ঢাকা ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ফের উত্তপ্ত মধ্যপ্রাচ্য

ইসরাইল-হামাস পাল্টাপাল্টি হামলায় নিহত তিনশ’

ইসরাইল-হামাস পাল্টাপাল্টি হামলায় নিহত তিনশ’

দীর্ঘদিন পর ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্য। অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি বিমান হামলায় অন্তত ১৯৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১ হাজারেরও বেশি মানুষ। এর আগে ফিলিস্তিনি সশস্ত্রগোষ্ঠী হামাসের হামলায় অন্তত ১০০ জন ইসরাইলি

নিহত হন। আহত হয়েছেন ৭৫০ জন। ইসরাইলের বিমান হামলার তীব্রতা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে। ইসরাইলের সরকার নিহতের এ সংখ্যা নিশ্চিত করেছে বলে জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।

গতকাল আকস্মিকভাবে ইসরাইলের অবৈধ বসতিগুলোতে হামলা চালানো শুরু করে ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ যোদ্ধারা। এ সময় তারা দখলদার ইসরাইলি বাহিনীর একটি ট্যাংক ধ্বংস করে দেয়। এছাড়া কয়েকজন ইসরাইলি সেনাকে আটকও করে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, ট্যাংকের ভেতর থেকে এক ইসরাইলি সেনাকে টেনে বের করছেন হামাসের সেনারা। ওই ট্যাংকের পাশেই আহত বা নিহত অবস্থায় পড়েছিল আরো কয়েকজন সেনা।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত আরো কয়েকটি ভিডিওতে ইসরাইলি সেনাদের আটক ও ধরে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি দেখা গেছে। ভিডিওগুলোতে দেখা যায়, এক নারী সেনাকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, কয়েকজন সেনাকে একটি গাড়ির ভেতর বেঁধে রাখা হয়েছে। অপর একটি ভিডিওতে দেখা যায়, গাজায় ধরে নিয়ে যাওয়া এক ইসরাইলি সেনাকে মারধর করছেন সাধারণ মানুষ। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছেন, এসব সেনাকে ধরে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং সেখানে তাদের আটকে রাখা হয়েছে। এছাড়া বেসামরিক ও অবৈধ বসতি স্থাপনকারী ইসরাইলিদেরও ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম। এদিকে হামাসের এ আকস্মিক হামলার পর ইসরাইল গাজা উপত্যকায় বিমান হামলা চালানো শুরু করে। সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা জানিয়েছে, ইসরাইলিদের বিমান হামলায় অন্তত ১৯৮ জন নিহত হয়েছেন। এ সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। কারণ, ইসরাইলি যুদ্ধবিমান অনেক বেসামরিক ভবন লক্ষ্য করেও হামলা চালাচ্ছে। অবৈধ বসতি স্থাপনকারী ইসরাইলিদের অপরাধের অবসান, আল-আকসা মসজিদে হামলার জবাব দিতে ইসরাইলে হামলা চালানো শুরু করে ফিলিস্তিনের সশস্ত্রগোষ্ঠী হামাস।

মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য নিউ আরব জানিয়েছে, ইসরাইলের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, হামাসের যোদ্ধারা আকাশ, স্থল ও নৌপথে ইসরাইলে প্রবেশ করেছে। এ ব্যাপারে সেনাবাহিনীর মুখপাত্র রিচার্ড হেকট বলেন, ‘এটি ছিল সমন্বতি হামলা। আকাশে (প্যারগ্লাইডারদের মাধ্যমে), সমুদ্রে এবং স্থলে হামলা চালানো হয়েছে। এ মুহূর্তে আমরা লড়াই করছি। আমরা গাজা উপত্যকার নির্দিষ্ট জায়গায় লড়াই করছি।’

সেনাবাহিনীর এ মুখপাত্র জানিয়েছেন, গাজায় হামলা চালাতে কয়েক হাজার রিজার্ভ সেনাকে নামানো হবে। এছাড়া লেবানন এবং সিরিয়া সীমান্তের কাছেও সেনা মোতায়েন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমরা সবদিক দিয়ে খেয়াল রাখছি। আমরা বুঝতে পেরেছি বিষয়টি অনেক বড়।’ ইসরাইলে বড় ধরনের হামলা চালানোর পর অবৈধ বসতি স্থাপনকারী ইসরাইলি বেসামরিক মানুষ ও সেনাদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে হামাস। এছাড়া অনেক ইসরাইলিকে তাদের অবৈধ বাড়িতে জিম্মিও করেছে হামাসের যোদ্ধারা। অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা থেকে নৌ, স্থল ও আকাশ থেকে ইসরাইলে প্রবেশ করে হামাসের সদস্যরা। এরপর তারা ইসরাইলিদের বাড়ি বাড়ি প্রবেশ করে বলে জানিয়েছে ইসরাইলের সংবাদমাধ্যম।

