পদ্মা সেতু রেল প্রকল্প

প্রধানমন্ত্রী আজ ওড়াবেন উদ্বোধনী পতাকা

প্রকাশ : ১০ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা-ভাঙ্গা রুটে নতুন ট্রেন সার্ভিস উদ্বোধন করবেন। মুন্সীগঞ্জের মাওয়া রেলস্টেশনে এক অনুষ্ঠানে নতুন রুটের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। মাওয়া রেলওয়ে স্টেশন থেকে রেলে চড়ে মাওয়া থেকে ভাঙ্গা যাওয়ার কথাও রয়েছে তার।

জানা গেছে, বাংলাদেশ রেলওয়ে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের আওতায় ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ নতুন রেল ট্র্যাক নির্মাণ করছে। এর ৮২ কিলোমিটার অংশ ঢাকা ও ভাঙ্গাকে সংযুক্ত রেল আজ খুলে দেওয়া হবে। এছাড়া যশোর সংযোগকারী অবশিষ্ট অংশ আগামী বছরের জুনে চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গত বছরের জুনে যুগান্তকারী পদ্মা সেতু উদ্বোধনের এক বছর দুই মাস পর পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা-ভাঙ্গা রেল সার্ভিস উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। এর আগে ৭ সেপ্টেম্বর পাথরহীন রেললাইন পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকা-ভাঙ্গা রুটে বিশেষ ট্রেনের ট্রায়াল সম্পন্ন হয়।

গত বছরের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘পদ্মা সেতু রেল সংযোগ নির্মাণ প্রকল্প’-এর আওতায় ঢাকা ও যশোরের মধ্যে রেল সংযোগ নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯,২৪৬.৮০ কোটি টাকা। এতে চীনের এক্সিম ব্যাংক ২১,০৩৬.৭০ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে।

প্রকল্পের বিশদ বিবরণে বলা হয়েছে, প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত হওয়ার পর, রেল যোগাযোগ পদ্মা সেতুর মাধ্যমে দেশের মধ্য ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানী শহরের প্রবেশপথ আরো বর্ধিত হবে- যা মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর এবং নড়াইল জেলার নতুন এলাকাকে যুক্ত করবে। প্রকল্পটি ঢাকা-যশোর-খুলনাকে ২১২.০৫ কিলোমিটার সংক্ষিপ্ত রুট দিয়ে বিকল্প রেলপথ সংযোগ স্থাপন করবে। এটি বাংলাদেশে ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আরেকটি উপ-রুট স্থাপন করবে এবং জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক মালবাহী ও বিজি কন্টেইনার ট্রেন পরিষেবা চালু করবে। রুটটি কন্টেইনার বহনের জন্য গতি এবং লোড সীমাবদ্ধতা থেকে মুক্ত হবে।

মুন্সীগঞ্জে পদ্মা সেতু রেল লিংক প্রকল্পের ঢাকা-ভাঙ্গা অংশের ৮২ কিলোমিটার পথ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এক সুধী সমাবেশে বক্তব্য রাখবেন প্রধানমন্ত্রী। ১ বছর ৩ মাস আগে পদ্মা সেতুর সড়কপথ চালু হওয়ার পর রেলপথের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্ত রেলপথ উদ্বোধনকে ঘিরে চলছে এলাকাবাসীর উল্লাস। এলাকাবাসী বলছেন, স্বপ্নের পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে রেল সংযোগ হচ্ছে এটা আনন্দের। দেশের বৃহত্তম প্রকল্পটি দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জন্য নতুন একটি দিগন্ত। ঐতিহাসিক পদ্মা সেতু পূর্ণতা পাবে রেল-সংযোগ চালুর মধ্য দিয়ে। এই অঞ্চলে অনন্য এক যোগাযোগ স্থাপন হবে। প্রকল্পের বাকি অংশের কাজ আগামী বছর জুনেই শেষ করে যশোর পর্যন্ত রেলপথ চালুর কথা রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীকে বরণে প্রস্তুত ভাঙ্গা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বরণ করতে প্রস্তুত ফরিদপুরের ভাঙ্গা। ভাঙ্গার ডা. কাজী আবু ইউসুফ স্টেডিয়ামে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে ভাষণ দেবেন শেখ হাসিনা। সেজন্য ভাঙ্গা উপজেলাকে সাজিয়ে তোলা হয়েছে নতুন রূপে। এক্সপ্রেসওয়ের ভাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশন ও জংশন সংলগ্ন এলাকায় নির্মাণ করা হয়েছে তোরণ। সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের ফিরিস্তি তুলে ধরে সাঁটানো হয়েছে ব্যানার-ফেস্টুন।

বর্ণিল রূপে সাজানো হয়েছে ভাঙ্গার বামনকান্দা এলাকায় অবস্থিত ভাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, দলীয় নেতাকর্মীদের উপস্থিতি বেড়েছে ভাঙ্গায়। সংস্কার করা হয়েছে- প্রধানমন্ত্রীর চলাচলের সড়কের ছোটখাটো গর্ত। এছাড়া ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে শুরুর স্থান থেকে ডা. কাজী আবু ইউসুফ স্টেডিয়াম পর্যন্ত রাস্তাটি প্রশস্ত করা হয়েছে। রাস্তার দুই ধারের অবৈধ স্থাপনা ভেঙে ফেলা হয়েছে। রাস্তার পাশের বৈদ্যুতিক খুঁটিগুলো সরিয়ে রাস্তার বাইরে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া স্টেডিয়ামের আশপাশের খালি জায়গাগুলো বালু দিয়ে ভরাট করে গাড়ি রাখা এবং লোকজন দাঁড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।

ফরিদপুর নাগরিক মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক পান্না বালা বলেন, ভাঙ্গার সঙ্গে ঢাকার রেল যোগাযোগ চালু হওয়ায় আমরা খুব আনন্দিত। তবে ফরিদপুরে একটি ইপিজেড করার পরিকল্পনা সরকারের ছিল। প্রধানমন্ত্রী ফরিদপুরে আসছেন। তিনি এসে যদি এসব কাজ শুরু করতে সরাসরি পদক্ষেপ নেন, তাহলে শিল্পে অনুন্নত এই জেলা অনেক দূর এগিয়ে যাবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।

আন্তঃনগর ট্রেনের ভাড়া প্রস্তাব : পদ্মা সেতু হয়ে দৃশ্যমান ঢাকা-ভাঙ্গা রেলপথের দূরত্ব ৭৭ কিলোমিটার। এই পথে আন্তঃনগর ট্রেনের ভাড়া প্রস্তাব করেছে রেলওয়ের কমিটি। কমিটির প্রস্তাব অনুযায়ী নন-এসি চেয়ার কোচের ভাড়া ৩৫০ টাকা এবং এসি চেয়ার কোচের ভাড়া ৬৬৭ টাকা হতে পারে।

জানা গেছে, ভাড়া প্রস্তাবের ক্ষেত্রে ঢাকা থেকে প্রতিটি গন্তব্যের দৃশ্যমান দূরত্বের সঙ্গে পদ্মা সেতু ও গেন্ডারিয়া-কেরানীগঞ্জ পর্যন্ত উড়াল রেলপথের জন্য বাড়তি দূরত্ব যোগ করেছে রেলওয়ের প্রস্তাব কমিটি। প্রস্তাব অনুযায়ী পদ্মা সেতুর প্রতি কিলোমিটারকে ২৫ কিলোমিটার, গেন্ডারিয়া থেকে কেরানীগঞ্জ পর্যন্ত উড়ালপথের প্রতি কিলোমিটারকে ৫ কিলোমিটার ধরা হয়েছে। বিষয়টিকে রেলওয়ে পন্টেজ চার্জের জন্য বাড়তি দূরত্ব বলছে। এ জন্যই ঢাকা থেকে ভাঙ্গার প্রকৃত দূরত্ব ৭৭ কিলোমিটার হলেও রেলওয়ে দেখিয়েছে ৩৫৩ কিলোমিটার দূরত্ব। ফলে আনুপাতিক হাতে বেড়ে গেছে ওই পথের ভাড়াও।

রেলেওয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঢাকা-ভাঙ্গা রেলপথে আগামী নভেম্বর থেকে যাত্রী নিয়ে পুরোদমে ট্রেন চলাচল শুরু হতে পারে। শুরুতে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ৩টি ট্রেন চলাচল করতে পারে। ঢাকা থেকে খুলনাগামী আন্তঃনগর ট্রেন ‘সুন্দরবন এক্সপ্রেস’ পদ্মা সেতু হয়ে চলাচল করবে। ভাঙ্গা থেকে ট্রেনটি রাজবাড়ী, পাটুরিয়া, কুষ্টিয়ার পোড়াদহ ও যশোর হয়ে খুলনায় যাবে। বর্তমানে ট্রেনটি ঢাকা-বঙ্গবন্ধু সেতু-ঈশ্বরদী-কুষ্টিয়া হয়ে চলাচল করছে।

অন্যদিকে রাজশাহী থেকে ঢাকা পর্যন্ত একটি ট্রেন চালানোর প্রস্তাব রয়েছে। বর্তমানে রাজশাহী থেকে ‘মধুমতি এক্সপ্রেস’ ট্রেনটি ভাঙ্গা পর্যন্ত চলাচল করে। পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেনটি ঢাকা পর্যন্ত সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা-পদ্মা সেতু-রাজবাড়ী রুটে একটি কমিউটার ট্রেন চালানোর কথাও ভাবছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।

ভাড়ার বিষয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হুমায়ুন কবীর জানিয়েছেন, এই পথে লোকাল ও কমিউটার ট্রেন চলাচল করবে। সেগুলোর ভাড়া অনেক কম হবে। তবে আন্তঃনগর ট্রেনের ভাড়া কিছুটা বেশিই। কিন্তু যশোর পর্যন্ত পুরো রেলপথ চালু হয়ে গেলে ভাড়া কমে আসবে। বর্তমানে রেলপথে লোকাল, মেইল, কমিউটার ও আন্তঃনগর- এই চার ধরনের ট্রেন চলাচল করছে।