‘ব্র্যান্ড বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

* ইসরাইল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান * ‘লাল ফিতার’ দৌরাত্ম্য যেন না থাকে

প্রকাশ : ১৩ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চামড়ার জুতো ও চামড়াজাত পণ্য শিল্পের ব্যবসায়ীদের এ খাতের জন্য ‘চামড়া উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’ গঠনের ঘোষণার পাশাপাশি ‘ব্র্যান্ড বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার প্রতি মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের পণ্য আমাদের নিজের নামে বাজারজাত করা হোক। আমাদের দেশের নাম বাড়ুক। আমি চাই, বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল হোক, বড় হোক।’ গতকাল বিকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে চতুর্থ বাংলাদেশ লেদার ফুটওয়্যার অ্যান্ড লেদারগুডস ইন্টারন্যাশনাল সোর্সিং শো (ব্লিস)-২০২৩ উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, “আমি জানি অনেক দেশের অনেক পণ্য তারা এখান থেকে তৈরি করে নিয়ে গিয়ে নিজেদের দেশে ফিনিশিং দিয়ে নিজেদের নামে বাজারজাত করে। সেক্ষেত্রে আমরা নিজেরাও নিজেদের কিছু কিছু ব্রান্ড তৈরি করতে পারি কি না ‘বাংলাদেশ ব্রান্ড’ হিসেবে। আমার মনে হয়, সেদিকেও নজর দিলে ভালো হয়। এক্ষেত্রে আমাদের সরকারের কাছ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা পাবেন।”

তিনি বলেন, ‘আমি চাই আমাদের পণ্য আমাদের নামে বাজারজাত হোক। আমাদের দেশের নাম বাড়ুক। দেশের নাম সুন্দর হোক, বৃদ্ধি পাক। কেন না, আওয়ামী লীগ সরকারের এই টানা তিন মেয়াদে সরকার অনেক খাতে অনেক সুযোগ করে দিয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা শিল্পের রপ্তানিকারকদের উচ্চ মূল্য সংযোজন করে বিশ্বের বিভিন্ন স্বনামধন্য ব্র্যান্ডের ও ক্রেতাদের ক্রয় আদেশ সম্পাদন সক্ষমতা এবং ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক সুউচ্চ গুণগতমান সম্পূর্ণ বৈচিত্র্যময় পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানি বাংলাদেশ করছে। তিনি বলেন, যেহেতু অর্থনৈতিকভাবে আমাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে, দারিদ্র্যের হার কমেছে, মাথাপিছু আয় বেড়েছে এবং আমাদের নিজস্ব বাজার তৈরি হচ্ছে। আমাদের দেশের মানুষই এখন পণ্য ক্রয় করে। অতীতে যেখানে মানুষের পায়ে একটি রাবারের চপ্পলও ছিল না এখন কিন্তু সেটা আর দেখা যায় না। পাশাপাশি, সরকার রাস্তা-ঘাটের উন্নয়ন করে দেয়ায় এখন আর কাদামাটি ঠেলেও বেশি চলতে হয় না।

তিনি বলেন, এবারের ব্লিস-এর থিম ‘পসেবল ইন বাংলাদেশ (বাংলাদেশেও সম্ভব)’ সাম্প্রতি বছরগুলোতে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে বাংলাদেশের যে অভূতপূর্ব উন্নয়নমূলক রূপান্তর ঘটেছে তা এতে যথাযথভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। উদ্যোক্তদের এজন্য ধন্যবাদ জানান তিনি।

আমলাতান্ত্রিক জটিলতার ‘লাল ফিতা’ থেকে বেরিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি চাই কাজের ক্ষেত্রে লাল ফিতার দৌরাত্ম্য যেনো আর না থাকে। আমাদের প্রচলিত লাল ফিতা ধারণার অবসান হলে ব্যবসা বাণিজ্য আরো গতিশীল হবে। দেশ আরো উন্নত হবে। আমাদের একটা মানসিকতা আছে যে, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা; ভাবে যে আরেকটু টাইট দিতে পারলে বোধহয় সব ভালো হবে। সব সময় সেটা ভালো হয় না। দ্রুত সিদ্ধান্ত দ্রুত বাস্তবায়ন- সেই নীতিতে আমি বিশ্বাস করি। আমি চাই কাজের ক্ষেত্রে লাল ফিতার দৌরাত্ম্য যেনো আর না থাকে। সময় নষ্ট করার মতো সময় নেই। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমিয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং বাস্তবায়ন করতে হবে।

শ্রমিকদের পাওনা সঠিকভাবে দেয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ আমাদের মূল শক্তি। এই জনগণের বড় অংশ হচ্ছে শ্রমিক। আপনারা তাদের, সেই শ্রমিকদের দিকে দৃষ্টি দেবেন। তাদের কাছ থেকে কাজ আদায় করার জন্য যতটুকু সুযোগ-সুবিধা দেয়া যায়, সেই ব্যবস্থাটা করবেন।’

ইসরাইলের ওপর ফিলিস্তিনের যুদ্ধ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, এখন ইসরাইল যেভাবে প্যালেস্টাইনের ওপর অত্যাচার শুরু করেছে, এরই মধ্যে তাদের অনেক জায়গা দখল করে রেখেছে। এখন অবরুদ্ধ আছে অনেক জায়গা। আমার অনুরোধ থাকবে, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এগুলো বন্ধ করতে হবে। এই যুদ্ধ বন্ধ না করতে পারলে, আর এভাবে অস্ত্রের খেলা বন্ধ না করলে সাধারণ মানুষ কষ্ট পাবে। আমরা শান্তি চাই, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতিমালা খুবই স্পষ্ট- সকলের সাথে বন্ধুত্ব কারো সাথে বৈরিতা নয়। আমরা সেই নীতিতেই এগিয়ে চলছি।’

অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ, অ্যাডভান্সড ম্যানুফ্যাকচারিং গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান জোনাথন ববেট এবং গোল্ডেন চ্যাং গ্রুপের বিনিয়োগকারী ও প্রতিষ্ঠাতা জেমস হো।

স্বাগত বক্তব্য রাখেন লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এলএফএমইএবি) সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এলএফএমইএবি) যৌথভাবে রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনসন সিটি বসুন্ধরায় ১২ থেকে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত আন্তর্জাতিক এই প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। ব্লিস’র শেষ তিনটি প্রদর্শনী ২০১৭, ২০১৮ এবং ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

উদ্যোক্তারা জানান, ব্লিস-২০২৩ ক্রেতা, ব্র্যান্ড এবং সোর্সিং প্রতিনিধিদের জন্য একটি কার্যকর প্ল্যাটফর্ম প্রদান করবে, যা বাংলাদেশের চামড়াজাত পণ্যের শীর্ষস্তরের নির্মাতা এবং রপ্তানিকারক, পাদুকা প্রস্তুতকারক এবং রপ্তানিকারক এবং সংশ্লিষ্ট শিল্পের সাথে সংযোগ স্থাপন করবে এবং বর্তমান বিনিয়োগের সুযোগ ত্বরান্বিত করার পাশাপাশি কার্যকর নেটওয়ার্কিং, ব্যবসায়িক উন্নয়নের সুবিধা দেবে।