ঢাকা ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সনদ বিতরণ ও সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

দেশের টেকসই উন্নয়নে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করুন

দেশের টেকসই উন্নয়নে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করুন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নবীন বিসিএস কর্মকর্তাদের ‘৪১ এর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার মূল সৈনিক’ আখ্যায়িত করে দেশের অব্যাহত ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে তাদের নির্দেশ দিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘আপনাদের (নতুন বিসিএস কর্মকর্তাদের) সজাগ থাকতে হবে, যাতে দেশের প্রতিটি উন্নয়ন অব্যাহত ও টেকসই হয়, যার জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বিসিএস কর্মকর্তাদের ৭৫তম বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্সের সনদ বিতরণ ও সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।

তিনি অনুষ্ঠান থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অধীন পাঁচটি প্রকল্প ও কর্মসূচির আওতায় নির্মিত ভবন এবং ‘গভর্নমেন্ট এমপ্লয়মেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম-জিইএমএস’ সফটওয়্যার উদ্বোধন করেন। ব্যক্তিগত জীবনে তার কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই উল্লেখ করে জাতির পিতার কন্যা বলেন, ‘আমরা চাওয়া একটাই, একটাই স্বপ্ন, যেটা আমার বাবা এদেশের মানুষকে নিয়ে দেখেছিলেন। মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা আর তাদের জীবন মান উন্নত করা। আজ পর্যন্ত যতটুকু করতে পেরেছি ভবিষ্যতের জন্য যেন সেটা স্থায়ী হয় চলমান থাকে, সেটাই আমার একমাত্র দাবি সবার কাছে। দিনরাত পরিশ্রম করে আজকে বাংলাদেশকে যে জায়গায় নিয়ে এসেছি, তার থেকে বাংলাদেশ যেন কিছুতেই পিছিয়ে না যায়।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজ বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা, মুদ্রাস্ফীতি, কিছু সমস্যায় আমরা আছি। রিজার্ভ নিয়ে অনেকে কথা বলে। আমি বলছি, রিজার্ভ নিয়ে অত চিন্তার কিছু নেই। আমার গোলায় যতক্ষণ খাবার আছে, ততক্ষণ আমরা চিন্তা করি না।’ দেশের প্রতি ইঞ্চি অনাবাদি জমিকে চাষের আওতায় আনার জন্য তার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘ফসল ফলাবো নিজের খাবার নিজেরা খাব, কেনাকাটা বা খরচ না হয় আমরা একটু কমই করব। কিন্তু আমার নিজের দেশের মর্যাদা নিয়ে আমাদের চলতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘৪১-এর বাংলাদেশের মূল কারিগর এবং সৈনিক হবেন আজকের কর্মকর্তারা। তখনতো আর আমরা থাকব না। কিন্তু দেশটা যেন এগিয়ে যায়, আমি শুধু সেটাই চাই।’

প্রধানমন্ত্রী সফলভাবে কোর্স সম্পন্নকারি ১৯টি ক্যাডার সার্ভিসের ৬০২ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩০ জন কৃতী শিক্ষার্থীর হাতে ‘মেধা সনদ’ তুলে দেন এবং তিনজনের মধ্যে ‘মর্যাদা পদক’ বিতরণ করেন।

ছয় মাসব্যাপী অনুষ্ঠিত ৭৫তম বুনিয়দি প্রশিক্ষণ কোর্সে তাহসিন বিনতে আনিস শীর্ষস্থান অর্জন করে রেক্টর’স পদক লাভ করেন।

অনুষ্ঠানে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরীও বক্তৃতা করেন। এছাড়া ৭৫তম বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্সে অংশগ্রহণকারীদের পক্ষে চারজন শিক্ষার্থী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। বাংলাদেশ লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’র (বিপিএটিসি) রেক্টর মো. আশরাফ উদ্দিন ৭৫তম বুনিয়ানি প্রশিক্ষণ কোর্সের চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করেন এবং শিক্ষার্থীদের শপথবাক্য পাঠ করান।

অনুষ্ঠানে ৭৫তম বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্স এবং প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধন করা প্রকল্পগুলোর দুটি পৃথক ভিডিওচিত্র প্রদর্শিত হয়।

প্রকল্পগুলো হচ্ছে- সরকারি কর্মচারি ব্যবস্থাপনা সিস্টেম (গভর্নমেন্ট এমপ্লয়মেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম-জিইএমএস), ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল, নবনির্মিত টাঙ্গাইল সার্কিট হাউজ, নবনির্মিত কুমিল্লা সার্কিট হাউজ এবং বিপিএটিসির ১৫তলা আধুনিক ডরমেটরি ভবন।

প্রধানমন্ত্রী সিভিল সার্ভিসের নবীন কর্মকর্তাদের দেশের প্রতি দায়িত্ববোধ নিয়ে কাজ করার এবং এখানে লব্ধ প্রশিক্ষণকে দেশ ও জনগণের কাজে লাগানোর আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘যারা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন তাদের সবাইকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে হবে। দেশের মানুষের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ থাকতে হবে। কারণ, তাদের রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে, ঘাম ঝড়ানো যে উপার্জন, সেই উপার্জনের টাকা দিয়েই আমাদের সবার সবকিছু চলে। একথাটা আমাদের ভুললে চলবে না।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘চাকরিটা শুধু চাকরি নয়, এটা দেশের সেবা করা। তার সরকারের সামাজিক নিরাপত্তাবলয়ের কর্মসূচি বাস্তবায়নে নজরদারির পাশাপাশি মাঠপর্যায়ে যারা কাজ করবে, তাদের মানুষকে উদ্বুদ্ধকরণের কাজও করতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সবসময় এটা মাথায় রাখতে হবে, এই সব খেটে খাওয়া মানুষদের কষ্টের ফসলটাই আমরা ভোগ করি। কাজেই তাদের কীভাবে আমরা সহযোগিতা করতে পারি, সেটাই আমাদের দেখতে হবে।’

সরকারের বৃত্তি-উপবৃত্তি প্রদান এবং উচ্চশিক্ষায় সহযোগিতায় প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা তহবিলের উল্লেখ করে তিনি বলেন, মেধা যেন হারিয়ে না যায়, সেজন্য মেধাবিদের আমরা সহযোগিতা দিয়ে যাব। কারণ, এই মেধাগুলোই আমার দেশের উন্নয়নের কাজে লাগবে। ইকোনমিক ডিপ্লোমেসির এই যুগে বিশ্বে বাজার খুঁজে বের করার ওপরও তিনি গুরুত্বারোপ করেন।

প্রতিটি উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে টেকসই করার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, যারা মাঠপর্যায়ে কাজ করবেন প্রতিটি এলাকার উন্নয়নের ক্ষেত্রে তাদের দেখতে হবে নদী-নালা-খাল-বিল সহ জলাধারগুলো যেন সেখানে সংরক্ষিত থাকে। দেশকে উন্নত করার জন্য অবকাঠামো নির্মাণ ও রাস্তাঘাট করার সময় সেটা যেন ঋতু বৈচিত্র্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়, যাতে কোনো সময় কোনো কিছুতে বাধার সৃষ্টি করতে না পারে, তা নিশ্চিত করারও আহ্বান জানান তিনি। তিনি বলেন, ‘আমাদের ছয়টি ঋতু। বিভিন্ন ঋতুতে যে পরিবর্তন হয়, তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই আমাদের পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে, যাতে কোনো সময় যেন কোনো প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি না হয়। আর মানুষগুলোর যেন আর্থিত সচ্ছলতাটা বাড়ে। কীভাবে করলে আর্থিক সচ্ছলতা বাড়বে, সেটাই দেখতে হবে। আমাদের প্রতিটি উন্নয়ন যাতে টেকসই হয়।’

সরকারের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাস্তবায়নের ফলে আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ এবং বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল বলেও তিনি উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী ’৭৫-এর বিয়োগান্তক অধ্যায় স্মরণ করে বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছিল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান। জিয়াই ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে জাতির পিতা হত্যার বিচারের পথকে রুদ্ধ করেছিল। আর খুনীদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরী দিয়ে পুরস্কৃতও করেছিল। সেদিন জাতির পিতাকে হত্যার মধ্যদিয়ে আমরা আপনজন হারিয়েছি। কিন্তু বাংলাদেশ হারিয়েছিল তাদের ভবিষ্যৎ, ক্ষুধা, দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পাওয়ার পথ। সবই হারিয়েছে। তখন ক্ষমতা দখল শুরু হয় হত্যা এবং ষড়যন্ত্রের মধ্যদিয়ে, সংবিধান ও সেনা আইন লঙ্ঘন করে। একের পর এক, সরাসরি বা প্রত্যক্ষভাবে এই ধরনের শাসন চলতে থাকে।’

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত