ঢাকা ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ইলিশ রক্ষায় পদ্মা-মেঘনায় জাল ফেললেই জরিমানা

আজ থেকে শুরু ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা
ইলিশ রক্ষায় পদ্মা-মেঘনায় জাল ফেললেই জরিমানা

ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি ও প্রজনন রক্ষায় প্রত্যেক বছরের মতো এবারও ইলিশ ধরা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার। নিষিদ্ধ সময়ে জেলেদের প্রণোদনাসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনায় বাড়ানো হয়েছে নৌ-পুলিশ কিংবা কোস্টগার্ডের তৎপরতা। জনসচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি জাটকা এবং মা ইলিশ ধরা থেকে শুরু করে আহরণ, ক্রয়-বিক্রয়, মজুত, বিনিময় ও পরিবহণ করা যাবে না।

মৎস্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ইলিশের প্রজননকাল, চলাচলের গতিপ্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করে ওই অভয়াশ্রমে প্রতি বছর আগেভাগেই দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। ইলিশ সম্পদ বাড়াতে সরকার জাটকা নিধন রোধে ২০০৬ সালে দেশের অভয়াশ্রমগুলোয় নিষেধাজ্ঞা কার্যক্রম শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের আজ (১২ অক্টোবর) থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন এই নিষেধাজ্ঞা চলমান থাকবে। বিকল্প হিসেবে মাছ আহরণ থেকে বিরত থাকা প্রত্যেক নিবন্ধিত জেলেকে সরকার ২০ কেজি করে খাদ্য সহায়তা (বিজিএফ) হিসেবে চাল দেবে।

গতকাল বুধবার সচিবালয়ে প্রধান প্রজনন মৌসুমে ‘মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান ২০২৩’ বাস্তবায়ন উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে সরকার সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়ায় ১৫ বছরে ইলিশের উৎপাদন ৯২ শতাংশ বেড়েছে। মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানের সময় কেউ যাতে ইলিশ আহরণ করতে না পারে, সেজন্য জল, স্থল ও আকাশপথে পর্যবেক্ষণ চালানো হবে। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, দাদনদার মৎস্য আড়তদারদের চাপে ও পেটের দায়ে জেলেদের যেন নদীতে নামতে না হয়, সেজন্য প্রত্যেক বছরের মতো এবারও প্রণোদনার ব্যবস্থা থাকছে। ইলিশঘাট হিসেবে পরিচিত ফিশারিঘাট, রাসমনি ঘাট, আনন্দ বাজার ঘাট, উত্তর কাট্টলি, দক্ষিণ কাট্টলি, আকমল আলী ঘাটসহ সব ঘাটে প্রশাসনের যৌথ তৎপরতা থাকবে। নিষিদ্ধ সময়গুলো যথাযথভাবে পালন করা হলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আরো অনেক বেশি ইলিশ আহরণ করা সম্ভব হবে। বাজারেও সস্তায় ইলিশ পাওয়া যাবে।

জানা গেছে, চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী পর্যন্ত পদ্মা-মেঘনা নদীর প্রায় ৭০ কিলোমিটার অভয়াশ্রম এলাকা। উপকূলীয় এলাকায় এরই মধ্যে জেলা ও উপজেলা মৎস্য বিভাগ মা ইলিশ নিরাপদে ডিম ছাড়ার সুযোগ করে দিতে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো হচ্ছে। কারণ, বাংলাদেশে যে পরিমাণ ইলিশ ডিম দেয়, তার মাত্র ১০ শতাংশ বাঁচলে প্রতি অর্থবছরে ৮ থেকে ১০ লাখ টন ইলিশ উৎপাদন হওয়ার কথা। গত অর্থবছরে প্রায় ৬ লাখ টন ইলিশ উৎপাদন হয়েছে। অর্থাৎ, মাত্র ৬ থেকে ৭ শতাংশ ডিম বাঁচে। আর যে পরিমাণ জাটকা আটক হচ্ছে, সেটি ৫ থেকে ১৫ শতাংশ মাত্র। মৎস্য অধিদপ্তর ইলিশ শাখার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, দেশে সরাসরি ইলিশ আহরণের সঙ্গে জড়িত প্রায় সাড়ে ৬ লাখ জেলে। তাদের জন্য ভিজিএফ কার্ডের মাধ্যমে ত্রাণ সহায়তা ছাড়াও নগদ টাকা দেওয়া হয়। এছাড়া এ খাতে পরোক্ষভাবে জড়িত ২৫ লাখ মানুষ। গতকাল মেঘনা পাড়ের জেলেপল্লি আনন্দ বাজার, তরপুরচন্ডী ও আশপাশের এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, অনেক জেলেই নৌকা ও জাল ডাঙায় উঠিয়ে রেখেছেন এবং জাল মেরামত করছেন তুলে রাখার জন্য। আবার কোনো কোনো জেলে মাছ আহরণ থেকে বিরত থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সদরের আনন্দ বাজার এলাকার জেলে রতন ও মানিক মিয়া জানান, সরকার যে অভিযান দেয়, তা আমরা মানি। কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জেলা ও উপজেলা টাস্কফোর্স দিন এবং রাতে অভিযানের পাশাপাশি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করবে।

চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. গোলাম মেহেদী হাসান বলেন, মা ইলিশের নিরাপদ প্রজননের জন্য আমরা নদী উপকূলীয় উপজেলা মতলব উত্তর, মতলব দক্ষিণ, চাঁদপুর সদর ও হাইমচর উপজেলায় সচেতনা সভা করেছি। জেলেরা আমাদের বলেছেন, তারা ইলিশ আহরণ থেকে বিরত থাকবেন। বিকল্প হিসেবে নিবন্ধিত জেলেদের মাঝে চাল বিতরণ শেষ পর্যায়ে। আশা করি কর্মসূচি বাস্তবায়ন হলে জাতীয়ভাবে ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধিতে এই কর্মসূচি ভূমিকা রাখবে। এ প্রসঙ্গে ভোলার জেলা প্রশাসক আরিফুজ্জামান জানিয়েছেন, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী মা ইলিশ রক্ষায় যা করণীয়, ভোলা জেলা প্রশাসন তাই করবে। অন্যদিকে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান জানিয়েছেন, আইন অনুযায়ী শুরু থেকেই নদীতে দিনে এবং রাতে নৌ পুলিশের পাশাপাশি আনসার কোস্টগার্ড নিয়মিত টহল দেবে। এদের চোখ ফাঁকি দিয়ে রাতে বা দিনে কোনো দুর্বৃত্ত নদীতে ইলিশ মাছ ধরার চেষ্টা করলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইলিশ সম্পদ সংরক্ষণে ‘প্রটেকশন অ্যান্ড কনজারভেশন অব ফিশ অ্যাক্ট, ১৯৫০’-এর অধীন প্রণীত ‘প্রটেকশন অ্যান্ড কনজারভেশন অব ফিশ রুলস, ১৯৮৫’ অনুযায়ী মোট ২২ দিন সারাদেশে ইলিশ আহরণ, পরিবহণ, মজুত ও বিপণন নিষিদ্ধ।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত