ঢাকা ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ভাঙ্গায় আওয়ামী লীগের জনসভায় শেখ হাসিনা

রেল দিলাম নৌকায় ভোট দেবেন

* ধ্বংস করাই বিএনপির চরিত্র * শেখ মুজিবের মেয়ে দুর্নীতি করে না
রেল দিলাম নৌকায় ভোট দেবেন

রেল গাড়িতে চড়ে পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে জনসভায় নৌকা মার্কায় ভোট চাইলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, নৌকাই এ দেশের মানুষের ভাগ্যে পরিবর্তন আনে। আওয়ামী লীগ দেশের মানুষের জন্য কাজ করে, দেশের কল্যাণে কাজ করে। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা কাজ করছি। দেশকে আমরা আরো উন্নত করতে চাই।

গতকাল বিকালে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় ডা. কাজী আবু ইউসুফ স্টেডিয়ামে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন।

বিপুল জনস্রোতের মাঝে দাঁড়িয়ে শেখ হাসিনা বলেন, নৌকা আপনাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। নৌকা পদ্মা সেতু-রেল সেতু দিয়েছে, রাস্তা-ঘাটের উন্নতি করেছে, নৌকা আপনাদের স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় দিচ্ছে, নৌকাই এ দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করেছে। তাই, নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার যাতে আপনাদের সেবা করতে পারে আপনাদের কাছে আমার সেই আবেদন থাকল। আজকে পদ্মা সেতুতে রেললাইন আপনাদের উপহার দিয়ে গেলাম। আপনারা ফরিদপুরবাসী নৌকায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে আবারো সেবা করার সুযোগ করে দেবেন। অনেক ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত হচ্ছে কিন্তু আমার ভরসা একমাত্র বাংলাদেশের মানুষ। বাংলাদেশের মানুষ পাশে থাকলে অসাধ্য সাধন করা যায়। সেটাই আমরা করেছি। আমরা পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছি। আজকে সেখানে রেল সেতু চালু করে দিলাম।

পদ্মা সেতু নিয়ে ষড়যন্ত্রের ঘটনা বর্ণনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের একজন স্বনামধন্য ব্যক্তি সামান্য ব্যাংকের এমডি পদের জন্য সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করে হেরে গেল। আর সেই ক্ষোভে হিলারি ক্লিনটনকে দিয়ে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের টাকা বন্ধ করে দুর্নাম দিতে চেয়েছিল, পদ্মা সেতুর টাকায় দুর্নীতি হয়েছে। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলাম। বলেছিলাম দুর্নীতি করতে আসিনি। মানুষের সেবা করতে এসেছি। শেখ মুজিবের মেয়ে দুর্নীতি করে না। আমি নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের চ্যালেঞ্জ নিলে অনেকে বলেছিলেন এটা সম্ভব নয়। বাংলাদেশের টাকায় এই খরস্রোতা নদীতে সেতু করা সম্ভব নয়। আমি জানি অনেক জ্ঞানীগুণী মানুষ আমার সঙ্গে নেই। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ আছে। বাংলাদেশের মানুষ পাশে থাকলে অসাধ্য সাধন করা যায় সেটাই আমরা করেছি। আমরা পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছি। আজকে সেখানে রেল সেতু চালু করে দিলাম। বঙ্গবন্ধুর সুরে বলতে চাই বাংলাদেশের মানুষকে আর কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না।

বিএনপির দুই শীর্ষ নেতা বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি লুটেরা। তারা এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করেছে। দুর্নীতি করে সাজাপ্রাপ্ত হয়েছে। যে পলাতক আসামি। মুচলেকা দিয়ে দেশ ছেড়ে ভেগেছে। অর্থ আত্মসাৎ করেছে। অস্ত্র চোরাকারবারি। এই হলো বিএনপির নেতা। আর জামায়াতে ইসলামী হচ্ছে যুদ্ধাপরাধী। যুদ্ধাপরাধের দায়ে শাস্তি দিয়েছি। এরা দেশকে ধ্বংস করে দেবে। এই ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার জন্য একমাত্র নৌকা মার্কাই আপনাদের সব রকম সহায়তা দেবে। নৌকা মার্কায় ভোট দিলে আওয়ামী লীগ সরকার যাতে আপনাদের সেবা করতে পারে।

ধ্বংস করাই বিএনপির চরিত্র উল্লেখ করে সরকারপ্রধান আরো বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় এসে কী করেছে? সবার ওপর অত্যাচার। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হত্যা। কাউকে ছাড়েনি তারা। বিএনপি থেকে জনগণকে দূরে থাকতে হবে। আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এদেশকে গড়তে চায়। আজকে সারা বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য এদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হবে। জনগণের কোনো ভোটের অধিকার ছিলো না। অকথ্য অত্যাচার নির্যাতন করেছিল। আমরা ভোট ও ভাতের অধিকারে সংগ্রাম করে বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছি। জনগণের ভোটের অধিকার জনগণের হাতে আমরা ফিরিয়ে দিয়েছি। মিলিটারি ডিকটেটর জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া। এদের সময় কেউ ভোট দিতে পারত না। কথা চালু হয়ে গিয়েছিল, ১০টা হোন্ডা ২০টা গুণ্ডা, নির্বাচন ঠান্ডা।

