ঢাকা ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

৩০০ আসনেই প্রার্থী তৃণমূল বিএনপি

৩০০ আসনেই প্রার্থী তৃণমূল বিএনপি

বিএনপি থেকে বেরিয়ে আসা নেতাদের দল তৃণমূল বিএনপি দ্বাদশ জাতীয় সংসদে ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এক্ষেত্রে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সেনা মোতায়েনের দাবি জানিয়েছে দলটি।

গতকাল নির্বাচন ভবনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে এমন কথা বলেন দলটির নেতারা।

বৈঠকে সিইসির সঙ্গে অন্য নির্বাচন কমিশনার ও ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এবং তৃণমূল বিএনপির চেয়ারপারসন শমসের মবিন চৌধুরী, মহাসচিব তৈমুর আলম খন্দকার ও তৃণমূল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা নাজমুল হুদার মেয়ে ও দলটির নির্বাহী চেয়ারপারসন অন্তরা সেলিমা হুদাসহ ১৮ সদস্যের প্রতিনিধি দল উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকের পর শমসের মোবিন চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, তারা ১২ দফা দাবি বাস্তবায়নের জন্য বলেছেন এবং ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের কাছে লিখিত দাবির কপি সরবরাহ করেন। এতে বলা হয়েছে, সংবিধানে নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া প্রদত্ত দায়িত্ব ও ক্ষমতা সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে হবে।

নির্বাচনের সময় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নির্বাচন কাজে নিয়োজিত, যা নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পারে এরকম প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নির্বাচন কমিশনের হাতে থাকতে হবে। বিশেষ করে জেলা প্রশাসক (ডিসি), পুলিশ সুপার (এসপি), ওসি (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) বদলিসহ প্রয়োজনীয় যে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষমতা থাকতে হবে। নির্বাচনকালীন প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের প্রতি সমান সুযোগ সৃষ্টি অর্থাৎ লেভেল প্লেইং ফিল্ড তৈরি করতে হবে। যদি কোনো দল বা প্রার্থী ন্যায্য দাবি বা অভিযোগ করে দ্রুত সময়ে তা সমাধানের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

সমাজের বড় একটি অংশ ভোট বিমুখ হয়ে পড়েছে। তারা ভোটদানে বিরত থাকছে, যা গণতন্ত্রের জন্য খুবই খারাপ দৃষ্টান্ত। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ভোট প্রত্যেক নাগরিকের পবিত্র দায়িত্ব। তাদের ভোটদানে উৎসাহিত করতে হবে এবং ভোটের গুরুত্ব বোঝাতে হবে, প্রয়োজনে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স, প্রিন্ট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম নিতে হবে।

নির্বাচনের দিন প্রত্যেকটি কেন্দ্রে সিসি টিভির ব্যবস্থা করতে হবে। নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরো জোরদার করতে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা যেতে পারে, এতে জনগণের আস্থা অর্জিত হবে।

এছাড়া ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি, প্রত্যেকটি কেন্দ্র যেন ঝুঁকিমুক্ত থাকে তার ব্যবস্থাকরণ, ভোটের ফলাফল প্রতিটি কেন্দ্রে কেন্দ্রে ঘোষণা, প্রিজাইডিং অফিসারের সই করা ফলাফল সিট প্রত্যেক প্রার্থীর প্রতিনিধির কাছে সরবরাহ, দেশি-বিদেশি মিডিয়াসহ প্রত্যেক প্রার্থী বা তার মনোনীত ব্যক্তির সামনে চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা, বেশি বেশি নির্বাচন পর্যবেক্ষক যেন আসে, সেই ব্যবস্থা নেওয়া, নির্বাচনের কয়েক দিন আগে ও পরে কয়েক দিন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও প্রার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

বৈঠক শেষে ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম বলেন, সংবিধানে যে ক্ষমতা দেওয়া আছে, সেটার শতভাগ প্রয়োগ করে একটি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনের জন্য নির্বাচন কমিশন সবার সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছে।

জাহাংগীর আলম বলেন, কমিশনের পক্ষ থেকে বক্তব্য হচ্ছে যে, তৃণমূল বিএনপি বাংলাদেশের নিবন্ধিত একটি রাজনৈতিক দল। তার চেয়ারপারসন শমসের মবিন চৌধুরীর নেতৃত্বে ১৮ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করেছে। এ বৈঠকে তারা খোলামেলা আলাপ করেছে। পাশাপাশি নির্বাচন কমিশন বরাবর ১২টি সুপারিশ তুলে ধরেছে।

তিনি বলেন, এ সুপারিশগুলো তারা পরে লিখিত আকারে আমাদের জানাবেন।

এ ১২টি প্রস্তাবের মধ্যে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন আয়োজনের জন্য নির্বাচন কমিশনের আইনগত যে সমস্ত দিকগুলো রয়েছে সেগুলোর বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য তারা অনুরোধ জানিয়েছেন। বিশেষ করে ভোটকেন্দ্রে ফলাফল প্রকাশ, ভোটকেন্দ্র থেকে রিটার্নিং অফিসারের স্বাক্ষরিত ফলাফল, প্রার্থীর পুলিং এজেন্টের কাছে ফলাফল হস্তান্তর। এ সমস্ত বিষয়গুলো আলোচনায় এনেছেন তারা।

ইসি সচিব বলেন, ভোটগ্রহণকালে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে সিসি টিভি স্থাপনের জন্য তারা জোরালো দাবি করেছেন। তাদের বক্তব্য, দাবি ও প্রস্তাবসমূহ কমিশন খুব মনোযোগের সঙ্গে শুনেছে।

কমিশন আশ্বস্ত করেছে যে, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যে সমস্ত দলগুলো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তাদের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড প্রস্তুত থেকে শুরু করে সুষ্ঠু এবং একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনে কমিশন বদ্ধ পরিকর।

লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের প্রধানতম বাধা আইনশৃঙ্খলা ও প্রশাসন, সেটা নিয়ন্ত্রণে কী ভূমিকা নেবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রথম হচ্ছে আইন এবং সংবিধানের আলোকে কমিশনকে যে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, কমিশন সেই ক্ষমতা সম্পূর্ণরূপে প্রয়োগ করবে এবং বাস্তবায়নে সচেষ্ট থাকবে- মর্মে কমিশন তাদের আশ্বস্ত করেছে।

বিএনপি না এলেও তৃণমূল বিএনপি নিয়ে ভোটে যাবেন এবং এতেই সন্তুষ্ট কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, না না না। যারাই নির্বাচনে আসবেন, তাদের আইনানুগভাবে কমিশনকে যে ক্ষমতা দেওয়া আছে, সংবিধানে যে ক্ষমতা দেওয়া আছে সেটার শতভাগ প্রয়োগ করে একটি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনের জন্য নির্বাচন কমিশন সবার সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত