সংঘাত এড়াতে ঘুরে ফিরে সংলাপে জোর

প্রকাশ : ১৩ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র তিন মাস বাকি। সংবিধানের আলোকেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। এদিকে সরকারের পতন ঘটাতে রাজপথে চূড়ান্ত পর্যায়ের আন্দোলনের দিকে হাটছে বিএনপি। সংবিধানের আধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে অটল দলটি। নির্বাচন নিয়ে বড় দুই দলের বিপরিতমুখী অনড় অবস্থানে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বড় ধরনের সংঘাত ও সহিসংতার দিকে এগোচ্ছে বলেই শঙ্কা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। নির্বাচন নিয়ে ক্ষমতাসীন দল আর বিরোধী পক্ষের এই অবস্থানে আন্তর্জাতিক মহল ও দেশীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বারবারই সংলাপের ওপর জোর দিচ্ছেন।

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সমঝোতা ও সহাবস্থানের সুযোগ আছে কি না, আওয়ামী লীগের সঙ্গে বৈঠকে জানতে চেয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনি প্রাক-পর্যবেক্ষক প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। বৈঠকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সংবিধানের আলোকেই নির্বাচন চায় বলে জানিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, বিএনপির সঙ্গে সংলাপ ও সমঝোতার কোনো সম্ভাবনা নেই। অন্যদিকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, একটা বিষয়ে আলোচনা বা সংলাপ হতে পারে। এছাড়া আর কোনো আলোচনা বা সংলাপ হবে না। আর সেটা হচ্ছে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের বিষয়ে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর মুখোমুখি অবস্থানের কারণে আমরা সহিসংতা এবং একদলীয় নির্বাচনের দিকে ধাবিত হচ্ছি। রাজনৈতিক দলগুলো বলেছে, রাজপথে সমাধান করবে তারা। কিন্তু রাজপথে কোনো সমাধান হয় না। সমাধান করতে হলে আলোচনার টেবিলেই বসতে হবে।

বিএনপির একসময়ের ঘনিষ্ট মিত্র হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ ন্যাপও বরাবরই সংলাপ চাচ্ছে। দেশের রাজনীতিতে চলমান সংকট নিরসনে সর্বদলীয় সংলাপের কথা বলছে দলটি। গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংলাপের বিষয়টি তুলে ধরেন দলটির শীর্ষ নেতারা। বিবৃতিতে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (বাংলাদেশ ন্যাপ) চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি ও মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বলেন, অংশগ্রহণ মূলক, গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু নির্বাচন এখন জনগণের আকাঙ্ক্ষা। দেশের মানুষ নিজের ভোটারাধিকার প্রয়োগ করতে চায়। শুধুমাত্র সংঘাতের মাধ্যমে সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়। সমস্যা সমাধানে প্রয়োজন হলো সংলাপ। আলোচনার টেবিলে বসেই সমস্যার সমাধান হওয়া প্রয়োজন।

দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে নেতৃদ্বয় আরো বলেন, সংলাপের মাধ্যমে সমস্যা সমাধান না হলে সামনের দিনে জাতিকে চরম মূল্য দিতে হতে পারে। রাষ্ট্র-সমাজ ও গণতন্ত্রের যে কোনো সংকট থেকে উত্তরণে সংলাপের কোনো বিকল্প নেই। রাজনৈতিক যেকোনো সমস্যা সমাধানে আলোচনা প্রয়োজন। যদিও বাংলাদেশের রাজনীতিতে এই সংস্কৃতি একেবারেই অনুপস্থিত। বাংলাদেশ ন্যাপ দল হিসেবে সব রাজনৈতিক দলকে নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধানে বিশ্বাসী। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান না হলে অশুভ শক্তি দেশের মানুষের কাঁধে বসে পড়তে পারে। তাতে কারোরই মঙ্গল হবে না। দেশের যে অবস্থা বিরাজ করছে, তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। সমঝোতা ছাড়া এই পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণ সম্ভব নয়। আর সমঝোতার জন্য সংলাপই একমাত্র পথ। আর সংলাপের মাধ্যমে সমস্যা সমাধান না হলে সামনের দিনে রাজনৈতিক দলগুলোকে অনেক বেশি মূল্য পরিশোধ করতে হতে পারে।