ঢাকা ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

আফগানদের গুঁড়িয়ে বিশ্বকাপ মিশন শুরু বাংলাদেশের

আফগানদের গুঁড়িয়ে বিশ্বকাপ মিশন শুরু বাংলাদেশের

বিশ্বকাপ খেলতে বাংলাদেশ দল যখন ভারতের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়ে তখন কত বিতর্ক, কত শঙ্কা, কত চাপ যে ভর করেছিল লাল সবুজের প্রতিনিধিদের উপর তার ইয়ত্তা নেই। তবে মাঠ আর মাঠের বাইরের এসব বিতর্ক পারফরম্যান্স দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছে টাইগাররা। ১৩তম আসরে নিজেদের প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানকে গুঁড়িয়ে বিশ্বকাপ মিশনের শুরুটা রাঙাল সাকিব আল হাসানের দল। এই মিশনের শুরুতেই নেতৃত্ব দিলেন স্পিনাররা। বোলাররাই গড়ে দিলেন জয়ের ভিত। এরপর ছোট লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দুই ওপেনার আগেভাগে সাজঘরে ফিরলেও সুর-তাল ধরে রাখল বাংলাদেশ। দারুণ জুটি গড়ে জোড়া হাফসেঞ্চুরি করলেন মেহেদী হাসান মিরাজ ও নাজমুল হোসেন শান্ত। মিরাজ বিদায় নিলেও শান্ত দলকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়লেন। গতকাল শনিবার ভারতের ধারামশালার হিমাচল প্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের শুরুটা হয়েছে দুর্দান্ত। একপেশে লড়াইয়ে আফগানিস্তানকে উড়িয়ে দিয়েছে তারা। ৯২ বল বাকি থাকতে ৬ উইকেটে জিতেছে টাইগাররা। টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ৩৭.২ ওভারে ১৫৬ রানে অলআউট হয় আফগানরা। জবাবে ৪ উইকেট হারিয়ে ১৫৮ রান তুলে জয়ের উল্লাসে মাতে টাইগাররা। নাভিন উল হকের বলে টানা দুই চার মেরে ম্যাচ শেষ করে দেন শান্ত। মাঠের ভেতরে নাজুক পারফরম্যান্স ও বাইরে নানা রকমের বিতর্ক সঙ্গী করে ভারতে বিশ্বকাপ খেলতে গেছে বাংলাদেশ। সেসব ঝেড়ে ফেলতে শুরুটা ভালো হওয়ার দরকার ছিল। প্রতিপক্ষ হিসেবে কঠিন না হলেও কয়েক মাস আগে দুই দলের মধ্যকার সবশেষ ওয়ানডে সিরিজ জিতেছিল আফগানরা। তাই শঙ্কা ছিলই। তবে বাংলাদেশের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের সামনে উড়ে যায় সমস্ত বাধা। দলের জয়ে সবচেয়ে বড় অবদান মিরাজের। ব্যাটে-বলে সমান তালে ভূমিকা রাখেন তিনি। ৯ ওভারে ২৫ রানে ৩ উইকেট নেয়ার পর ৭৩ বলে খেলেন ৫৭ রানের ইনিংস। ব্যাটিং অর্ডারে প্রোমোশন পেয়ে তিনে নেমে দেন তার ওপর রাখা আস্থার প্রতিদান। তিনি মারেন পাঁচটি চার। শান্ত অপরাজিত থাকেন ৮৩ বলে ৫৯ রানে। তার ব্যাট থেকে আসে তিনটি চার ও একটি ছক্কা। অধিনায়ক হিসেবে সাকিবও ছিলেন প্রাণবন্ত। দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন তিনি। ব্যাটিংয়ে কাঙ্ক্ষিত ফল করতে না পারলেও বোলিংয়ে তার হাত দিয়েই শুরু হয়েছিল আফগানিস্তানের উইকেট পতন। ৮ ওভারে ৩ উইকেট নিতে তার খরচা ৩০ রান। রান তাড়া করতে গিয়ে আফগান পেসার ফজলহক ফারুকির করা প্রথম ওভারেই দারুণ এক ফ্লিকে বাউন্ডারি আদায় করে নিয়েছিলেন তানজিদ হাসান তামিম। বেশ সাবলিলই দেখাচ্ছিল তাকে। তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিদায় ঘটে তার। ফারুকির করা পঞ্চম ওভারের প্রথম বলে পয়েন্টে বল ঠেলেছিলেন আরেক ওপেনার লিটন দাস। রান নিতে চেয়েছিলেন তানজিদ। উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে যান। লিটন আগ্রহী না হলে ফিরতে গিয়েও পারেননি তানজিদ। নাজিবুল্লাহ জাদরানের দারুণ থ্রোতে স্টাম্প ভাঙলে ব্যক্তিগত ৫ রানে সাজঘরে ফেরেন তানজিদ। এরপর খুব বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি লিটনও। ফারুকির বল দ্বিধা নিয়ে খেলতে গিয়ে ইনসাইড এজে বোল্ড হয়ে যান তিনি। ১৮ বলে দুটি চারের সাহায্যে ১৩ রান করেন তিনি। এরপর মিরাজের সঙ্গে দলের হাল ধরেন শান্ত। তৃতীয় উইকেটে ১২৯ বলে ৯৭ রানের জুটিতে কোনো চাপ জেঁকে বসতে দেননি তারা। জুটিতে মিরাজ খেলছিলেন চালিয়ে। অসাধারণ ছন্দে থাকা শান্ত কিছুটা ধীরেসুস্থে ব্যাট করছিলেন। ৫৮ বলে হাফসেঞ্চুরিতে পৌঁছানো মিরাজ নাভিনের বলে বিদায় নেন রহমত শাহর অসাধারণ ক্যাচে। এর আগে অবশ্য দুই দফা ক্যাচ তুলেও জীবন পান তিনি। ব্যক্তিগত ১৬ ও ২৩ রানে। আরেকবার তিনি বেঁচে যান এলবিডব্লিউ আউটের সিদ্ধান্তের বিপরীতে রিভিউ নিয়ে। শান্ত হাফসেঞ্চুরি স্পর্শ করেন ৮০ বলে। ওয়ানডেতে সবশেষ চার ম্যাচে এটি তার তৃতীয় হাফসেঞ্চুরি। অন্য ইনিংসে পেয়েছিলেন সেঞ্চুরি। তবে গত ২০১৯ বিশ্বকাপে চোখ ধাঁধানো ব্যাটিং উপহার দেয়া সাকিব টিকতে পারেননি। আজমতুল্লাহ ওমরজাইয়ের বল পুল করে বাউন্ডারি মারার চেষ্টায় তার ১৯ বলে ১৪ রানের ইনিংস। সীমানার কাছে ক্যাচ নেন ফারুকি। জয় তখন ছিল বাংলাদেশের হাতের নাগালে। সেই আনুষ্ঠানিকতা অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে সারেন শান্ত। আফগানদের হয়ে একটি করে উইকেট নেন ফারুকি, নাভিন ও ওমরজাই। তবে যে দুজনকে নিয়ে প্রত্যাশা বেশি ছিল, তারা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেননি। অফ স্পিনার মুজিব উর রহমান ৭ ওভারে ৩০ রান দিয়ে কোনো উইকেট পাননি। তারকা লেগ স্পিনার রশিদ খানও থাকেন উইকেটশূন্য। তিনি ৯ ওভারে দেন ৪৮ রান। এর আগে টস জিতে আফগানিস্তানকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় বাংলাদেশ। রহমানউল্লাহ গুরবাজ, ইব্রাহিম জাদরানের উদ্বোধনী জুটিতে শুরুটা মন্দ ছিল না আফগানদের। ৮ ওভারে তাড়া করে ফেলে ৪৭ রান। নবম ওভারে ইব্রাহিম জাদরানকে ফিরিয়ে এই জুটি ভাঙেন সাকিব। অফসাইডে ফিল্ডার বাড়িয়ে ইব্রাহিমকে অনসাইডে খেলার জন্য প্রলুব্ধ করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। ফাঁদে পা দিয়ে সুইপ করতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে ক্যাচ দেন ইব্রাহিম। দ্বিতীয় স্পেলে ষোড়শ ওভারে ফিরে রেহমাত শাহকেও আউট করেন সাকিব। এরপর উইকেট শিকারে যোগ দেন মিরাজ। হাশমতউল্লাহ শাহিদির বিপক্ষে টানা ডট বল করার পুরস্কার পান তিনি। রানের গতি ধীর হয়ে আসায় তেড়েফুঁড়ে মারতে গিয়ে ক্যাচ দেন ৩৮ বলে ২৮ রান করা শাহিদি। ফিফটির কাছে পৌঁছে যাওয়া গুরবাজকে ফেরান মোস্তাফিজ। স্লোয়ার ডেলিভারি কাভারের ওপর দিয়ে উড়িয়ে মারেন গুরবাজ। বেশ খানিকটা দৌড়ে দারুণ ক্যাচ নেন তানজিদ। সাকিবের শেষ শিকার নাজিবউল্লাহ জাদরান। শেষ দিকে রাশিদ খান, মুজিব উর রহমানকে বোল্ড করেন মিরাজ। তাসকিন ওড়ান মোহাম্মদ নাবির স্টাম্প। শরিফুলের বলে প্যাডে লেগে বোল্ড হন আজমতউল্লাহ ওমারজাই। কোনোমতে দেড়শ’ পেরোনো আফগান ইনিংসের সমাপ্তি টানেন শরিফুল। পুল করতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ দেন নাভিন উল হাক। এটি ছিল তার দ্বিতীয় শিকার। তিনি দেন ৩৪ রান। কোনো রান যোগ না করেই আফগানিস্তান হারায় শেষ ৩ উইকেট। ফলে ১৫৬তেই আটকে যায় তারা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত