ইসরাইল-হামাস সংঘাত বন্ধে নেই আন্তর্জাতিক উদ্যোগ

উভয় পক্ষের নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৭০০

প্রকাশ : ১১ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

চার দিনের ইসরাইল ও হামাসের মধ্যকার লড়াই অবসা০েন কার্যত কোন উদ্যেগ নিচ্ছেননা বিশ্ব নেতারা। জাতিসংঘ মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেস ছাড়া কোন বিশ্ব নেতা এই লড়াই বন্ধে প্রচ্ছন্ন কোন আহবান জানাননি। বরং কোন কোন দেশ ইসরাইল ও কোন কোন দেশ হামাসের পক্ষ অবলম্বন করায় পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করেছে। হঠাৎ করে হামাসের আক্রমনাত্মক উত্থান বিশ্বকে অবাক করে দিয়েছে। গাজাকে চারদিক দিয়ে অবরুদ্ধ করে ইসরাইল পানি ও বিদ্যুৎসহ ইউটিলিটি সেবা বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। ফলে সেখানে বসবাসকারী নিরীহ সাধারণ মানুষের জীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ এ ব্যাপারে কোনো আশার বাণী শোনাতে পারেনি। সংকট নিরসনে বিশ্ব নেতারা এগিয়ে না আসায় মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাচ্ছে। এ অবস্থা কতদিন চলবে সেটাও অনিশ্চিত।

ইসরাইলি বিমান হামলায় তিন ফিলিস্তিনি সাংবাদিক নিহত ফিলিস্তিনের গাজা শহরজুড়ে বিমান হামলা চালাচ্ছে ইসরাইল। এ হামলায় ফিলিস্তিনের তিন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। নিহত সাংবাদিকরা হলেন- সাইদ আল-তাওয়েল, মোহাম্মদ সোবোহ এবং হিশাম নাওয়াজাহ। তাদের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন গাজায় হামাস চালিত সরকারের মিডিয়া অফিসের প্রধান সালামেহ মারুফ। গাজা শহরের ফিশিং পোর্টের কাছে একটি আবাসিক ভবনে ইসরাইলি বিমান হামলায় এ তিন সাংবাদিক নিহত হন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ইসরাইলি হামলায় ৭৭০ ফিলিস্তিন এবং হামাসের হামলায় ৯ শতাধিক লোক নিহত হয়েছে।

ইসরাইলের কঠোর অবরোধের জবাবে জিম্মিদের মৃত্যুদণ্ডের হুমকি দিয়েছে হামাস : গাজাবাসীদের সতর্ক না করে তাদের লক্ষ্য করে বিমান হামলা অব্যাহত রাখলে হামাসের কাছে আটক প্রায় ১৫০ ইসরাইলির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার হুমকি দিয়েছে হামাস। গত শনিবার ইসরাইলে আকস্মিক হামলা চালিয়ে হামাস তাদের আটক করে নিয়ে আসে। গত সোমবার ইসরাইল গাজা উপত্যকায় সম্পূর্ণ অবরোধ আরোপ করে, খাদ্য, পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া এবং ক্রমবর্ধমান বিমান হামলায় ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতির আশঙ্কা তৈরি করার পর হামাস এই হুমকি দিয়েছে।

ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে আনুমানিক প্রায় ১ হাজার হামাস যোদ্ধা সীমান্ত অতিক্রম করে ইসরাইলে ঢুকে বেসামরিক লোকদের দিকে গুলি ছুড়ে ও তাদের জিম্মি করে। ইসরাইলি বিমান হামলায় জিম্মিদের মধ্যে চারজন নিহত হয়েছে। হামাসের সশস্ত্র শাখা ‘ইজ্জেদিন আল-কাসাম ব্রিগেডস’ এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘সতর্কতা ছাড়াই আমাদের জনগণকে লক্ষ্য করে হামলার জবাবে জিম্মিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে।’ ইসরাইল বলেছে, তারা ‘সোর্ড অব আয়রন’ অভিযানের জন্য ৩ লাখ রিজার্ভ সৈন্য মোতায়েন করবে। ইসরাইলের সামরিক মুখপাত্র লিবি ওয়েইস বলেছেন, কিছু হামাস সদস্য দক্ষিণের সীমান্ত এলাকায় এখনো রয়েছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইযোভ গ্যালান্ট বলেছেন, ইসরাইল দীর্ঘ অবরুদ্ধ ২৩ লাখ লোকের ছিটমহলে ‘সম্পূর্ণ অবরোধ’ আরোপ করবে : ‘বিদ্যুৎ নেই, খাবার নেই, পানি নেই, গ্যাস নেই- সব বন্ধ।’ ইসরাইলের চিরশত্রু ইরান হামাসের হামলার প্রশংসা করায় মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা বেড়েছে, যদিও তেহরান সামরিক অভিযানে সরাসরি কোনো ভূমিকার কথা প্রত্যাখ্যান করেছে। হামাস পশ্চিম তীরে ‘প্রতিরোধ যোদ্ধাদের’ এবং আরব ও ইসলামিক দেশগুলোকে ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’ নামে অভিযানে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। ‘সামরিক অভিযান এখনো অব্যাহত রয়েছে’- এ কথা উল্লেখ করে দোহা থেকে হামাসের একজন কর্মকর্তা হোসাম বদরান জানিয়েছেন, ‘বন্দিদের বিষয়ে বা অন্য কিছু নিয়ে আলোচনার কোনো সুযোগ নেই’। ইসরাইলি সেনাবাহিনী বলেছে, তাদের সৈন্যরা লেবানন থেকে সীমান্ত অতিক্রমকারী ‘অনেক সশস্ত্র সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে হত্যা করেছে’ এবং ইসরাইলি হেলিকপ্টারগুলো ওই অঞ্চলে লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালাচ্ছে। ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গোষ্ঠী ইসলামিক জিহাদ পরে লেবানন থেকে ইসরাইলে অনুপ্রবেশের চেষ্টার কথা স্বীকার করেছে। ইরান-সমর্থিত হিজবুল্লাহ বলেছে, দক্ষিণ লেবাননে ইসরাইলি হামলায় তার তিন সদস্য নিহত হয়েছেন।

একজন সিনিয়র মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা বলেছেন, ‘আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন যে হিজবুল্লাহ ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং এই সংঘাতের জন্য দ্বিতীয় ফ্রন্ট খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’ ইসরাইলের সমর্থনে ওয়াশিংটন তার বৃহত্তম বিমানবাহী রণতরী এবং অন্যান্য যুদ্ধজাহাজ ইসরাইলের কাছাকাছি নিয়ে গেছে। তারা বলেছে, মার্কিন সেনাদের অভিযানে যোগ দেয়ার কোন পরিকল্পনা নেই। তবে জিম্মি পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টায় তার মিত্রের সাথে কাজ করছে। ইসরাইল গাজা সীমান্ত বেড়া জুড়ে হামাসের আক্রমণে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। নজরদারি ক্যামেরা, ড্রোন, টহল এবং ওয়াচ টাওয়ার দ্বারা সুরক্ষিত এই দেয়াল দীর্ঘদিন ধরে দুর্ভেদ্য বলে মনে করা হয়েছে। ইসরাইলি কর্মকর্তারা বলেছেন, থাইল্যান্ড, জার্মানি, আর্জেন্টিনা, ফ্রান্স এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ দেশগুলো থেকে বিদেশী বা দ্বৈত নাগরিকদের অপহরণ বা নিখোঁজ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ইসরাইলিরা গোয়েন্দা ব্যর্থতায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। দেশটির জনগণ বিচারিক সংস্কারের জন্য নেতানিয়াহুর কঠোর-ডান সরকারের পরিকল্পনার ওপর বিভক্তিকে দূরে সরিয়ে রেখেছে বলে মনে হচ্ছে। নেতানিয়াহু তার ভাষণে বিরোধী নেতাদের অবিলম্বে ‘কোনো পূর্বশর্ত ছাড়াই জাতীয় ঐক্যের একটি জরুরি সরকার’ গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন। ইসরাইল গাজার অভ্যন্তরে বিমান হামলা জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। ২০০৭ সালে হামাস গাজার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে ইসরাইল গাজা অবরোধ করে রেখেছে। যার ফলে ইসরাইলের সাথে আগের চারটি যুদ্ধ হয়েছে। ইসরাইলি হামলায় আবাসিক টাওয়ার ব্লক, একটি বড় মসজিদ এবং অঞ্চলটির প্রধান ব্যাঙ্ক ভবন মাটির সাথে মিশে গেছে। ফিলিস্তিন শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের ত্রাণ ও কর্ম সংস্থা বলেছে, তারা গাজাজুড়ে স্কুলে ১ লাখ ৩৭ হাজারেরও বেশি লোককে আশ্রয় দিচ্ছে।

ইসরাইলের গাজা অবরোধে ‘গভীরভাবে ব্যথিত’ জাতিসংঘ প্রধান : জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস ইসরাইলে হামাসের হামলার নিন্দা করেছেন। একই সঙ্গে তিনি ইসরাইল গাজা উপত্যকা পুরোপুরি অবরুদ্ধ করায় ‘গভীরভাবে ব্যথিত’ বলে উল্লেখ করেছেন। গত সোমবার সাংবাদিকদের তিনি বলেন, এই সংঘাত শুরুর আগেই গাজা পরিস্থিতি ভয়াবহ ছিল। এখন পরিস্থিতি কেবল অবণতির দিকেই যাবে। এর আগে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইউভ গ্যালান্ট গাজা পুরোপুরি অবরোধের ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, সেখানে খাদ্য, বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া হবে। এ পরিপ্রেক্ষিতে গুতেরেস বলেন, আমি গভীরভাবে ব্যথিত যে ইসরাইল গাজা উপত্যকা সম্পুর্ণ অবরোধ শুরু করবে, সেখানে কিছুই অনুমোদিত নয়- বিদ্যুৎ, খাদ্য কিংবা জ্বালানি কিছুই নয়।

গুতেরেস বলেছেন, এই সহিংসতা হঠাৎ উঠে আসা নয়। বাস্তবতা হলো দীর্ঘ দিনের সংঘাত থেকে এই সহিসংতার জন্ম। গত ৫৬ বছরের অবরুদ্ধতা এবং রাজনৈতিক কোনো সমাধানের আশা না থাকাই এই সংঘাতের কারণ।

তিনি আরো বলেন, ইসরাইলের বৈধ নিরাপত্তা উদ্বেগকে আমি স্বীকৃতি দিচ্ছি। কিন্তু একই সঙ্গে ইসরাইলকে আন্তর্জাতিক মানবিক আইন মেনেই কঠোর অভিযান পরিচালনার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। জাতিসংঘ মহাসচিব গাজায় মানবিক সহায়তা প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখারও ঘোষণা দেন।

জিম্মি-বন্দি বিনিময় নিয়ে ইসরাইল-হামাসের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে কাতার : গাজা ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের কাছে জিম্মি দেড় শতাধিক ইসরাইলি ও অন্যান্য দেশের নাগরিকের মুক্তি দিতে হামাসের হাইকমান্ডের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে কাতার। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কূটনীতিকদের একটি দল হামাসকে প্রস্তাব করেছে- যদি জিম্মিদের মুক্তি দেয় হামাস, সেক্ষেত্রে ইসরাইলের কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনিদেরও মুক্তি দেবে ইসরাইল। কূটনীতিকদের অপর একটি দল একই প্রস্তাব নিয়ে ইসরাইলি কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও আলোচনা শুরু করেছে বলে জানা গেছে। কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত শনিবার যুদ্ধ বাধার দিন থেকেই হামাস ও ইসরাইলের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে হামাস। এই আলোচনার মূল উদ্দেশ্যে সহিংসতার মাত্রা কমিয়ে আনা এবং দুই ভূখণ্ডের জিম্মি ও বন্দি বিনিময় করা।

আলোচনার গতি ও এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত ফলাফল বেশ ইতিবাচক- উল্লেখ করে কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল আনসারি বলেন- ‘এই মুহূর্তে আমরা সব পক্ষের সঙ্গেই সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছি। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো সহিংসতার মাত্রা হ্রাস করা, বন্দি ও জিম্মি বিনিময় এবং এই সংঘাতের রেশ যেন মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য অংশেও ছড়িয়ে পড়তে না পারে, তা নিশ্চিত করা। এ ব্যাপারে আরো বিস্তারিত তথ্য জানতে ইসরাইল ও হামাসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল রয়টার্স। তবে কোনো কর্মকর্তাই মন্তব্য করতে রাজি হননি। কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, গত শনিবার ইসরাইল হামাস সংঘাত শুরুর দিনই কাতারের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মেদ বিন আবদুলরহমান বিন জসিম আল থানিকে টেলিফোন করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন। সেই ফোনালাপে ব্লিনকেন কাতারের প্রধানমন্ত্রীকে এই সংকটে মধ্যস্থতার ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানান এবং প্রধানমন্ত্রীও তাতে দায়িত্বের সঙ্গে সাড়া দেন।

দেড় শতাধিক মানুষকে জিম্মি করেছে হামাস : ইসরাইল থেকে ১৫০ জনেরও বেশি মানুষকে জিম্মি করে গাজা নিয়ে গেছে ওই ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাস। গত সোমবার এই তথ্য জানিয়েছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরাইলের প্রতিনিধি গিলাদ এরদান। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের সাংবাদিক কাইটলান কলিন্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এরদান বলেন, ‘আমাদের কাছে থাকা তথ্য অনুসারে, ১৫০ জনেরও বেশি ইসরাইলি ও অন্যান্য দেশের নাগরিক বর্তমানে হামাসের হাতে জিম্মি অবস্থায় রয়েছে। এটি একটি অভূতপূর্ব সংকট।’

১ হাজার ৫০০ হামাস যোদ্ধার লাশ উদ্ধারের দাবি ইসরাইলি সেনাবাহিনীর : ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্রগোষ্ঠী হামাসের প্রায় ১ হাজার ৫০০ যোদ্ধার লাশ পাওয়া গেছে ইসরাইলে। ইসরাইলি সেনাবাহিনী এমন দাবিই করেছে। এছাড়া অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডের সঙ্গে থাকা ইসরাইলি সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধারের দাবিও করেছে তারা।

আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরাইল এবং গাজা উপত্যকার আশপাশে প্রায় দেড় হাজার হামাস যোদ্ধার মরদেহ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। ইসরাইলের সামরিক মুখপাত্র রিচার্ড হোচট সাংবাদিকদের বলেছেন, নিরাপত্তা বাহিনী অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডের ‘সীমান্তে কম-বেশি নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করেছে।

মুসলিমদের তৃতীয় পবিত্র ধর্মীয় স্থান আল-আকসা মসজিদের পবিত্রতা লঙ্ঘন এবং অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের অত্যাচারের জবাব দিতে গত শনিবার থেকে ইসরাইলে ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’ নামে সামরিক অভিযান শুরু করে হামাস।

সৌদি আরব ফিলিস্তিনিদের পাশে থাকবে, ঘোষণা যুবরাজের : হামাস-ইসরাইল সংঘাতের মধ্যে ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। এ সময় তিনি বলেছেন, ইসরাইল-ফিলিস্তিন চলমান উত্তেজনা প্রশমনে সম্ভাব্য সব ধরনের চেষ্টা করছে সৌদি আরব। মোহাম্মদ বিন সালমানের অফিস থেকে জারি করা এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ফোনালাপে যুবরাজ বলেছেন, চলমান উত্তেজনা থামাতে আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সব পক্ষের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার জন্য সম্ভাব্য সব ধরনের চেষ্টা করছে সৌদি আরব।

এতে আরো বলা হয়, ফিলিস্তিনি জনগণের ন্যায্য অধিকার আদায়, একটি মর্যাদাপূর্ণ জীবন প্রতিষ্ঠা, তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা উপলব্ধি করায় এবং একটি ন্যায্য ও স্থায়ী শান্তি অর্জনে ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়ানো অব্যাহত রাখবে সৌদি আরব। এ সময় ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকারের প্রশ্নে সৌদি আরবের দৃঢ় অবস্থান ও প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস এবং সৌদি নেতৃত্বকে ধন্যবাদ জানান। এর আগে, ইসরাইল-ফিলিস্তিন সাম্প্রতিক সংঘাতে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে বিবৃতি দিয়েছে কাতার, ইরান, চীনের মতো দেশগুলো। কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ফিলিস্তিনি জনগণের সঙ্গে চলমান সহিংসতা ও উত্তেজনার জন্য ইসরাইল একাই দায়ী। ইসরাইল হামাসের সশস্ত্র হামলায় সমর্থন দিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের আরেক দেশ ইরান। এই হামলায় তেহরানের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ করেছে পশ্চিমারা। তবে সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে ইরান। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর বাইরে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে কথা বলেছে এশীয় পরাশক্তি চীন। ইসরাইলে-ফিলিস্তিন সংঘাত বন্ধে দুটি পৃথক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাই একমাত্র সমাধান বলে উল্লেখ করেছে বেইজিং।

‘দীর্ঘ যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হামাস’ : হামাস ইসরাইলের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত। তাছাড়া ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী এ সশস্ত্রগোষ্ঠী ইসরাইলসহ বিদেশে আটক ফিলিস্তিনিদের মুক্তির জন্য গাজায় জিম্মি করে রাখা ব্যক্তিদের ব্যবহার করা হবে বলে হামাসের নির্বাসিত নেতা আলী বারাকেহ জানিয়েছেন। গাজায় হামাসের হাতে বন্দি ১০০ জনেরও বেশি ব্যক্তির ভাগ্য নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হওয়ার মুহূর্তেই এমন মন্তব্য করলেন বারাকেহ। তিনি আরো বলেন, হামাসের কাছে বিপুল পরিমাণ রকেটের সংগ্রহ রয়েছে, যা দিয়ে লম্বা সময়ের জন্য যুদ্ধ চালানো যাবে। আমরা এই যুদ্ধের জন্য ও যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য ভালোভাবে প্রস্তুত রয়েছি।

হামাসের হাতে উত্তর কোরিয়ার তৈরি অস্ত্র : ইসরাইলের বিরুদ্ধে লড়াই চলাকালে হামাসের এক যোদ্ধার হাতে উত্তর কোরিয়ার তৈরি অস্ত্র দেখা গেছে বলে দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার কিছু সংবাদমাধ্যম। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম রেডিও ফ্রি এশিয়ার (আরএফএ) খবর অনুসারে, গাজায় ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গোষ্ঠী হামাসের এক যোদ্ধার হাতে উত্তর কোরিয়ার তৈরি এ-৭ হাই-এক্সপ্লোসিভ ফ্রাগমেন্টেশন রকেট দেখা গেছে। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে ‘ওয়ার নয়ার’ নামে একটি অ্যাকাউন্ট থেকে এমন দাবি করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেছে আরএফএ। তাদের সূত্র দিয়ে একই দাবি করেছে দক্ষিণ কোরিয়ার বার্তা সংস্থা ইয়োনহাপ, সংবাদমাধ্যম কোরিয়া টাইমস এবং কেবিএস।

খবরে বলা হয়েছে, উত্তর কোরিয়ার এফ-৭ রকেট-চালিত গ্রেনেড লঞ্চার অতীতে মধ্যপ্রাচ্যে ব্যাপকভাবে রপ্তানি করা হয়েছিল। এই অস্ত্র উত্তর কোরিয়া নিজেই হামাসকে দিয়েছিল, নাকি সেগুলো ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীটির হাতে যাওয়ার আগে অন্য কোনো দেশে রপ্তানি করা হয়েছিল, তা এখনো নিশ্চিত নয়। অ্যাঞ্জেলো স্টেট ইউনিভার্সিটির নিরাপত্তা অধ্যয়নের অধ্যাপক ব্রুস বেচটল জুনিয়র আরএফএ’কে বলেছেন, শুধু এফ-৭ নয়, ইসরাইলের বিরুদ্ধে হামাস সম্ভবত উত্তর কোরিয়ার তৈরি অন্যান্য অস্ত্রও ব্যবহার করছে। সাম্প্রতিক ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাতে ফিলিস্তিনিদের পক্ষ নিয়েছে উত্তর কোরিয়া। দেশটির ক্ষমতাসীন দল ওয়ার্কার্স পার্টির মুখপত্র রোদং সিনমুন গতকাল মঙ্গলবার এক নিবন্ধে বলেছে, এই রক্তাক্ত সংঘাতের জন্য ইসরাইল দায়ী এবং এটি সমাধানের প্রধান উপায় স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। তথ্যসূত্র : বিবিসি, আলজাজিরা ও ইন্টারনেট