অবশ্য বেসামরিকদের ধরে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি এখনো নিশ্চিত নয় বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম স্কাই নিউজ। তবে ইসরাইলি সেনাদের ধরে গাজায় নিয়ে যাওয়ার একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে হামাস। এতে দেখা যাচ্ছে, ইসরাইলের সেনাবাহিনীর অন্তত তিন সদস্যকে আটক করে নিয়ে আসা হয়েছে। তারা বেসামরিক পোশাকে ছিল। এছাড়া গাজা ও ইসরাইলের দখলকৃত স্থানগুলোর মধ্যে তৈরি লোহার বেড়ার কাছে থাকা ইসরাইলি সেনাদের একটি ট্যাংক জব্দ করেছে ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ যোদ্ধারা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, ট্যাংকের ভেতর থেকে এক ইসরাইলি সেনাকে টেনে বের করা হচ্ছে। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত বেশ কয়েকটি ছবিতে দেখা গেছে, ইসরাইলি সেনাদের ব্যবহত বিভিন্ন যুদ্ধযান গাজায় নিয়ে যাচ্ছে হামাসের সদস্যরা। এ সময় সাধারণ ফিলিস্তিনিদের উল্লাস করতে দেখা যায়।

এদিকে সামরিক যান, সেনা ও বেসামরিকদের ধরে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেনি ইসরাইল। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রবিষয়ক কর্মকর্তা জোসেফ বোরেল মাইক্রো ব্লগিং সাইট এক্সে (সাবেক টুইটার) জানিয়েছেন, তিনি জানতে পেরেছেন বেসামরিকদের জিম্মি করে গাজায় ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তিনি বলেছেন, এটি আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থি। তিনি সকল জিম্মিকে ছেড়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের এ কর্মকর্তা বলেছেন, হামাসের এ হামলার কারণে ফিলিস্তিনিদের শান্তি বিনষ্ট হবে।

ইসরাইলে স্থল, সমুদ্র ও আকাশপথে আকস্মিক হামলা শুরুর পর গাজার ক্ষমতাসীন সশস্ত্রগোষ্ঠী হামাস এবং ইসরাইল কার্যত আরেকটি প্রাণঘাতী যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে। ফিলিস্তিনের সশস্ত্র ইসলামপন্থি গোষ্ঠী হামাস ইসরাইলের বিরুদ্ধে ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’ শুরু করেছে। ২০২১ সালের ১১ দিনের এক যুদ্ধের পর এবারের এই সংঘাত সবচেয়ে ভয়াবহ হিসেবে দেখা দিয়েছে। হামাস বলেছে, হামলা শুরুর প্রথম ২০ মিনিটের মধ্যেই ইসরাইলি ভূখণ্ড লক্ষ্য করে ৫ হাজারের বেশি রকেট-ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। ইসরাইলের ভূখণ্ডে হামাসের ঢুকে পড়ার তথ্য নিশ্চিত করেছে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী। ইসরাইলের সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিইল হাজারি বলেছেন, হামাসের যোদ্ধারা স্থল, সমুদ্র এবং আকাশপথে আক্রমণ শুরু করেছে। গাজা উপত্যকায় হামাসের বিরুদ্ধে ‘অপারেশন আয়রন সোর্ডস’ শুরু করার দাবি জানিয়েছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। ইসরাইলের তেলআবিব শহরের উত্তরে রকেট হামলা হয়েছে। এছাড়া ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলের একাধিক শহরে যোদ্ধাদের পাঠিয়েছে হামাস। ইসরাইলি গণমাধ্যম বলছে, দেরত শহরে চলন্ত গাড়িতে বেসামরিকদের লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে হামাসের বন্দুকধারীরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসা ভিডিওতে দেখা যায়, হামাসের সশস্ত্র যোদ্ধারা ইসরাইলি শহরে গাড়ি নিয়ে ঢুকছে। তারা আশপাশের বিভিন্ন ভবন ও পথচারীদের ওপর গুলি ছুড়ছে। হামাসের যোদ্ধারা একাধিক ইসরাইলি বেসামরিক কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে। সেখানকার বাসিন্দারা ইসরাইলি সরকারের সহায়তা চেয়ে আকুতি জানিয়েছে। ইসরাইলি সেনাবাহিনী বলেছে, তাদের একাধিক যুদ্ধবিমান গাজা উপত্যকায় হামাসকে লক্ষ্য করে অভিযান শুরু করেছে।

সূত্র : আলজাজিরা, বিবিসি

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত