেওয়া সম্ভব হবে। তৃতীয় টার্মিনাল ভবন নির্মিত হলে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর দিয়ে বছরে প্রায় কোটি কোটি যাত্রী যাতায়াত করতে পারবেন। শাহজালাল বিমান বন্দরের উত্তর পাশে রয়েছে রফতানি ও আমদানি কার্গো ভিলেজ। বর্তমান কার্গো ভিলেজের উত্তর পাশে যথাক্রমে ৩৬ হাজার বর্গমিটার ২৭ হাজার বর্গমিটার আয়তনের সর্বাধুনিক সুবিধা সম্পন্ন দুটি পৃথক আমদানি ও রফতানি কার্গো ভিলেজ নির্মাণ করা হবে। তৃতীয় টার্মিনাল ভবনের সঙ্গে ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গ পথ ও উড়াল সেতু নির্মাণ করা হবে। যার মাধ্যমে মেট্রোরেল ও ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ের সংযোগ ব্যবস্থা থাকবে। তৃতীয় টার্মিনালে থাকবে অত্যাধুনিক আন্তর্জাতিক মানের অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা। পাশাপাশি লাউঞ্জ, দোকান, রেস্টুরেন্টসহ আন্তর্জাতিক মানের অত্যাধুনিক যাত্রী সেবার সুবিধা রাখা হবে। এছাড়াও এর টার্মিনাল ভবনে ১৬টি আগমনি ব্যাগেজ বেল্ট স্থাপন করা হবে। এভিয়েশন ঢাকা কনসোর্টিয়াম (এডিসি)-এর মাধ্যমে জাপানের মিৎসুবিশি ও ফুজিতা, জাপান এবং কোরিয়ার স্যামসাং টার্মিনালের নির্মাণকাজ সম্পন্ন করবে।