এখন আর সেই অবস্থা নেই। একটানা ১৪ বছর আজকে বাংলাদেশে গণতন্ত্র আছে। স্থিতিশীলতা আছে। যে কারণে আমরা ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিতে পেরেছি। সমগ্র বাংলাদেশে ওয়াইফাই সংযোগ আছে।

নদীভাঙন থেকে ফরিদপুর, শরীয়তপুরসহ বিভিন্ন এলাকাকে রক্ষা করার জন্য এরইমধ্যে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নদীভাঙন থেকে ফরিদপুর এবং শরিয়তপুরসহ বিভিন্ন এলাকাকে রক্ষা করার জন্য এরইমধ্যে আমরা নদী ভাঙনরোধে প্রকল্প গ্রহণ করেছি এবং তার কিছু কিছু বাস্তবায়নও শুরু করেছি। কাজেই, সারা দেশের মানুষের কল্যাণের জন্যই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমরা শিক্ষার্থীদের বিনা পয়সায় বই দিচ্ছি, বৃত্তি দিচ্ছি, প্রতি জেলায় স্কুল ও কলেজ সরকারিকরণ করে দেয়া হচ্ছে। তাই, শিক্ষার্থী সবাইকে মনেযোগ দিয়ে পড়াশোনা করতে হবে। তারা শিক্ষা-দীক্ষা, জ্ঞানে-বিজ্ঞানে উন্নত হয়ে উন্নত বিশ্বের সঙ্গে যেন তাল মিলিয়ে চলতে পারে।

তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এই বাংলাদেশ গড়ে উঠবে। আমরা আজকে বয়স্ক ভাতা, বিধবা বা স্বামী পরিত্যক্তা ভাতা দিচ্ছি, মাতৃত্বকালীন ভাতা দিচ্ছি, মাতৃদুগ্ধ প্রদানকারি কর্মজীবী মহিলাকে ভাতা দেওয়া হচ্ছে, দুস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা দিচ্ছি, তাদের জন্য বীর নিবাস করে দিচ্ছি, হিজড়া, বেদে, কুষ্ঠরোগী কেউ বাদ যাচ্ছে না। কমিউনিটি ক্লিনিকে ২০ প্রকারের ওষুধ বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে। পাশপাশি ভূমিহীনদের বিনা পয়সায় ঘর করে দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। আজকে আমার মুক্তিযোদ্ধারা আছেন। যারা জাতির পিতার ডাকে সাড়া দিয়ে এদেশ স্বাধীন করেছেন। আজকে বাংলাদেশের মানুষের জন্য আমি ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক কালচারাল সেন্টার নির্মাণ করে দিচ্ছি। যেন আমাদের ধর্মটা সম্পর্কে মানুষ জানে। সব ধর্মের সব মানুষ তার ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগ করবে। স্বাধীনভাবে তারা ধর্ম পালন করবে। এটাই আমাদের নীতি। ইসলাম ধর্ম সেটা শেখায়। যার যার ধর্ম সে পালন করবে। আমরা তাদের সহযোগিতা করব।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের দেশে একটি মানুষও ভূমিহীন, গৃহহীন, ঠিকানাবিহীন থাকবে না। এরইমধ্যে ৮ লাখ ৪০ হাজার পরিবারকে বিনাপয়সায় ঘর প্রদান করেছি। আর একটি মানুষও বাদ থাকলে তাকে আমরা করে দেব। দেশকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে এনেছি, যা ২০২৬ সাল থেকে কার্যকর হবে। এতো দিনরাত পরিশ্রম করে এই দেশের এতো যে উন্নতি করেছি- হাজার হাজার মাইল রাস্তাঘাট, গ্রামে গ্রামে কাঁচা রাস্তা খুব কমই আছে। যা আছে আগামীতে তাও করে দেব, রেল সম্প্রসারণ করছি, নৌপথ নদী ড্রেজিং করে চওড়া করছি, বিমান কিনে নতুন নতুন বিমান পথ চালু করেছি। বাংলাদেশকে সার্বিকভাবে উন্নয়ন করেছি। সারা বিশ্বে আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। কারণ, বাংলাদেশের জনগণ নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় এনেছে বলেই এটা সম্ভব হয়েছে।

জনগণের প্রয়োজনে তাদের পাশে থাকাই আওয়ামী লীগের রাজনীতি উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোভিড-১৯ মহামারিতে তার দলের নেতাকর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়েও সব ধরনের সহযোগিতা করেছেন। অনেকে সেজন্য জীবনও উৎসর্গ করেছেন।

দীর্ঘ ৬ বছর পর ফরিদপুরের ভাঙ্গায় গেলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর আগমন ঘিরে সকাল থেকেই ভাঙ্গার ডা. কাজী আবু ইউসুফ স্টেডিয়ামে প্ল্যাকার্ড, ব্যানার, ফেস্টুন ও বাদ্যযন্ত্র নিয়ে দলে দলে আসতে থাকে নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ। মিছিল-স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠেছে জনসভাস্থল। ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত সেই সমাবেশে সকাল ১০টা থেকেই প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে মহাসড়ক বা অলিগলি সবখানে ব্যানার, ফেস্টুন ও তোরণে তুলে ধরা হয় সরকারের উন্নয়নের চিত্র। শেখ হাসিনার আগমনে জনগণ অত্যন্ত সানন্দে নবজাগরণ সৃষ্টি করে। ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হকের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ইশতিয়াক আরিফের সঞ্চালনায় সমাবেশে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত